ঢাকা, শনিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

বাংলানিউজকে সাঈদ খোকন

‘মেট্রোপলিটন গভর্নমেন্ট’ সময়োপযোগী

সালাহ উদ্দিন জসিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৩ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৫
‘মেট্রোপলিটন গভর্নমেন্ট’ সময়োপযোগী ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে ব্যাপক প্রচার অভিযানে নেমেছেন সাঈদ খোকন। ঢাকার সাবেক মেয়র প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফের ছেলে এই সাঈদ খোকন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের হয়েই লড়বেন নগরের দক্ষিণাংশের নির্বাচনী লড়াই।

বলা হচ্ছে দলের সমর্থন তিনি পেয়েই গেছেন। চূড়ান্ত ঘোষণা না হলেও, গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনার দোয়াও নিয়ে এসেছেন সাঈদ খোকন।

নির্বাচন সামনে রেখে কর্মব্যস্ততার মাঝেই বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেন সাঈদ খোকন। গোড়াতেই বললেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন পরিচালনায় বাস্তব অভিজ্ঞতা এখনো নেই, তবে বাবার কর্মময় জীবন থেকে যতটুকু শিক্ষা নিতে পেরেছি তা দিয়েই চালাবো।

তার বাবা মোহাম্মদ হানিফের ‘মেট্রোপলিটন গভর্নমেন্ট’কেই সমযোপযোগী ও বাস্তবসম্মত বলে মনে করেন সাঈদ খোকন।

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকেরও দায়িত্বে পালন করছেন পুরান ঢাকার এই জনপ্রিয় মানুষটি। পেশায় ব্যবসায়ী।

সাঈদ খোকন বলেন, “আমার বাবার ইচ্ছে ছিল, মেট্রোপলিটন গভর্নমেন্ট করা। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে সেটা এখনও হয় নাই। ঢাকার পঞ্জিভূত সমস্যা সমাধানে মেট্রোপলিটন গভর্নমেন্ট (নগর সরকার) একটি বাস্তব সম্মত ধারণা। কাঙ্খিত সেবা নিশ্চিত করতে এটাই হবে সময়যোপযোগী ব্যবস্থা। ”

বাংলানিউজের প্রশ্নে মেট্রোপলিটন গভর্নমেন্ট বা নগর সরকারের একটা সুস্পষ্ট ব্যাখ্যাও তুলে ধরলেন এই তরুণ নেতা।

জানালেন, এই সরকার নগরের সব কাজের সমন্বয় করবে। এখন টেলিফোনের তারের জন্য একবার রাস্তা খোড়া হয়। আবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের লাইনের জন্য তাদের সময়মতো রাস্তা কাটছে। কেউ কারোটা জানে না, কিংবা সমন্বয় নেই। এতে একদিকে যেমন জনগনের দুর্ভোগ বাড়ছে অন্যদিকে রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় হচ্ছে। লক্ষ্য করলে দেখবেন। কয়েকদিন আগে যে রাস্তা মেরামত করছে ডিসিসি। সেই রাস্তায় পানির পাইপ বসানোর জন্য নতুন করে কাটা হচ্ছে। নগর সরকার ব্যবস্থা হলে এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে একবারে এসব কাজ করা যাবে। এভাবে সবকাজই নগর সরকারের অধীনে সমন্বয় হবে। ”

নিজদল আওয়ামী লীগের আরও একজন নেতা মেয়র পদের জন্য প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন, এমন প্রসঙ্গে সাঈদ খোকন বলেন, আওয়ামী লীগ একটা বিশাল রাজনৈতিক দল। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা থাকলে তা দলের ভেতরের গণতন্ত্রেরই প্রকাশ। ভিন্ন মত ও প্রতিযোগিতা ইতিবাচক। এটা থাকলে সংগঠন গতিশীল হয়। এ সমস্ত মত ও প্রতিযোগিতা একটা কেন্দ্রে গিয়ে এক হয়। সেই কেন্দ্রবিন্দুটি দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি যে সিদ্ধান্ত (মনোনয়ন) দেন তা মেনে নিয়েই আমরা সবভুলে এক হয়ে কাজ করি।

তিনি (শেখ হাসিনা) যে আস্থা আমার প্রতি রেখেছেন, যে স্বীকৃতি দিয়েছেন, এটা আস্থা আমার একার ওপর নয়, তার আস্থা দক্ষিণ ঢাকার সব মানুষের ওপর। জননেত্রীর আস্থা ও সম্মান রক্ষায় চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। আমরা সবাই মিলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে হারানো ডিসিসি পুনরুদ্ধার করবো।

