ঢাকা, রবিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

আন্দোলন ধরে রাখাটাই ‘বড় অর্জন’ বিএনপির!

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৪ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৫
আন্দোলন ধরে রাখাটাই ‘বড় অর্জন’ বিএনপির! ছবি: শাকিল/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘চাট্টিখানি কথা! সরকারের এমন নিপীড়ন-নির্যাতনের মধ্যেও টানা আড়াই মাস ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন ম্যাডাম (খালেদা জিয়া); অর্জন কতটুকু, সেটি বড় কথা নয়! আন্দোলন ধরে রাখাটাই বড় কথা। ’
 
টানা অবরোধ ও উপর্যুপরি হরতাল কর্মসূচির ৬৫তম দিন বুধবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ের পকেট গেটের ওপাশে দাঁড়িয়ে একথা বলছিলেন একজন সিএসএফ (চেয়ারপারসন’স সিকিউরিটি ফোর্স) সদস্য।

পাশে দাঁড়িয়ে তার কথায় সায় দিচ্ছিলেন প্রেস উইংয়ের এক কর্মকতা।
 
সিএসএফ’র ওই সদস্য যখন ‘ম্যাড়মেড়ে’ আন্দোলনে সাফল্য নিয়ে স্বপ্নের ফানুস দেখাচ্ছিলেন তখন তার বডি ল্যাংগুয়েজে (শরীরীভাষা) আত্মতুষ্টির ছাপ ছিলো স্পষ্ট। প্রেস উইং কর্মকর্তার মুখেও ছিলো মুচকি হাসি।
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ের ‘জেগে জেগে ঘুমানো’ ওই সিএসএফ সদস্য বা প্রেস উইং কর্মকর্তাই কেবল নন, গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের অন্যতম হাতিয়ার হরতাল-অবরোধকে ‘তামাশার বস্তু’তে পরিণত করা বিএনপি নেতারাও আন্দোলন ধরে রাখাটাকেই বড় অর্জন হিসেবে দেখছেন। এ কারণেই সব মহলের ‘নিন্দা’ ও সমালোচনার পরও ‘অকার্যকর’ অবরোধ-হরতাল থেকে পিছু হটছেন না তারা।
 
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আন্দোলনের অর্জন নিয়ে হিসাব-নিকাশ করার সময় এখনো আসেনি। তবে জনদাবির ভিত্তিতে টানা দুই মাসের অধিক সময় ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়াটাকে খাটো করে দেখারও কিছু নেই।
 
এরই মধ্যে আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মীর নামে মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সংখ্যাও অনেক। অব্যাহতভাবে চলছে নিপীড়ন-নির্যাতন। তার পরও ম্যাডাম আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টিকে সাহসী পদক্ষেপ হিসেবেই দেখতে চাই- বলেন বিএনপির এই নীতিনির্ধারক।
 
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টানা অবরোধ এবং উপর্যুপরি হরতাল ডেকে সরকারকে আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করা এবং সরকারের ওপর বহির্বিশ্বের চাপ বাড়ানো-ই ছিলো বিএনপি জোটের লক্ষ্য। কিন্তু আন্দোলনের শুরু থেকেই ককটেল ও পেট্রোলবোমার নজিরবিহীন সন্ত্রাস বদলে দেয় সব হিসাব-নিকাশ।
 
দলীয় ‍সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি জামায়াতের ‘নাশকতানির্ভর আন্দোলনে’ সাধারণ মানুষের ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সুশীল সমাজ এবং হাতে গোনা কয়েকটি দেশ ও সংস্থাকে বাদ দিলে বহির্বিশ্বের কেউ খালেদা জিয়ার সহিংস আন্দোলনে সমর্থন দিতে পারেনি।
 
তারা বলছে, আন্দোলনের ইস্যু যৌক্তিক হলেও ধরনটা সমর্থনযোগ্য নয়। সুতরাং ‘সহিংস’ আন্দোলন থেকে বিএনপিকে সরে আসতেই হবে। সরকারকেও নিতে হবে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আরো কার্যকর পদক্ষেপ।
 
সূত্র জানায়, গত দুই মাসের অধিক সময় ধরে ‘নাশকতানির্ভর আন্দোলন’ চালিয়েও কাঙ্ক্ষিত ফল লাভে ব্যর্থ বিএনপি এখন আত্মতৃপ্তিতে ভুগছে। তারা মনে করছে, বাংলাদেশ তো বটেই বিশ্বের ইতিহাসে একটানা সব চেয়ে বেশিদিন ধরে অবরোধ-হরতাল চালিয়ে যাওয়ার রেকর্ড এখন তাদের!
 
তা ছাড়া হরতাল, অবরোধ, অসহযোগ আন্দোলন, সংসদ বর্জনসহ গণতান্ত্রিক সব আন্দোলনের ক্ষেত্রে বিএনপির প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগকে-ই এগিয়ে রাখে জনগণ। পক্ষান্তরে ‘বিএনপি আন্দোলন করতে পারে না’-বলে আওয়াজ ওঠে দিকে দিকে।
 
সূত্র জানায়, এবারের আন্দোলনের মাধ্যমে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা এ বদনাম ঘোচাতে চান। একারণেই আপাতত অর্জন নিয়ে না ভেবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকছে বিএনপির হাইকমান্ড।
 
এ ব্যাপারে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, কোনো রেকর্ড সৃষ্টি বা বদনাম ঘোচানোর জন্য আমরা আন্দোলন করছি না। জনগণের দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করছি। আর আন্দোলনের ব্যাপ্তি ও সময়কাল কখনো পূর্বনির্ধারিত থাকে না। শাসকশ্রেণির আচরণের দেখেই এর গতি-প্রকৃতি ও সময়কাল নির্ধারণ করা হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৪ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।