ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

সরকারকে সংলাপ আয়োজনের তাগিদ খালেদার

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৫
সরকারকে সংলাপ আয়োজনের তাগিদ খালেদার ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল /বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খালেদার কার্যালয় থেকে: অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য সরকারকে অবিলম্বে সংলাপ আয়োজনের তাগিদ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটনেতা খালেদা জিয়া।

শুক্রবার বিকেলে গুলশানে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তাগিদ দেন।



খালেদা জিয়া বলেন, আশা করি ক্ষমতাসীনদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তারা সমঝোতার পথে ফিরে আসবে। আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান সংকট দ্রুত নিরসনের উদ্যাগ নেবে। অনতিবিলম্বে জাতীয় সংসদের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংলাপ আয়োজন করতে হবে।

এ সময় ‘প‌ক্ষপাতহীন ও বিশ্বাসযোগ্য’ তদন্তের মাধ্যমে ‌’জীবনসংহারী সন্ত্রাসে’র প্রকৃত হোতাদের শনাক্ত করে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলেও ঘোষণা দেন খালেদা জিয়া।  

সংকট মুক্ত হয়ে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে আসন্ন ৪৫তম স্বাধীনতা দিবস পালনেরও ঐকান্তিক ইচ্ছা ব্যক্ত করেন খালেদা জিয়া।  

তিনি বলেন, একতরফাভাবে যে বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী তারা পাশ করেছে তা তারা একতরফাভাবে বাতিলও করে দিতে পারে। তাতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পথ খুলবে। এই সংশোধনীর পর বর্তমান ক্ষমতাসীনরা পদত্যাগ করে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করলেই দেশে সংকটের অবসান ঘটবে।

বক্তব্য শেষে ‌‌‌সাংবাদিকরা জানতে চান-লাগাতার অবরোধ আর হরতাল নির্ভর আন্দোলন থেকে কি পেলেন? উত্তরে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা জনগণের সমর্থন পেয়েছি। জনগণ আমাদের আন্দোলনে শরিক হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস-চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল কাউয়ুম, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা প্রমুখ।

খালেদা জিয়া বলেন, দেশ আজ গভীর সংকটে। এ সংকট রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক। আর এ সংকটের স্রষ্টা আওয়ামী লীগ এবং আরো সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে শেখ হাসিনা। জনগণের সম্মতি ছাড়া কারসাজির মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়ে সেই ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার উদগ্র বাসনা আজ সমগ্র জাতিকে এক চরম অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে।

তিনি বলেন, অনেক বিবাদ-বিসম্বাদের পর বাংলাদেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দল এই মর্মে একমত হয়েছিল যে, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে এখানে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের ব্যাপারে জাতীয় ঐক্যমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

তারই আলোকে জাতীয় সংসদে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান আমরা প্রজাতন্ত্রের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম। এই ব্যবস্থার অধীনে কয়েকটি নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

‘ট্রায়াল অ্যান্ড এরর’-এর মধ্য দিয়ে যে-কোনো পদ্ধতিই সংশোধিত ও পরিশোধিত হতে পারে মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন,  প্রয়োগের মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় পরিলক্ষিত ত্রুটি-বিচ্যুতিও ঐক্যমত্যের ভিত্তিতেই সংশোধনের সুযোগ ছিল এবং উচিত ছিল সেটাই করা। আওয়ামী লীগ তা না করে একতরফা সিদ্ধান্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। তারা দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিধান করে। এ লক্ষ্যে তারা সংবিধানের যে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করেছে তাতে শান্তিপূর্ণ, গণতান্ত্রিক ও স্বাভাবিক পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের সব পথই প্রায় রুদ্ধ করে ফেলা হয়েছে। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো সুযোগই রাখা হয়নি। সংকটের মূল উৎস সেখানেই।

এই মহাবিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনীর আওতায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নামে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এক নির্লজ্জ প্রহসনের মধ্য দিয়ে তারা গণতন্ত্রের নাম-নিশানাও মুছে দিয়েছে। এই প্রহসনের অংশ হিসাবে অপকৌশলের মাধ্যমে তারা ভোট ছাড়াই সংসদের ১শ’ ৫৩টি অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করে। এই ঘৃণ্য কারসাজির মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বহীন একটি অবৈধ ও স্বেচ্ছাচারী সরকার জগদ্দল পাথরের মতো জাতির কাঁধে চেপে বসেছে। জবাবদিহিতাহীন এ সরকারের দেশ পরিচালনার কোনো নৈতিক অধিকার, ভিত্তি ও এখতিয়ার নেই।

মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে এমন ন্যক্কারজনক জালিয়াতি করার পর গণতন্ত্র কিংবা জনগণের অধিকার নিয়ে কথা বলার কোনো নৈতিক অধিকারও তাদের নেই।

খালেদা জিয়া বলেন, মহাকারসাজির নির্বাচনী প্রহসনের প্রাক্কালে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখার স্বার্থে এটি একটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। শেখ হাসিনা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে একটা সমঝোতা হলে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নতুন নির্বাচনের অঙ্গীকারও করেছিলেন। কিন্তু যথারীতি তিনি তার সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছেন। আসলে প্রতিশ্রুতি রক্ষার কোনো দৃষ্টান্ত তাদের নেই।
বিএনপি প্রধান বলেন, ১৯৮৬ সালে প্রতিশ্রুতি লংঘণ করে স্বৈরাচারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তারা আত্মস্বীকৃত জাতীয় বেঈমানে পরিণত হয়েছিলেন।

৫৭ বছর বয়সে রাজনীতি থেকে অবসর নেয়ার অঙ্গীকারও অবলীলায় ভঙ্গ করতে দেশবাসী দেখেছে। এ রকম আরো বহু উদাহরণ রয়েছে।

তিনি বলেন, তবুও তাদের প্রতিশ্রুতির কারণে ৫ জানুয়ারি ২০১৪-এর পর আন্দোলনের কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার কথা বিশ্বাস করে আমাদের সেই সিদ্ধান্ত নেয়া যে সঠিক ছিলনা তা আমরা অচিরেই বুঝতে পারি। কারণ, আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করার পর সারা দেশে যৌথবাহিনীর অভিযানের নামে তারা এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, তারা বিচার বহির্ভূত হত্যা, গুম, খুন, অপহরণ ও নির্যাতনের মাধ্যমে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। বিরোধী দলমতের শত শত নেতা-কর্মীকে হত্যা ও গুম করা হয়। তাদের আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের সদস্যদের ওপরেও নির্যাতন চালানো হয়। রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত পল্লী পর্যন্ত চলতে থাকে এই হত্যা ও উৎপীড়নের তাণ্ডব। রাজনীতি করার স্বাভাবিক অধিকারটুকুও কেড়ে নেয়া হয়। এত কিছু সত্ত্বেও আমরা দীর্ঘ এক বছর অপেক্ষা করেছি। বারবার আলোচনার আহ্বান জানিয়েছি। কারণ আমরা সমঝোতা ও শান্তিতে বিশ্বাসী।

‌অতীতেও আমরা সব সময়েই রাজনীতিতে সহিষ্ণুতা,সংযম, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সমঝোতার জন্য সব সময় এগিয়ে গিয়েছি’ মনন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, কিন্তু তারা বরাবরই সংঘাত ও সংঘর্ষের পথ বেছে নিয়েছে। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের পর ১৯৯১ সালে জনগণের ভোটে আমরা নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব নিলে তারা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছিলেন, এক দিনও শান্তিতে থাকতে দেবো না। তারপর তারা কেমন সহিংস পন্থায় তাদের সেই ঘোষণা কার্যকর করেছে তা দেশবাসী দেখেছেন। এবারেও তারা অস্ত্রের ভাষায় আমাদেরকে দমিয়ে রাখতে চেয়েছে। সচেতন ও বিবেকবান কোনো নাগরিক সমঝোতার কথা বললেই তারা তাকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করেছে।

তিনি বলেন, আমরা আলোচনার ভিত্তি হিসাবে সাত দফা প্রস্তাব তুলে ধরি। তারা সঙ্গে সঙ্গে তা নাকচ করে দেয়। এই পরিস্থিতিতে সংকট নিরসন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং ভোটাধিকারসহ জনগণের সকল অধিকার ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন ছাড়া আর কোনো পথ আমাদের সামনে খোলা রাখা হয়নি। তাই আমরা বাধ্য হয়ে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েছি।

