ঢাকা: আদালতে আত্মসমপর্ণ না করলে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের সংলাপের দাবি আবারো নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেছেন, ওনাকে বলবো, ওনার জন্য ভালো হবে, ওনার বিরুদ্ধে আদালতে সমন জারি হয়েছে। উনি যেন সেখানে গিয়ে সারেন্ডার করেন। ওটা ওনার জায়গা। তা না হলে সরকার কোর্টের আদেশ মানতে বাধ্য।
শনিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনিস্টিটিউট মিলনায়তনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ‘নিখোঁজ’ বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ প্রসঙ্গেও কথা বলেন।
সংলাপ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, উনি সংলাপের কথা বলছেন। ফোন করলে গালি শুনবো, ছেলে মারা যাওয়ার পর ওনার বাড়ি গেলে ঢুকতে দেবেন না। গেটে তালা দিয়ে রাখবেন। সংলাপ কি আকাশে হবে! ওনার সঙ্গে কিসের সংলাপ। যিনি ছোট শিশুকে পুড়িয়ে মারছেন, অন্তঃসত্ত্বা মাকেও পুড়িয়ে মারছেন। যিনি মানুষকে মানুষ হিসেবে গণ্য করেন না। যিনি জঙ্গি নেত্রী। যার হাতে রক্ত, মানুষের পোড়া গন্ধ তার সঙ্গে কিসের সংলাপ?
তিনি বলেন, আলোচনার কথা বলে উনি এখন গলা শুকিয়ে ফেলছেন। অথচ আলোচনার জন্য আমি নিজে ওনাকে ফোন দিয়েছি। আর উনি ফোনে যে ভাষায় কথা বলেছেন, তা সবাই জানে। ওনাকে নির্বাচনে আনতে চেষ্টা করেছি। যে মন্ত্রণালয় চান, সে মন্ত্রণালয় দেবো বলেছি। চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যন্ত দেওয়ার কথা বলেছি। উনি নির্বাচনে আসেননি। উনি নির্বাচনে না এসে যে ভুল করেছেন তার খেসারত এখন জনগণ দেবে কেন?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা পেট্রোল বোমায় মারা গেছে, আহত হয়েছে তাদের প্রতি কোনো সমবেদনা জানাননি। তিনি সমবেদনা জানিয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীদের জন্য। আর যারা পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে মারছে তাদেও সাধুবাদ জানিয়েছেন খালেদা জিয়া। উনি মানুষ হত্যাকারীদেও সাধুবাদ জানান। এ থেকে বোঝা যায় উনি কি চান।
পেশাজীবীদের সহযোগিতা চেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, খালেদা জিয়া মানুষকে কষ্ট দিচ্ছেন। এ কষ্ট তাড়াতাড়ি লাঘবে যা যা করার দরকার সরকার তাই করবে। আমি বেঁচে থাকতে বাংলাদেশের মানুষের জীবন নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেবো না।
‘নিখোঁজ’ বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েকদিন আগে বিএনপি কার্যালয় থেকে সিটি করপোরেশনের লোক দিয়ে ৮ বস্তা ময়লা-আবর্জনা বের করা হয়েছে। বিএনপির এ নেতা গভীর আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে বিবৃতি দিয়ে আসছিলেন। সবাই জানে, তিনি ওখান (বিএনপি কার্যালয়) থেকে বিবৃতি দিয়ে আসছেন। এখন ৮ বস্তা ময়লা-আর্বজনার সঙ্গে তাকেও পাচার করে দেওয়া হয়েছে কি-না জানি না। আমরা তাকে খুঁজছি। পুলিশ খুঁজে পেলেই তাকে গ্রেফতার করবে।
খালেদা জিয়ার অফিসে অবস্থান করার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ওনার মাথায় কে ঢুকিয়েছে এভাবে তিনি কিছু করতে পারবেন। জানি না, উনি ওখানে বসে কি মহাকাজ করছেন। বাড়ি ছেড়ে অফিসে গিয়ে বসে আছেন। জানি না সেখানে কি মধু আছে।
