ঢাকা: জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ হত্যা চলতে থাকলে আলোচনা নয় জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্র সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আলোচনা করেনি। তারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, আমরাও তাই করবো।
শনিবার (১৪ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আওয়ামী লীগ।
সৈয়দ আশরাফ বলেন, আজকে যদি খালেদা জিয়া তার সন্ত্রাসী বাহিনীকে সন্ত্রাস থেকে মুক্ত করেন, মানুষ হত্যা বন্ধ করেন, তাহলেই দেশে শান্তির পরিবেশ আসবে। সেই শান্তির পরিবেশে আলোচনা সম্ভব। মানুষ হত্যা করে, সরকারকে জিম্মি করে নির্বাচন চান, সেটা বাংলাদেশে কোনোদিনই হবে না। এখন সময় বাংলার মাটি থেকে এই সন্ত্রাসীদের চিরতরে নির্মূল করার। একাত্তরে পাকিস্তানিরা ঠেকাতে পারে নাই, খালেদা জিয়াও এখন পারবেন না।
আশরাফ অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলন বস্তুনিষ্ঠ ছিল না। অবরোধে সারাদেশে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ১৫০ জন মানুষ হত্যা করেছেন। জীবন নেওয়াই খালেদা জিয়ার হরতাল। মানুষ হত্যা করে পৃথিবীতে কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলন হয় নাই। খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে পোড়া মাটির দেশ করা। এটা গণতান্ত্রিক আন্দোলন নয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্বাচনের জন্যও এ আন্দোলন নয়। আইএসের অংশ খালেদা জিয়া, তিনি এখানে আইএসের মতো অপরাষ্ট্র সৃষ্টি করতে চান। খালেদা জিয়া শান্তির পক্ষে থাকলে বা গণতন্ত্রের পক্ষে থাকলে এতো মানুষ পুড়িয়ে মারতেন না। তার কাছে বাংলাদেশের কোনো মানুষ নিরাপদ নয়। তিনি চান ক্ষমতা।
সৈয়দ আশরাফ প্রশ্ন করে বলেন, তিনি কেন গত নির্বাচনে অংশ নেন নাই? আইনে তো কোনো বাধা ছিল না! তিনি নিজেই নির্বাচনে আসেন নাই। যার জন্য সমগ্র জাতিকে অবরুদ্ধ করেছেন। আগামী নির্বাচন সময়মতোই হবে। যদি সেই নির্বাচনে তিনি না আসেন, তাহলে তার দায়-দায়িত্ব তাকেই নিতে হবে। বাংলার মানুষ এর দায় নেবে না।
হরতাল-অবরোধ বন্ধ করে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে খালেদা জিয়ার প্রতি আহবান জানান তিনি।
বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসের চিত্র তুলে ধরে আশরাফ বলেন, এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা করে শান্তি আনা সম্ভব নয়। তাই সমগ্র বিশ্ব আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে যে, কোনো সন্ত্রাসীর সঙ্গে আলোচনা চলবে না। এই হত্যাকারীদের সঙ্গে পৃথিবীর কোনো রাজনৈতিক দল, সরকার আলোচনা করতে পারে না। আমরাও একই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আলোচনা করলে তাদের প্রশ্রয় দেওয়া হয়। বিশ্ব তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আমরা আইন ও নিয়মে বিশ্বাসী । এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠির (২০ দল) সঙ্গে আলোচনা করতে পারি না। একমাত্র পথ যুদ্ধ ঘোষণা করা।
খালেদার উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি অবরোধ প্রত্যাহার করুন। বাংলাদেশের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার পরিবেশ তৈরি করুন। আমরা জানি, আপনার শক্তি কোথায়, কারা সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিচ্ছে! নির্দেশ আসছে কোত্থেকে, সেটাও জানি। আপনি আপনার কুৎসিত চেহারা আড়াল করতে পারবেন না। আপনার এ কুৎসিত চেহারার জন্যই আপনার পক্ষে কেউ নেই। রাজপথে আন্দোলনে কেউ আসে না। চোরাগোপ্তা হামলা পর্যন্তই আপনি সীমাবদ্ধ। আর এটাও আপনি চালিয়ে যেতে পারবেন না। এ হত্যা বন্ধ করুন।
‘আপনি বলছেন, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কোনো রাষ্ট্র আলোচনা করে না’, কিন্তু প্রতিনিয়তই রাষ্ট্রদূতরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে আলোচনা করছেন, এ বিষয়টি কীভাবে নিচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আশরাফ বলেন, যারা রাষ্ট্রদূত আছেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। তারা কি পরিমাণ আলোচনা করেন বা হয়, এটা আমরা জানি। আপনারা (সাংবাদিক) জানেন না। তাদের সঙ্গে এমন কিছু আলোচনা হয় না, যে নির্বাচনের তারিখ বা সময় দেওয়ার বিষয়। তারা বলেছেন, সহিংসতা বন্ধ করতে।
আশরাফ আরও বলেন, এখানে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারীরা আসেন। যারা নিজ দেশে কোনো মূল্য পান না। আপনারা ৫০টি টিভি চ্যানেল গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। তারা মনে হয়, আপনাদের ত্রাণকর্তা। আমি তাদের বিরোধিতা করায় অনেকে আমাকে বলেছেন, ‘সর্বনাশ! আশরাফ, তুমি কি করলে? আমেরিকায় তো ..... নিয়ে আসবে’। জবাবে বলেছি, আমি ৩০ বছর বিলেতে ছিলাম। তারা কখন ক্ষুব্ধ হয়, আমি জানি।
সুশীল নিয়ে প্রশ্ন করলে আশরাফ বলেন, আপনার ‘সুশীল’ নামটা কে দিল? তারা নিজেরাই নিজেদেরকে সুশীল বলেন। বিজ্ঞরা পত্রিকায় কলাম লেখার মধ্য দিয়ে তাদের পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু কিছুদিন পর পর একেকজন যেভাবে আসেন! এমন ভাব, মনে হয় তিনিই বাংলাদেশের মুরুব্বি।
আশরাফ অভিযোগ করেন, পরিবেশ না থাকায় টকশো’তে পণ্ডিত ব্যক্তিরা আসেন না। তাই, তাদের নিয়ে এসে শূন্যতা পূরণ করে টিভিগুলো। এতে টেলিভিশনের মানও কমছে। পরিবেশ সৃষ্টি করলে অনেকেই আপনাদের টকশো’তে আসবে। নিউজও আগের মতো হয় না। হয়তো খবরের অভাব, না হয় আপনারা সঠিক খবরটা সেভাবে উপস্থাপন করেন না।
বুদ্ধিজীবীদের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, বাংলাদেশটা বুদ্ধিজীবীরা এনে দেন নাই। বুদ্ধিজীবীরা সব সময় সুবিধাবাদী। তাদের বিভিন্ন সংগঠন, এক ব্যক্তি বিভিন্ন সময় একই দাবি নিয়ে আসেন।
তিনি সবাইকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, আপনারা ‘সন্ত্রাসকে না’ বলতে পারেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, স্বাস্থ্য সম্পাদক বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু, শ্রম সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সদস্য এসএম কামাল হোসেন, উপ-প্রচার সম্পাদক অসিম কুমার উকিল প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৫