খালেদা জিয়া বলেন, গত ৫ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিনটিকে আমরা গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে পালনের কর্মসূচি দিয়েছিলাম। ঢাকায় আমাদের সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি ছিল। সেই কর্মসূচি বানচালের উদ্দেশ্যে ক্ষমতাসীনরা ৩ জানুয়ারি থেকে অঘোষিতভাবে দেশ অবরুদ্ধ করে ফেলে।

সড়ক ও নৌপথে সব যানবাহন চলাচল বন্ধ করে রাজধানীকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়।   আমাদের কর্মসূচির আগের রাতেই আমাকে এই কার্যালয়ে বালু ও ইট বোঝাই ট্রাক, জলকামান ও সাঁজোয়া যান দিয়ে ঘিরে অবরুদ্ধ করা হয়। পুলিশ বাইরে থেকে গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ৫ জানুয়ারি বিকেলে আমি সমাবেশে যোগদানের উদ্দেশে বেরুতে চাইলে বাধা দেয়া হয়। আমিসহ ভেতরে অবস্থানরত সকলের ওপর বাইরে থেকে দফায় দফায় বিষাক্ত পিপার স্প্রে ছোঁড়া হয়। প্রাণহানির আশংকা থাকায় মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এই পিপার স্প্রে ব্যবহার আমাদের দেশেও উচ্চ আদালত নিষিদ্ধ করেছেন। সেই পিপার স্প্রে প্রয়োগের কারণে আমি এবং সাংবাদিকসহ অনেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।

এর আগে গাজীপুরেও আমার জনসভা ১৪৪ ধারা জারি করে বন্ধ করা হয়। আমি আদালতে হাজিরা দিতে গেলে আমার গাড়ি বহরে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র হামলা করে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব সহ অনেককে গ্রেফতার করা হয়।

‌‌এভাবে বিরোধী রাজনীতি ও ভিন্নমতকে এরা দমন করে দেশে কার্যত একদলীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন করে ফেলেছে‘ সংবাদ-মাধ্যমকে ভয় দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে প্রচারযন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। মানুষের সব অধিকার তারা কেড়ে নিয়েছে।

তিনি বলেন, এর বিরুদ্ধে লড়াই না করলে আমাদের স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে। তাই আমরা আন্দোলনের ডাক দিয়েছি। জনগণের সেই গণতান্ত্রিক আন্দোলন এখন চলছে। শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ স্বাভাবিক করতে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বরং একের পর এক উস্কানিমূলক আচরণ করে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটানো হচ্ছে। কাজেই যৌক্তিক পরিণতিতে না পৌঁছা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, আন্দোলনে দেশবাসী ও নেতা-কর্মীর কষ্ট ও ক্ষয়ক্ষতির কথা আমরা জানি ও বুঝি। এ সম্পর্কে সকলেই সচেতন। কেবল ক্ষমতাসীনদের কোনো বোধোদয় নেই। জনগণের দুর্দশা লাঘবের চেয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকাই তাদের কাছে বড়।

সাহসিকতার সঙ্গে সবাই অংশগ্রহণ করলে এ আন্দোলন অচিরেই সফল হবে ইনশাআল্লাহ্। এই সাময়িক কষ্ট জাতির বৃহত্তর স্বার্থে স্বীকার করার জন্য আমি সকলের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, অবৈধ স্বৈরাচারী শাসকেরা হত্যা ও উৎপীড়ন চালিয়ে বহু মায়ের কোল খালি করে চলেছে। প্রতিটি জনপদে আজ স্বজনহারা মানুষের কান্নার রোল। এই কান্না অত্যাচারীদের কানে পৌঁছায় না। কে কখন গুম, খুন ও ক্রসফায়ারের শিকার হবে তা নিয়ে সকলে আতঙ্কিত। শত শত তরুণকে আটক করে গুলি ও নির্যাতনে পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যেও সারা দেশে যারা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন আমি তাদেরকে সাধুবাদ দেই।

তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে সকল শ্রেণীর জনগণ, দল-জোটের নেতা-কর্মী, শুভানুধ্যায়ী, সমর্থক ও সাংবাদিক বন্ধুরাসহ সবাই যে নির্যাতন, জেল-জুলুম ও দুঃখ-কষ্ট সহ্য করেছেন তার জন্য প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানাই। যারা নিহত, আহত ও গুম হয়েছেন বেদনাহত চিত্তে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সমাবেদনা জানাই। আল্লাহর রহমতে দিন পরিবর্তন হলে আমরা অবশ্যই আপনাদের পাশে দাঁড়াবো।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের যে সব বন্ধুরাষ্ট্র এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ও গণমাধ্যম ও সিভিল সমাজের সদস্যবৃন্দ উদ্বেগ প্রকাশ করে সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের কথা বলেছেন, আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।

তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্র ও নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক মানুষ জীবন দিয়েছে, অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। উন্নত কিংবা অনুন্নত কোনো দেশেই গণতন্ত্র ও অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই এবং সংগ্রামী মানুষের আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যায়নি। বাংলাদেশেও তা বৃথা যাবে না ইনশাআল্লাহ্।
খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি হত্যার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে হত্যা ও সন্ত্রাসের কোনো স্থান নেই। তারপরও আমরা লক্ষ্য করেছি যে, জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের বর্তমান আন্দোলন চলাকালে সরকার বিভিন্ন হিংসাত্মক পন্থার আশ্রয় নিয়েছে।

সরকারের এই দমন-পীড়ন জাতীয় ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা মনে করি যে, বিরাজমান সমস্যা সমাধানে: জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে সারাদেশে যে সব নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদেরকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। পুলিশী ও যৌথবাহিনীর হয়রানি বন্ধ করতে     হবে এবং নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হয়রানিমূলক সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। বিচার বহির্ভূত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে হবে।

সভা-সমাবেশ-মিছিলসহ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর আরোপিত সকল প্রকার বিধিনিষেধ অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।

সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য সরকারের অধীনে সকলের অংশগ্রহণে অনতিবিলম্বে জাতীয় সংসদের     অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংলাপের আয়োজন করতে হবে। আমাদের বিশ্বাস, এই প্রক্রিয়াতেই আমরা সমস্যা সমাধানের পথে এগিয়ে যেতে পারবো। আন্দোলনকে দ্রুত নিয়ে আসতে পারবো শান্তিপূর্ণ সমঝোতার পথে।

খালেদা জিয়া বলেন, জীবনের এই প্রান্তে ক্ষমতা আমার কাছে বড় কিছু নয়। দেশবাসীর ভালবাসায় সিক্ত হয়ে আমি অতীতে কয়েকবার দেশ পরিচালনার সুযোগ পেয়েছি। প্রিয় সেই দেশবাসীর জন্য তাদের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতেই আমরা লড়াই করছি। এই আন্দোলন কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তির নয়। কোনো দলের বিরুদ্ধে কোনো দলের নয়। এ আন্দোলন আদর্শের। এ আন্দোলন মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার। এ আন্দোলন গণতন্ত্রে বিশ্বাসী সকলের।

আজকের এই আন্দোলন ক্ষমতা দখলের আন্দোলন নয়। এই আন্দোলন একটি গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ ও আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলার আন্দোলন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে যে সমতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের কথা বলা হয়েছে তার বাস্তবায়নের মাধ্যমেই একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। দেশের মালিকানা আমরা তাই দেশের মানুষের কাছে ফিরিয়ে দিতে চাই। যাতে ভোটের অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারাই সিদ্ধান্ত দিতে পারে তাদের পক্ষে কারা দেশ পরিচালনা করবে।

দল-মত-পেশা-শ্রেণী নির্বিশেষে সকল ব্যক্তি ও শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনৈ শামিল হবার উদাত্য আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, আমার আহ্বান, যারা এখনো নিষ্ক্রি আছেন তারা সক্রিয় হোন। নিজ নিজ অবস্থান ও এলাকায় আন্দোলন গড়ে তুলুন। আন্দোলনের মধ্যদিয়ে গড়ে তুলুন বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য।
আমরা যখনই জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করেছি, তখনই বিভ্রান্তি ছড়াবার উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ অপপ্রচারণার নোংরা পথ বেছে নিয়েছে। কখনো তারা বলেছে মুজিব হত্যার বিচার ঠেকাতে এবং কখনো বলেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার রোধে নাকি আমরা আন্দোলনে নেমেছি।