ডিসিসির নির্বাচনে কোন দলীয় ব্যানারে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই, এ বিষয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সাঈদ খোকন বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয়ভাবেই সংগঠিত হয়। তবে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে সকল স্তরের নির্বাচনেই রাজনীতির প্রভাব অস্বীকার করার উপায় নেই। এমনকি ছোট ছোট ব্যবাসায়ী পেশাজীবী সংগঠন, এমনকি স্কুলের গভর্নিং বডির নির্বাচনেও রাজনীতির প্রভাব থাকে। দল চাইছে আমি এই পদে নির্বাচন করি, এখন নির্বাচন কমিশনের বাতলে দেওয়া পথেই নির্বাচন হবে এবং সেভাবেই এতে অংশ নেবো। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনের মধ্যে থেকেই সব কাজ করে যাবো।

বিএনপি কিংবা বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের দলগুলো নির্বাচন প্রশ্নে এখনও কোন মত ব্যক্ত করেনি। তারা অংশ নিচ্ছে কি নিচ্ছে না, এ বিষয়টিও এখনও ধোয়াশার মধ্যে রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাঈদ খোকন বলেন, যেভাবেই হোক বিরোধী জোট একটা অসুস্থ রাজনৈতিক পক্রিয়ার মধ্যে চলে গেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ধর্ম-বর্ণে হানাহানি দেখি তেমনই একটি চরিত্রে চলে গেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। কিন্তু এটা গ্রহণযোগ্য নয়।

আমরা একটা জাতি রাষ্ট্র। বর্ণ এক। এক ভাষা। ধর্ম প্রায় এক। ইউনিক স্টেট। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনে আসলে সুস্থ রাজনীতির ধারা শুরু হয়। আমি মনে করি, বিরোধী জোটের সুস্থ ধারায় আসার জন্য এ নির্বাচন একটা সুযোগ, তারা ফিরে আসবে। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও বাড়বে।

নিজ দল থেকে একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার হলে কেমন হবে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ফ্যান্টাসটিক। প্রার্থী বেশি হলে জনগণের চয়েজ অপশন বেড়ে যাবে। প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে। চায়ের টেবিলে আড্ডা হবে, ডিবেট হবে। আমি এটাতে উৎসাহ বোধ করি। ”

এরআগে সিটি কর্পোরেশনগুলোর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হেরেছে, এর থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন কোন কৌশলে এগুচ্ছেন? এর জবাবে সাঈদ খোকন বলেন, সে নির্বাচনগুলোতে জনগণ হয়ত পছন্দের প্রার্থী বেছে নিয়েছে। আমরা গণতান্ত্রিক দল হিসেবে ফলাফল মেনে নিয়েছি। গণতান্ত্রিক পক্রিয়ায় জয় পরাজয় থাকবে। ভুলগুলো মাথায় রেখেই এগুচ্ছি। সব রণকৌশল তো প্রকাশ করা যাবে না, বা পত্রিকায় দিয়েও দেওয়া যাবে না!

নিজের জয় নিয়ে কতটুকু আশাবাদী এমন প্রশ্নের জবাবে সাঈদ খোকন বলেন, জয় পরাজয় আল্লাহর রব্বুল আলামিন নির্ধারণ করে থাকেন। কিন্তু মানুষ হিসেবে আশাবাদী, মানুষ তো আশা নিয়েই বেঁচে থাকে।

তিনি বলেন, ঢাকাবাসীর সঙ্গে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক। অর্ধশতাব্দির বেশি সময় ধরে একসঙ্গে আছি। আমার নানা মাজেদ সরদার ছিলেন ঢাকার শেষ সরদার। বাবা প্রথম নির্বাচিত মেয়র, ২৫ বছর নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ঢাকাবাসীর সুখে-দুঃখে জীবন উৎসর্গ করেছেন। ঢাকাবাসী তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। তার প্রতিচ্ছবি আমার মাঝে খুঁজে পেতে চায়। বাবার চিন্তা-চেতনা, ধ্যাণ-ধারণায় ছিল ঢাকা, ঢাকাবাসী এবং আওয়ামী লীগ। আমি তার (প্রয়াত মেয়র হানিফ) চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণাকে ধারণ করি। বিশেষ করে দলের প্রতি তার আনুগত্য, ঢাকার মানুষের প্রতি ভালোবাসা- মমত্ব -শ্রদ্ধাবোধকেই আমি ধারণ করি।

পরিবারের সঙ্গে ঢাকাবাসীর আবেগের এই সম্পর্ক ইতিবাচকভাবে কাজে লাগাতে চান সাঈদ খোকন।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৪ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।