খালেদা জিয়ার আন্দোলনের ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনি হরতাল-অবরোধের ডাক দিয়েছেন। তার দলের লোকেরাইতো তার কর্মসূচি মানেন না। তাদের অফিস-কারখানা সবই চালু আছে। তারা রাস্তায় গাড়িতে করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যাদের দিকে তাকিয়ে ছিলেন তাদের কেউ সাড়া দেননি। উত্তর-পশ্চিম কোনো দিক থেকেই সাড়া আসেনি।
খালেদা জিয়ার মিথ্যাচারে হিটলারের মন্ত্রী গোয়েবলসও লজ্জা পেতেন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবাদ সম্মেলনে উনি বক্তব্য শুরু করেছেন মিথ্যাচার দিয়ে। উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপিয়েছেন তিনি। পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ মারছেন উনি, আর দোষ চাপাচ্ছেন আমাদের ওপর। হিটলার বেঁচে থাকলে ওনার মিথ্যাচার দেখে হিটলারের মন্ত্রী গোয়েবলেসও লজ্জা পেতেন। বলতেন, এ যে আমার মা।
সরকার মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে- খালেদা জিয়ার এমন অভিযোগের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মিডিয়া নাকি নিয়ন্ত্রিত। ফেরারি আসামি হয়েও গতকাল (শুক্রবার) উনি সংবাদ সম্মেলন করে কথা বলেছেন। এতো সাংবাদিক সেখানে গেলেন। মিডিয়াগুলো তা সরাসরি প্রচারও করেছে। মিডিয়াগুলো একজন ফেরারি আসামীর বক্তব্য প্রচার করেছে। সরকার তো বাধা দেয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বিএনপি কার্যালয়ে গেলে সেখানে গেটে তালাবদ্ধ করে রাখার বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওনার ছেলে মারা গেলো। সব কিছু ভুলে আমি তাকে সান্ত্বনা দিতে গেলাম। সেখানে তারা গেটে তালা মেরে রাখলো। আমাদের ঢুকতে দেয়নি। আমি চাইলে তখনই ব্যবস্থা নিতে পারতাম। কিন্তু নেইনি। একজন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করার এতো বড় দুঃসাহস পায় কোথায়?
বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে সরকারের সফলতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া শুধু ব্যর্থতা দেখেন। ওনার চোখের পাওয়ারটা একটু ঠিক করতে হবে। অবশ্য ওনার মতো জনগনের অর্থ লুট করা। ওনার মতো ছেলেদের মানিলন্ডারিং করে টাকা পাচার করতে শেখাইনি। এটাই হয়তো ওনার কাছে ব্যর্থতা। উনি কি এটাকেই সফলতা মনে করেন?
পরীক্ষার সময় ২০ দলীয় জোটের হরতাল-অবরোধের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা ১৫ লাখ পরীক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে চাচ্ছে। পরীক্ষার শুরুর দিন থেকে প্রতিটি কর্মদিবসে অবরোধের সঙ্গে তারা হরতালও দিচ্ছে।
বর্তমান সংসদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বের কাছে এ সংসদ বৈধ। শুধু একজনের কাছে এ সংসদ বৈধ না। এই পার্লামেন্ট বৈধ না হলে সারা বিশ্ব স্বীকৃতি দিতো না। আইপিইউ ও সিপিইউতে বাংলাদেশ সংসদের প্রার্থীরা নির্বাচিত হতেন না।
পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি বিচারপতি এএফএম মেসবাহ উদ্দিনের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বিএমএ সভাপতি ডা. মাহমুদ হাসান, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের সভাপতি আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের মহাসচিব ডা. কামরুল হাসান খান প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০২ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০১৫/আপডেট: ১৯৪৯