ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

খাঁ খাঁ খালেদার কার্যালয়!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০১ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৫
খাঁ খাঁ খালেদার কার্যালয়! ছবি: কাশেম হারুন / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: কয়েকজন নেতাকর্মী সঙ্গে নিয়ে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান করছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। কার্যালয়ের প্রধান ফটক ও দুই ধারে শিফট অনুযায়ী পাহারা দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা।

আর সেখানকার সার্বিক তথ্য সংগ্রহে ২৪ ঘণ্টা কার্যালয়ের সামনের সড়কে অপেক্ষা করছেন সংবাদ কর্মীরা।
 
কিছু দিন আগেও এমনই চিত্র ছিল গুলশান ২ নম্বরের ৮৬ ও ৯০ নম্বর রোডের মাঝে অবস্থিত খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ের। সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পদচারণায় ২৪ ঘণ্টায় মুখর হয়ে থাকতো এলাকাটি। গত ৩ জানুয়ারি থেকে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়া এবং খালেদা জিয়ার কার্যলয়টির ভেতরে অবস্থান নেওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
 
তবে, কার্যালয়টির সামনের এ চিত্র সম্পূর্ণ বদলে গেছে। দিনের বেলায় এলাকাটিতে কিছু সংবাদকর্মী আনাগোনা করলেও রাতের বেলায় এখন একজন খুঁজে পাওয়াও দুষ্কর। আর পুলিশ, ডিবি ও এনএসআই’র কিছু সদস্য আনাগোনা করলেও তার সংখ্যা হাতেগোনা কয়েকজন।
 
রোববার (১৫ মার্চ) দিবাগত রাতে কার্যালয়ের আশপাশ ঘুরে দেখা যায়, কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে আড়াআড়ি ভাবে রাখা হয়েছে সিএসএফ’র একটি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-ঠ-১৩-০৭৭০)। ফটকটির সঙ্গে লাগানো পকেট গেটের সামনে চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসে আছেন ডিবি’র তিন সদস্য। কার্যালয়ের ভেতরে কেউ ঢুকলে খাতায় তার নাম ঠিকানা তালিকাভুক্ত করছেন তারা।
 
জানতে চাইলে নাম-ঠিকানা তালিকাভুক্ত করার দায়িত্বে থাকা ডিবির সদস্য নিজেকে রুহুল আমিন পরিচয় দিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, রোববার কার্যালয়ে ৮ থেকে ১০ জন মানুষ যাতায়াত করেছেন। এরা প্রতিদিনই কার্যালয়ের ভেতরে ঢোকেন এবং বের হন। নিয়মিত যারা যাতায়াত করেন তাদের বাইরে নতুন কেউ কার্যালয়ে আসেন নি বলে জানান রুহুল আমিন।
 
কার্যালয়ে উত্তর দিকে প্রাচীরের সঙ্গে লাগানো একটি বেঞ্চে বসে থাকতে দেখা গেছে পাঁচ পুলিশ সদস্যকে। ৮৬ ও ৯০ নম্বর রোডে পায়চারি করতে দেখা যায় কয়েকজন এনএসআই সদস্যকে। কার্যালয়ের ভেতরে খালেদা জিয়া, জিয়াউর রহমান, তারেক জিয়া ও আরাফাত রহমান কোকোর কিছু ছবি ঝুলছে।
 
জনমানবহীন কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় দু’টি কুকুর ঘুমিয়ে থাকতে দেখা যায়। গ্রামের প্রভু (মালিক) ভক্ত কুকুরের মতোই যেনো কার্যালয়টি পাহারা দিচ্ছেন তারা। হঠাৎ আমাদের অটোরিকশাটি তাদের কাছে আসতেই জেগে উঠলো তারা। কিছুক্ষণ পায়চারি করে আবার রাস্তার উপরেই ঘুমিয়ে পড়লো তারা।
 
কার্যালয়ের সামনে ঘণ্টা দুই অবস্থান করে একজন মাত্র সংবাদকর্মী খুঁজে পাওয়া যায়। একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে কর্মরত ওই সাংবাদিক বলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত হন। সে সময় একটি টেলিভিশনের দু’জন সংবাদকর্মী ছিলেন। তবে ১২টার পরে তিনি আর কোনো সংবাদকার্মীকে দেখেন নি। অথচ ১৫ থেকে ২০ দিন আগেও তিনি এ এলাকায় দায়িত্ব পালন করেছেন। সে সময়ও সংবাদকর্মীদের পদচারণা বেশ ছিল।  
 
এদিকে কার্যালয়ের সামনে বিভিন্ন সময় দায়িত্ব পালন করা সংবাদকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৩ জানুয়ারি থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত কার্যালয়ের সামনের রাস্তা থেকে ঘণ্টায় ঘণ্টায় সরাসরি সংবাদ সম্প্রচার করেন টেলিভিশনের সংবাদকর্মীরা। এরপর থেকেই গুলশান কার্যালয় ঘিরে সরাসরি সংবাদ সম্প্রচার থেকে অনেকটাই সরে আসেন তারা।
 
তবে, শিফট অনুয‍ায়ী সংবাদকর্মীদের দায়িত্বপালন অব্যাহত থাকে। আর চলতি মাসের প্রথম থেকেই এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে থাকে। সংবাদকর্মীদের কাছে ধীরে ধীরে গুরুত্ব কমতে থাকে কার্যালয়টির। বর্তমানে দিনের বেলা কয়েকজন সংবাদকর্মী কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিলেও রাতে তেমন কাউকে পাওয়া যায় না।
 
একই অবস্থা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। কয়েকজন পুলিশ সদস্য এ এলাকায় অবস্থান নিলেও অলস সময় কাটছে তাদের। ফলে খোশগল্প অথবা প্রাচীরের সঙ্গে বেঞ্চে হেলান দিয়ে ঝিমুনির মাধ্যমে সময় কাটছে তাদের।  
 
কিছুদিন আগেও কার্যালয়ের প্রধান ফটক ঘিরে কড়া নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছিলেন পুলিশ সদস্যরা। শিফট অনুযায়ী অবস্থান নিয়ে প্রধান ফটকের সামনে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতেন নারী পুলিশ সদস্যরা। আর ফটকের দুই পাশে লাইন ধরে একপাশে দাঁড়াতেন পুরুষ পুলিশ সদস্য এবং অন্যপাশে নারী পুলিশ সদস্যরা।  
 
বর্তমানে কার্যলয়টির সামনের এ চিত্র অনেকটাই কল্প কাহিনীতে পরিণত হয়েছে। সংবাদকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আনাগোনা কমে যাওয়া অনেকটাই জনমানব শূন্য হয়ে পড়েছে এলাকাটি। আর কিছুদিন আগেও জমজমাট থাকা কার্যালয়টির সামনের রাস্তা এখন রাতের বেলায় খাঁ খাঁ রুপ নিয়েছে।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০৫০০ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৫ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।