তাদের এসব অপপ্রচার জনগণকে বিভ্রান্ত করতে পারেনি।

তিনি বলেন, এবারেও গণবিচ্ছিন্ন শাসকগোষ্ঠী জনগণের আন্দোলনে ভীত হয়ে হত্যা-উৎপীড়নের পাশাপাশি ষড়যন্ত্র, নাশকতা ও অপপ্রচারণায় মেতে উঠেছে। তারা এখন পুরোপুরি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর নির্ভর করে টিকে থাকতে চাইছে। সেই উদ্দেশ্যে এসব বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের ভার কতিপয় দলবাজ কর্মকর্তার হাতে তুলে দিয়ে তাদের মাধ্যমে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও আনসার বাহিনীকে বিরোধী দল ও জনগণকে নিপীড়নের হাতিয়ারে পরিণত করছে। আমরা বারবার বলেছি, আজ আবারো আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমুহকে আইনসম্মতভাবে কর্তব্য পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।

হত্যা, বিচার বহির্ভূত হত্যা, গুম, অপহরণ, নির্যাতন, বন্দি অবস্থায় গুলি করে পঙ্গু করা, বাড়িঘরে হামলা, পাইকারি গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলা দায়েরের বেআইনি প্রক্রিয়া থেকে তাদেরকে দূরে থাকতে বলছি।

দেশবাসী জানেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি বরাবরই সন্ত্রাস ও সহিংসতা-নির্ভর। অতীতে আন্দোলনের নামে তারা যে ভয়াবহ সন্ত্রাস চালিয়েছে তা সকলেরই জানা। মাসের পর মাস টানা হরতাল-অবরোধ-অসহযোগ কর্মসূচির নামে তারা নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের সময়ে যাত্রীবাসে গান পাউডার দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে যাত্রাবাড়িতে ১৮ জন এবং শেরাটন হোটেলের কাছে ১১ জন যাত্রীকে তারা জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছিল। ঐ দুটি পৈশাচিক ঘটনায় দগ্ধ আরো ১২ জন পরে হাসপাতালে প্রাণ হারান। এছাড়া বোমা ও ককটেল মেরে এবং পিটিয়ে তারা বহু নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপরেও আক্রমণ করেছে। তাদের সন্ত্রাসের কারণে এসএসসি পরীক্ষা তিন মাস পর্যন্ত পিছাতে হয়েছে। পবিত্র রমজান মাসেও তারা হরতাল করেছে। যমুনা সেতুর নির্মাণ কাজ উদ্বোধনের দিনে হরতাল দিয়েছে।

স্বল্পমেয়াদী ৬ষ্ঠ সংসদদের নিয়ম রক্ষার নির্বাচন বর্জন করে সেই নির্বাচন ঠেকাতে তারা ‘গণকার্ফু’ জারি করে দেশব্যাপী হত্যা ও ধ্বংসের তাণ্ডব চালিয়েছিল।
এই আওয়ামী লীগ আন্দোলনের নামে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর অচল এবং রেল স্টেশন, যানবাহন, অফিস-আদালত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করেছে। অফিসগামী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রকাশ্য রাজপথে বিবস্ত্র করেছে। লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করে লাশের ওপর নৃত্য করেছে। এসব পৈশাচিক তাণ্ডবের প্রকাশ্য নির্দেশ শেখ হাসিনা নিজে দিয়েছেন এবং এসবের বহু দালিলিক প্রমাণও রয়ে গেছে।

আওয়ামী লীগ আজ বিচার বিভাগের মর্যাদার কথা বলে। অথচ তারা রায় পছন্দ না হওয়ায় বিচারকদের বিরুদ্ধে লাঠি মিছিল করেছে। সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বস্তি বসিয়েছে। দেশের প্রধান বিচারপতির এজলাসে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে। ক্ষমতায় বসেই তারা নিজেদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো প্রত্যাহার করেছে। সাজাপ্রাপ্ত খুনের আসামিদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমায় মুক্ত করেছে।

খালেদা জিয়া বলেন, সন্ত্রাসের দানব সেই আওয়ামী লীগ এবার আন্দোলন শুরুর পর থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ছত্রছায়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বিরোধী দলের কর্মীদের হত্যা, গুম ও বন্দি অবস্থায় গুলী করে পঙ্গু করা শুরু করে।

