খালেদার কার্যালয় থেকে: বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের চলমান ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলন’কে সরকার জঙ্গিবাদ বলে দেশ-বিদেশে অপপ্রচার চালাচ্ছে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এসব ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
শুক্রবার (১৩ মার্চ) বিকেলে গুলশানে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া।
ক্ষমতাসীনরা তাকে ক্রমাগত জেল-জরিমানার হুমকি দিচ্ছে এবং অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলছে বলেও অভিযোগ করেছেন বিএনপি প্রধান।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে জঙ্গিবাদ বলে দেশ-বিদেশে অপপ্রচার চালাচ্ছে। জঙ্গিবাদের নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দিয়েছিলাম আমরা। কিন্তু এখন তাদের পালানোর সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।
খালেদা জিয়া বলেন, আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়ে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে তারা। বিভিন্ন হামলার পেছনে তারাই দায়ী বলে প্রমাণ হয়েছে।
দলের নেতা-কর্মীদের নির্যাতনের উদাহরণ টেনে বিএনপি প্রধান বলেন, আমাদের যুগ্ম-মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদকে গ্রেফতার করে গত তিনদিনে স্বীকার করেনি সরকার। মাহমুদুর রহমান মান্নাকেও আটক করে পরে নাটক সাজিয়ে ফেরত দিয়েছে।
এসময় সালাউদ্দিন আহমেদকে ফেরতের দাবিও তোলেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
খালেদা অভিযোগ করে বলেন, আমাকে হীন পন্থায় যেভাবে রেখেছে দেশবাসী সব জানেন।
যৌক্তিক পরিণতিতে পৌঁছার আগ পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে আবারও ঘোষণা দেন খালেদা জিয়া।
সংকট নিরসনে সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি শর্ত দিয়ে বলেন, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। সভা-সমাবেশ, মিছিল কর্মচি পালনের ওপর থেকে বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করতে হবে। এরপর সবার কাছে গ্রহণযোগ্য অংশগ্রহণমূলক সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। এছাড়া, সংলাপের আয়োজন করতে হবে।
তিনি বলেন, সমঝোতার কথা যারা বলে- এই সরকার তাদের অসম্মান করে।
গাজীপুরের জনসভা বন্ধে ১৪৪ ধারা জারি ও তার আদালতে হাজিরার বিষয়ে সমস্যা তৈরি করা হয়েছে বলেও সরকারের প্রতি অভিযোগ বিএনপি চেয়ারপারসনের।
খালেদা বলেন, ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বরং উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। তাই যৌক্তিক পরিণতিতে না পৌঁছা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
দেশে গভীর সংকট চলছে মন্তব্য করে এর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করেন ২০ দলীয় জোটনেতা। তিনি বলেন, দেশ আজ গভীর সংকটে। এর জন্য দায়ী আওয়ামী লীগ, আরও স্পষ্ট করে বললে শেখ হাসিনা।
বক্তব্যের শুরুতেই তিনি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানান।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ একতরফা সিদ্ধান্তে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাদ করে দেয়। সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো সুযোগই তারা রাখেনি।
তিনি বলেন, মহাবিতর্কিত জাতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে গণতন্ত্রের নাম-নিশানা মুছে দিতে চেয়েছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অবৈধ সরকার গঠন করেছে। প্রহসনের নির্বাচনের আগে তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সংসদ ভেঙে নতুন নির্বাচন দেওয়া হবে। যথারীতি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছিলেন। আসলে প্রতিশ্রুতি রক্ষার ইতিহাস তাদের নেই।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও কার্যালয়ে তল্লাশির নির্দেশ জারির পর এই প্রথম সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন খালেদা জিয়া।
বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেলের পাঠানো এক বিবৃতিতে এ সংবাদ সম্মেলনের কথা জানানো হয়।
গত ৩ জানুয়ারি রাতে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থান নেওয়ার পর শুক্রবার ৬৯তম দিনে তৃতীয়বারের মতো সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন খালেদা।
এর আগে ৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবসে’র কর্মসূচিতে অংশ নিতে কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় মূলফটকে বাধা পান ও সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেন।
এরপর ১৯ জানুয়ারি সন্ধ্যায় দ্বিতীয়বারের মতো খালেদার বক্তব্য পাওয়া যায় সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে। সম্মেলনটিতে ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলবে’ বলে ঘোষণা দেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪১ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৫
** ‘দুই মাসের আন্দোলনের প্রাপ্তি জনসমর্থন’
** আলোচনার ব্যবস্থা করার দায় সরকারের
** ‘জঙ্গিবাদের অপপ্রচার চালাচ্ছে সরকার’
** আ.লীগই বাসে আগুন ও পেট্রোল বোমা মারছে
** সালাহউদ্দিনের মুক্তি না দিলে পরিণতি ভালো হবে না
** এ আন্দোলন অধিকার প্রতিষ্ঠার
** ‘যৌক্তিক পরিণতি পর্যন্ত আন্দোলন চলবে’
** এ আন্দোলন অধিকার প্রতিষ্ঠার
** `সংকটের জন্য দায়ী শেখ হাসিনা'
** ‘প্রতিশ্রুতি রাখেননি হাসিনা’
** যারা আন্দোলনে থেকেছেন তাদের সাধুবাদ
** যৌক্তিক পরিণতিতে পর্যন্ত আন্দোলন চলবে
** ‘আন্দোলন ছাড়া আর কোনো পথ খুলে রাখা হয়নি’
** জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে সরকার
** অভিযানের নামে নেতাকর্মীদের নির্যাতন করছে সরকার