খুলনা: দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে দেশব্যাপী টানা অবরোধ ও উপুর্যপরি হরতাল কর্মসূচি পালন করছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। চলমান এ আন্দোলনের পাশাপাশি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দেশের সকল পাড়া মহল্লায় ‘প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটি’ গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
২ মার্চ সোমবার জোটের পক্ষে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ এক বিবৃতিতে খালেদা জিয়ার এ নির্দেশের কথা জানান।
কিন্ত দলীয় প্রধানের নির্দেশ অনেকটা দায়সারাভাবে পালন করেছে খুলনা বিএনপি। নির্দেশের ৪ দিন পর শুক্রবার (৬ মার্চ) দুপুরে খুলনা মহানগর ও জেলা ২০ দলীয় জোটের যৌথ সভায় কেন্দ্র ঘোষিত “প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটি” গঠনের জন্য সব থানা ও ওয়ার্ডে ৩ দিনের মধ্যে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়।
ওই সভায় কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর বিএনপি সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে খুলনা মহানগর সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক করা হয়।
এছাড়া সভা থেকে আন্দোলনকে আরো গতিশীল করার জন্য খুলনা মহানগর ও জেলা ২০ দলীয় জোটের ৭ সদস্য বিশিষ্ট দুটি লিয়াজো কমিটি গঠন করা হয়। সভায় ২০ দলের ছাত্র সংগঠন সমন্বয়ে গঠিত সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য ও সহযোগিতায় পৃথক পৃথক কমিটি গঠন করা হয়।
এ বিষয়ে মহানগর বিএনপি সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর বিএনপির এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে আছেন খুলনার শীর্ষ নেতারা। এ অবস্থায় পাড়া-মহল্লায় গিয়ে তাদের পক্ষে কমিটি গঠন করা সম্ভব নয়। কিছু এলাকায় বিএনপি নেতাদের বাড়িতে অথবা তাদের আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে সভা করে সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়েছে।
খুলনা মহানগর বিএনপির প্রথম যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা মহানগর কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া ৫ থানায় কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওয়ার্ড কমিটি গঠনের কাজও প্রায় ৭০ ভাগ শেষ হেয়েছে। বাকি কাজ দু’একদিনের মধ্যে শেষ হবে।
খালেদা জিয়ার নির্দেশ পালনে বিলম্ব হলো কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, খুলনা বিএনপির সিংহভাগ নেতাকর্মীই মামলা হামলায় ঘর ছাড়া। আর যারা আছে তারা ছন্ন ছাড়া। যার কারণে নির্দেশ পালনে দেরি হচ্ছে।
এছাড়া একই দিন জেলা বিএনপি সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক মাজিদুল ইসলামকে আহবায়ক, খুলনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনাকে সদস্য সচিব এবং জোটের ৫ জনকে যুগ্ম আহবায়ক করে জেলা সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়।
খোদ দলীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সকল পাড়া মহল্লায় ২০ দলীয় জোটের নেতৃত্বে প্রতিরোধ সংগ্রাম কমিটি গঠনের কার্যক্রম কেবল মহানগর ও জেলা কমিটির মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে।
রূপসা উপজেলার নৈহাটীর শ্রমিকদলের এক কর্মী বলেন, তৃণমূল নেতাকর্মীরা অনেকেই এ কমিটি গঠন সম্পর্কে কিছুই জানেন না।
২০ দলীয় জোট খুলনা জেলা কমিটির সদস্য সচিব ও খুলনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনা বাংলানিউজকে বলেন, কেন্দ্র ঘোষিত সংগ্রাম কমিটি গঠনের লক্ষ্যে খুলনায় কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জেলার ৯ উপজেলায় কমিটি গঠনের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা বানোয়াট ও রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে হাজার হাজার নেতাকর্মী আত্মগোপনে রয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক রাজনৈতিক তৎপরতা চালানোই এখানে দুরূহ ব্যাপার। এরপরও স্বল্পপতম সময়ের মধ্যে খুলনা জেলা সংগ্রাম কমিটি পূর্ণাঙ্গভাবে গঠন করা হবে।
বাংলাদেশ সময় : ১৩৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৫
** খালেদার নির্দেশ বাস্তবায়ন হয়নি চট্টগ্রামে