আমাদের দল-জোটের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে গুলি চালানো হয়। গুলিতে রিয়াজ রহমানের মতো সজ্জন ব্যক্তি গুরুতর আহত হন। প্রবীণ রাজনীতিক তরিকুল ইসলামসহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতাদের বাড়ি-ঘর, অফিস ও যানবাহনে গুলি, বোমা হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। আমাদের দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দসহ সারা দেশে প্রায় দশ হাজার নেতা-কর্মীকে গত দু’মাসে তারা কারারুদ্ধ করেছে। লাখ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।

বিরোধী দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে তাদেরকে নজীরবিহীনভাবে দীর্ঘদিন ধরে রিমান্ডে রেখে নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, আমাদের দলের অন্যতম যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদকে একের পর এক মিথ্যা মামলায় প্রায় এক মাস ধরে দফায় দফায় রিমান্ডে নিয়ে নানাভাবে নির্যাতন চালানো হয়েছে। জনগণের বিপুল ভোটে নির্বাচিত বিরোধী দল সমর্থক মেয়রদের মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে দলীয় লোক বসানোর জন্য তাদের বরখাস্ত করা হচ্ছে। বিনা ভোটে ক্ষমতায় আসা শাসকদের কাছে জনগণের ভোটের যে কোনো মূল্য নেই তা তারা হাতে নাতে প্রমাণ করছে। অথচ আমাদের আমলে আওয়ামী লীগের নেতা হিসাবে ঢাকার মেয়র তথাকথিত ‘জনতার মঞ্চ’ গঠন করে রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। একই দলের নেতা হিসাবে চট্টগ্রামের মেয়র সমুদ্র বন্দর অচল করায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আমরা তাদের বরখাস্ত করিনি।

তিনি বলেন, আমাদের দলের অন্যতম যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ সম্পর্কে আপনারা জানেন। তাকে গ্রেফতার করেও গত তিন দিনেও সরকার স্বীকার করেনি। এখন পর্যন্ত তার কোনো হদিস নেই। নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্নার ব্যাপারেও সরকার প্রথম অস্বীকার করে পরে নাটক সাজিয়ে ২১ ঘণ্টা পর তাকে গ্রেফতার দেখায়।

খালেদা জিয়া বলেন, তারপরেও বিএনপি ও  ২০ দলের পক্ষে সালাহউদ্দিন আহমেদের দেয়া বক্তব্য-বিবৃতি প্রচারিত হতে থাকায় তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি আবারো অবিলম্বে সালাহউদ্দিন আহমেদকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় এর পরিণতি শুভ হবে না।

তিনি বলেন, এত কিছু করেও উদ্দেশ্য হাসিল না হওয়াতে আওয়ামী লীগ অন্তর্ঘাত ও নাশকতার পথ বেছে নিয়েছে। পূর্ণ নিরাপত্তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা আইন-শৃংখলা রক্ষা বাহিনীর প্রহরায় কিছু যানবাহন রাস্তায় নামায়।

সেসব যানবাহনে পেট্রোল বোমা মেরে নারী-শিশুসহ নিরাপরাধ মানুষকে দগ্ধ করে শোচনীয় মৃত্যুর পথে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। আমরা এসব পৈশাচিক বর্বরতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে আসছি। হীন সন্ত্রাসে জড়িতদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তিরও দাবি করে চলেছি। কিন্তু আমাদের আহ্বানে তারা কর্ণপাত করেনি। তারা তাদের ষড়যন্ত্রের নীলনকশা বাস্তবায়নে এগিয়ে গেছে এবং নিরপরাধ মানুষের শোচনীয় মৃত্যুকে তারা তাদের ঘৃণ্য রাজনীতির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করে চলেছে।

দেশে যখন নিরাপরাধ মানুষকে নির্বিচারে হত্যার মতো পৈশাচিক ঘটনা ঘটছে তখন বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত ও তথ্য প্রমাণের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের কোনো উদ্যোগ নেই। তার বদলে চলছে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে একতরফা অপপ্রচার। কোনো ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বিনা তদন্তে ও তথ্য-প্রমাণ ছাড়া মামলা দায়ের করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের দায়ী করে ক্রমাগত বক্তব্য রাখা হচ্ছে। যার ফলে তদন্ত প্রভাবিত এবং ন্যায়বিচারের পথ রুদ্ধ হচ্ছে।

