ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

‘সালাহউদ্দিন সেখানে ছিলেনই না!’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৫
‘সালাহউদ্দিন সেখানে ছিলেনই না!’ সালাহউদ্দিন আহমেদ

ঢাকা: বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে রাজধানীর উত্তরার যে বাসা থেকে গত ১০ মার্চ রাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ ও বিএনপি, সেই বাসায় সেই রাতে তিনি ছিলেন না বলে মনে করছে পুলিশ। সালাহউদ্দিনের যে বাসা থেকে ‘নিখোঁজ’ হওয়ার কথা বলা হচ্ছে ওই বাসা থেকে সে সময় রায়হান নামে এক ব্যক্তি বের হয়েছেন বলেও পুলিশি তদন্তে জানা গেছে।



উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি রফিকুল ইসলামের দেওয়া এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রোববার (১৫ মার্চ) হাইকোর্টের রুলের জবাবে পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া এ প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেছেন। তিনি মোট পাঁচটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।

পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই বাসার মালিক মৃত ড. সিরাজউদ্দোলার মেয়ের পক্ষে ধানমণ্ডির রেজা নামে এক ব্যক্তি বাসাটি পরিচালনা করতেন। বাসার নিজ তলার পশ্চিম পাশে গ্যারেজ ও পূর্বপাশে ব্ল্যাকবেরি চকলেটের গোডাউন। দ্বিতীয় তলার পূর্ব পাশে থাকেন করিম নামে এক ব্যক্তি, পশ্চিম পাশে থাকেন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি হাবিব হাসনাত। তৃতীয় তলার পূর্ব পাশে থাকেন ইঞ্জিনিয়ার খসরু জুয়েল ও তার স্ত্রী। পশ্চিমে নেসলে কোম্পানির ম্যানেজার মেজর (অব.) হাসিব ও তার স্ত্রী, সন্তানরা। দুই দারোয়ার আশরাফুল ও আক্তার থাকেন এ বাসায়।

পুলিশের পর্যবেক্ষণকালে দ্বিতীয় তলার পশ্চিম পাশের ফ্লাট বন্ধ পাওয়া গেছে। দারোয়ান আক্তার জিজ্ঞাসাবাদে জানান, ঘটনার ৪ দিন আগে হাসনাত স্ত্রীসহ বাসা থেকে চলে যান। যাওয়ার সময় রায়হান নামে এক মেহমানকে রেখে যান তারা। এটা দারোয়ানদেরও বলে যান।

তিনি বলেন, ঘটনার দিন ১০ মার্চ রাত ৯টার দিকে ৪/৫ জন হাসনাতের বাসায় আসেন। ওই ফ্লাটের দরজা নক করার পর ভেতের ঢোকেন তারা। আধা ঘণ্টা পর রায়হান তাদের সঙ্গে গাড়িতে চলে যান। ওই লোকটি সালাউদ্দিন কি না দারোয়ানরা সেটা জানেন না।

বাসায় আসা লোকদের শরীরে কোনো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক ছিলো না। অস্ত্রও দেখা যায়নি। বাইরে অপেক্ষমাণ গাড়িটিকেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ির মতো মনে হয়নি। যাওয়ার সময় রায়হানের হাতে হাতকড়া ছিলো না। তাকে জোর করা হচ্ছে বলেও মনে হয়নি।

অন্য ভাড়াটিয়ারাও পুলিশকে জানান, এখান থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ কাউকে ধরে নিয়ে গেছে এমন তথ্য তাদের জানা নেই। এমনকি হাবিব হাসনাত বাসায় মেহমান রেখে কোথায় গেছেন তাও তারা জানেন না। হাবিব হাসনাতের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ব্যাংকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি ছুটিতে আছেন। এমতাবস্থায় কোনোভাবেই নিশ্চিত হওয়া যায় না যে ওই বাসায় সালাউদ্দিন ছিলেন বা তাকে অপহরণ করা হয়েছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে জানান, প্রতিবেদন দাখিল করেছে পাঁচটি বাহিনী। সেগুলো হচ্ছে পুলিশ সদর দফতর, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), এসবি, র‌্যাব ও সিআইডি। এগুলোর মধ্যে সালাহউদ্দিন আহমেদের খোঁজ পেতে পুলিশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। অন্য চার বাহিনী জানিয়েছে, তাদের হেফাজতে সালাহউদ্দিনকে গ্রহণ করা হয়নি।

