ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

ছাত্রদল নেতার স্বীকারোক্তি

‘গাড়ি পোড়ালে নেতারা খুশি, বকশিস মেলে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৫
‘গাড়ি পোড়ালে নেতারা খুশি, বকশিস মেলে রুবেল হক বিশু

ঢাকা: ‘গাড়ি পোড়ালে নেতারা খুশি হন। বকশিস পাওয়া যায়,’ আটককৃত এক ছাত্রদল নেতা আদালতে স্বীকারোক্তিতে এমন উক্তি করেছেন বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র।



রামপুরা থানার সাবেক ছাত্রদল নেতা রুবেল হক বিশু গ্রেফতারের পর আদালতের স্বীকারোক্তিতে একেকটি পেট্রোল বোমা ছুঁড়তে তিনজন কিভাবে কাজ করেছেন তার বর্ণনা দিয়েছেন, বলেও জানায় সূত্রটি।  

‘আমি গাড়ি থেকে যাত্রী নামাই। রুবেল ম্যাচ দিয়ে পেট্রোল বোমা জ্বালায়, আর জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে রাজিব ছুঁড়ে মারে। এভাবেই রামপুরা মালিবাগ সড়কে আমরা প্রায় ৮/১০ টি গাড়িতে আগুন দিয়েছি’ আদালতকে বিশু এ কথা বলেছেন বলে দাবি গোয়েন্দা পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রটির।   

বিএনপি জামায়াত জোটের হরতাল অবরোধের সময় দেশজুড়ে বাসে-ট্রাকে-গাড়িতে যে হারে পেট্রোল বোমা পড়তে থাকে তারই পরিপ্রেক্ষিতে পরিচালিত অভিযানে আটক হন এই বিশু।

পুলিশ জানায়, রাজধানীর রামপুরা মালিবাগ সড়ক ছিল নাশকতাকারীদের অন্যতম একটি পয়েন্ট। এক পর্যায়ে গোয়েন্দা পুলিশ নাশকতাকারীদের চিহ্নিত করতে শুরু করে। তাতেই উঠে আসে রামপুরা থানার ২৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি রুবেল হক বিশুর নাম। তার নেতৃত্বে এসব ঘটনা ঘটে বলেও প্রমাণ চলে আসে হাতে। তারই ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে বিশুকে রামপুরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।  
 
আর ওই রাতেই গোয়েন্দা পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এতে বিশু ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। তাতেই তিনি বলেন, ‘গাড়ি পোড়ালে নেতারা খুশি হন। বকশিস পাওয়া যায়। ’

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের খিলগাঁও জোনাল টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার ইকবাল হোছাইন বাংলানিউজকে বলেন, গ্রেফতারকৃত রুবেল হক বিশু আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।   তার জবানবন্দিতে এই এলাকার কিছু নাশকতাকারীদের নাম পাওয়া গেছে। এরা সবাই এখন আত্মগোপনে রয়েছে। তারপরও আমরা তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
 
‘বিশুকে যখন থেকে চিহ্নিত করে আটকের চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম ঠিক তারপরপরই ওই এলাকায় নাশকতা কমে গেছে। গত ১০/১৫ দিনেও ওই এলাকায় গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা কম,’ বলেন ইকবাল হোছাইন।  
 
এদিকে আদালতের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বিশু তার জবানবন্দিতে বিএনপির ঢাকা মহানগরের শীর্ষ স্থানীয় এক নেতার নামসহ ছাত্রদল ও যুবদলের কিছু নেতার নাম বলেছেন। পাশাপাশি কে কিভাবে হরতাল অবরোধে আগুন দেবে, ককটেল মারবে তার নির্দেশ যিনি দিতেন তার নামও জানা গেছে এই জবানবন্দিতে।  
 
রুবেলের স্বীকারোক্তি থেকে জানা যায়, মালিবাগ রেলগেট থেকে রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত ১৬ জন ছাত্রদল নেতা যারা বিভিন্ন ইউনিটের সভাপতি, সম্পাদকসহ বিভিন্ন পদে ছিলেন তারাই নাশকতায় জড়িত। এদের নেতৃত্বেই ছিলেন বিশু। মূলত তার নির্দেশনায় গাড়িতে পেট্রোল বোমা, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হতো।
 
বিশুর স্বীকারোক্তিতে পাওয়া ১৬ ছাত্রদল নেতার মধ্যে রয়েছে, তন্ময়, সুমন, হেলাল, লুৎফর, আব্দুর রহমান, তাহের, শাহিন, সুজন, বাবু ওরফে বাঘা বাবু, কামরুল, বাদল, মুক্তার, নুরু, রুবেল, রজবের নাম।   

বিশুকে উদ্ধৃত করে গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, প্রতি সন্ধ্যায় পরের দিনের পরিকল্পনা হতো। পরিকল্পনা মোতাবেক নির্দিষ্ট সময়ে ঝটিকা মিছিল, ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়িতে আগুন দেওয়া হতো।

বিশুর কথায়, বিশেষ করে ছাত্রদল নেতা রতন ওরফে জামাই রতন, মুন্না ওরফে ভ্যাগ্নে মুন্না গাড়ি পোড়ানোয় বেশি উৎসাহ দিতেন।
 
স্বীকারোক্তিতে তিনি বলেন, গাড়ি পোড়ালে বকশিস বেশি আসতো। আর এমনিতেই প্রতিদিন শিপন নামের এক বড় ভাই খরচ দিতো। তার দেয়া টাকাই আমরা সবাই ভাগ করে নিতাম।

বাংলাদেশ সময় ০৩৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।