অথচ সরকারি দলের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বোমাসহ গ্রেফতার এবং এর কোনো কোনো খবর সংবাদ-মাধ্যমে প্রচারিত হবার পরেও উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। আওয়ামী নেতারা সার্টিফিকেট দিয়েও তাদের ছাড়িয়ে নিচ্ছে। এতে প্রকৃত অপরাধীরা আড়ালে চলে যাচ্ছে এবং পার পাচ্ছে।

দেশবাসী প্রতিনিয়ত দেখছেন, ছাত্রলীগ-যুবলীগ সন্ত্রাসীরা দখল ও টেন্ডারবাজিতে জড়িয়ে গোলাগুলি করছে, সশস্ত্র সংঘাতে জড়াচ্ছে। আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্য ও সাংবাদিকদের ওপরেও সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে। বিরোধী দলের সভা-সমাবেশ, মিছিলে হামলা করছে। তাদের নিজেদের মধ্যেও সশস্ত্র সংঘাত হচ্ছে। কিন্তু কাউকেই ধরা হচ্ছেনা।

আমাদের অফিসগুলো তালাবন্ধ করে রাখা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ মিছিল-সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। অথচ আমাদের বিরুদ্ধে একতরফা অপপ্রচারের উদ্দেশ্যে আইন-শৃংখলা বাহিনীর ছত্রছায়ায় শাসক দলের মুষ্টিমেয় সংখ্যক লোক দিয়ে বিভিন্ন স্থানে মহড়া করানো হচ্ছে।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ‘দেখা মাত্র গুলি’ করার বেআইনি আদেশ দেয়া হয়েছে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, সন্ত্রাসের জন্য কলংকিত ছাত্রলীগের সদস্যদের অপরাধী ধরিয়ে দেয়ার নামে রাষ্ট্রীয় অর্থে পুরষ্কৃত করা হচ্ছে। এসবের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতিকে আরো নৈরাজ্যকর করে তোলা হচ্ছে।

আমি পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই যে, জনগণের জান-মালের নিরপত্তা দিতে ব্যর্থ এই শাসক মহলই সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিয়ে যানবাহনে তুলে পরিকল্পিতভাবে শোচনীয় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এসব পরিকল্পিত বোমা হামলার সঙ্গে তারাই জড়িত বলে দেশের বেশির ভাগ মানুষ মনে করে। নিরাপরাধ মানুষের জীবনকে যারা রাজনীতির পণ্যে পরিণত করে তাদের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই।

রাজনৈতিক সংকট সমাধানের কোনো সদিচ্ছা এই সরকারের নেই দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, তারা সংকটকে দীর্ঘয়িত করতে চায়। সেই উদ্দেশ্যেই আন্দোলন চলাকালে তারা অন্তর্ঘাত ও নাশকতা চালিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে জংগি তৎপরতা বলে দেশে-বিদেশে অপপ্রচার চালাচ্ছে। সকলেই জানেন যে, তাদের শাসনামলেই এ দেশে জংগিবাদের উত্থান ও বিস্তার ঘটেছিল। আমরা সরকারে আসার পর জং্গি নেতাদের গ্রেফতার ও বিচার করে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করেছিলাম। তাদের নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ ভেঙ্গে দেয়া সম্ভব হয়েছিল। আজ বর্তমান ক্ষমতাসীনদের সহায়তায় জং্গিদের আটকাবস্থা থেকে পালাবার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে।

জনগণের ন্যায্য দাবি অগ্রাহ্য করার উদ্দেশ্যেই তারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে জং্গি তৎপরতা হিসেবে অপপ্রচার করছে। এর ফল কখনো ভালো হতে পারে না। এতে প্রকৃত জং্গিরাই সুবিধা পাবে; যা কারোরই কাম্য নয়।

পক্ষপাতহীন ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে জীবনসংহারী সন্ত্রাসের প্রকৃত হোতাদের শনাক্ত করে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলেও ঘোষণা দেন খালেদা জিয়া।  