আবেদনকারী বাদীপক্ষে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এ প্রতিবেদনগুলো আমাদেরকে দেওয়া হয়নি। আমরা এসব প্রতিবেদনের জবাব দেবো।

বাদীপক্ষকে প্রতিবেদনগুলো দিতে নির্দেশ দিয়ে বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের হাইকোর্ট বেঞ্চ জানান, সোমবারের (১৬ মার্চ) বিষয়টি আবারও কার্যতালিকায় আসবে।

রোববারের মধ্যে কেন খুঁজে বের করে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে গত বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) রুল জারি করেন এ বেঞ্চ। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সালাহউদ্দিনকে হাজিরের নির্দেশনা চেয়ে তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদের করা ফৌজদারি আবেদনের শুনানি শেষে এ রুল জারি করা হয়।

ওইদিন সকালে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় হাসিনা আহমেদের পক্ষে আবেদনটি দাখিল করেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। তিনি ছাড়াও আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও এজে মোহাম্মদ আলী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।

আবেদনে বিবাদী করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি ও ডিএমপি’র কমিশনারকে।

এতোদিন আত্মগোপনে থেকে বিএনপির পক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করে আসছিলেন সালাহউদ্দিন। গত ১১ মার্চ থেকে তার পরিবার ও বিএনপি অভিযোগ তুলেছে, আগেরদিন ১০ মার্চ রাতে তাকে ধরে নিয়ে গেছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

তবে পুলিশ, র‌্যাব বা গোয়েন্দা বাহিনীর কেউই সালাহউদ্দিন আহমেদকে আটকের দায় স্বীকার করেননি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া উইংয়ের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জাহাঙ্গীর সরকার বলেন, এ ধরনের কোনো খবর আমাদের কাছে নেই। মিডিয়া উইংয়ের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমানও বলেন, আমরা সালাহউদ্দিনকে আটক করিনি। কেউ আটক করে আমাদের কাছে হস্তান্তরও করেননি।

সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ১০ মার্চ রাতে পুলিশ ও র‌্যাবের লোকেরা সালাহউদ্দিন আহমেদকে উত্তরার বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছেন।

১১ মার্চ রাতে সালাউদ্দিন আহমেদের ‘নিখোঁজ’ হওয়া প্রসঙ্গে গুলশান ও উত্তরা (পশ্চিম) থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করতে গিয়েছিলেন তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ, স্ত্রীর বড় বোন এবং তার ছেলে। তবে দুই থানাই  জিডি গ্রহণ করেনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতেও সালাহউদ্দিন আহমেদকে ‘আটক’ করে নিয়ে যাওয়ার দাবি করা হয়েছে।

বিবৃতিতে নজরুল ইসলাম খান বলেন, গত ১০ মার্চ রাত ১০টার পর উত্তরার একটি বাসা থেকে পুলিশ, ডিবি ও র‌্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ২০/৩০ জনের একটি দল সালাহউদ্দিন আহমেদকে তার উত্তরার বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। একই সঙ্গে বাসার একজন পুরুষ ও একজন নারী কর্মীকেও ধরে নিয়ে গেছে। এরপর থেকে তার পরিবারের সদস্য ও রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এখন পর্যন্ত তাকে আদালতে হাজির করা হয়নি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে তাকে গ্রেফতারের কথাও প্রকাশ করা হয়নি। এতে তার পরিবার ও রাজনৈতিক সহকর্মীরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

অবিলম্বে সালাহউদ্দিনের ‘মুক্তি’ দাবি করা হয় বিবৃতিতে।

একই অভিযোগ তুলে সালাহউদ্দিনের ‘মুক্তি’ দাবি করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৫

** কোনো বাহিনীর কাছে খোঁজ নেই সালাহউদ্দিনের

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।