এসব ঘটনায় জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তিবিধান কল্পে বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, আমরা জনগণের ভোটের অধিকারসহ সকল গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন করছি। কাজেই জনগণ আমাদের সঙ্গে আছেন। আমরা তাদেরকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে পারি না। সাধারণ মানুষকে বোমা মেরে ও পুড়িয়ে হত্যা এবং এ নিয়ে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে প্রচারণা এবং নির্যাতন চালিয়ে ক্ষমাতাসীনরাই সুবিধা পাবে। কাজেই ক্ষমতাসীনেরা সুবিধা পায় এমন কোনো অপকর্মে আমাদের কেউ জড়িত থাকার প্রশ্ন উঠে না।

খালেদা জিয়া বলেন, ক্ষমতাসীনেরা প্রতিনিয়ত আমাকে জেল-জুলুম ও ফাঁসির ভয় দেখাচ্ছে। নানা ভাবে হেনস্থা করছে। আমাদেরকে টার্গেট করে অশ্রাব্য ভাষায় অপপ্রচার চালাচ্ছে। এসবে কোনো লাভ হবে না। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সকলের অংশগ্রহণে দ্রুত একটি নির্বাচনের আয়োজন করলেই কেবল চলমান সংকটের সুরাহা হবে।

তিনি বলেন, এ নিয়ে ক্ষমতাসীনরা যদি কোনো আলোচনা করতে না চায় তাহলে সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব এককভাবে তাদের ওপরেই বর্তাবে। তথাকথিত হলেও একটি সংসদের অধিবেশন চলছে। একতরফাভাবে যে বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী তারা পাশ করেছে তা তারা একতরফাভাবে বাতিলও করে দিতে পারে। তাতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পথ খুলবে। এই সংশোধনীর পর বর্তমান ক্ষমতাসীনরা পদত্যাগ করে নতুন নির্বাচনের ব্যবস্থা করলেই দেশে সংকটের অবসান ঘটবে।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সংকট নিরসনের জন্য ১৯৯৬ সালে আমরা নিয়ম রক্ষার নির্বাচন করে সংবিধান সংশোধনের পর পদত্যাগ করে আমাদের অঙ্গীকার পূরণ করেছিলাম। এখন শেখ হাসিনা অন্তত: এবার যদি তার অঙ্গীকার পূরণ করেন তাহলেই দেশে শান্তি, স্বস্তি ও সমঝোতার পরিবেশ ফিরে আসবে। মানুষ মুক্তি পাবে।

তিনি বলেন, সামনে মহান স্বাধীনতা দিবস। জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সেই স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে, জনগণের স্বাধীনতা এবং মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার পুন:প্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদের তেমন জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই। আজকের সংকট সমাধানের চাবিকাঠি ক্ষমতাসীনদের হাতে। সংকট নিরসনের মাধ্যমে তারা সেই কাঙ্খিত জাতীয় ঐক্যের পথ খুলে দিতে পারে। তাহলেই আমরা সংকট মুক্ত হয়ে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতির ৪৫তম স্বাধীনতা দিবস পালন করতে পারবো।

তিনি বলেন, আশা করি ক্ষমতাসীনদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। তারা সমঝোতার পথে ফিরে আসবে। আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান সংকট দ্রুত নিরসনের উদ্যাগ নেবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১১ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৫

** ‘জঙ্গিবাদের অপপ্রচার চালাচ্ছে সরকার’
** ‘দুই মাসের আন্দোলনের প্রাপ্তি জনসমর্থন’
** আলোচনার ব্যবস্থা করার দায় সরকারের
** ‘জঙ্গিবাদের অপপ্রচার চালাচ্ছে সরকার’
** আ.লীগই বাসে আগুন ও পেট্রোল বোমা মারছে
** সালাহউদ্দিনের মুক্তি না দিলে পরিণতি ভালো হবে না
** এ আন্দোলন অধিকার প্রতিষ্ঠার
** ‘যৌক্তিক পরিণতি পর্যন্ত আন্দোলন চলবে’
** এ আন্দোলন অধিকার প্রতিষ্ঠার
** `সংকটের জন্য দায়ী শেখ হাসিনা'
** ‘প্রতিশ্রুতি রাখেননি হাসিনা’
** যারা আন্দোলনে থেকেছেন তাদের সাধুবাদ
** যৌক্তিক পরিণতিতে পর্যন্ত আন্দোলন চলবে
** ‘আন্দোলন ছাড়া আর কোনো পথ খুলে রাখা হয়নি’
** জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে সরকার
** অভিযানের নামে নেতাকর্মীদের নির্যাতন করছে সরকার

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।