ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

এতিমদের টাকা মেরেই আসামি খালেদা

অশোকেশ রায়, অ্যাক্টিং আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৫
এতিমদের টাকা মেরেই আসামি খালেদা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তার এতিম তহবিল থেকে দু’টি দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেই দুই প্রতিষ্ঠান ‘জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট’ ও ‘জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’ এর নামে ‘প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল’ থেকে নিয়ে আত্মসাত করেছিলেন সোয়া পাঁচ কোটি টাকা।



দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তাই স্বভাবতই আসামি হয়েছেন তিনি। সঙ্গে  আছেন তার বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আরো ছয়জন।

প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলে একটি বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকা অনুদান হিসেবে জমা হয়েছিল সে সময়, যা পর্যায়ক্রমে সুদে-আসলে দাঁড়ায় ৫ কোটি ৪৮ লাখ ৬৬ হাজার ৫০০ টাকা।

এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল থেকে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অ্যাকাউন্টে এবং ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের জমি কেনার জন্য দেওয়া হয়।  

পরে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট থেকে ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের জমি কেনার জন্য পরিশোধিত ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা মিলিয়ে মোট দুর্নীতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ কোটি ২৬ লাখ ১৪ হাজার ৬৭১ টাকা। এ অভিযোগেই মামলা দু’টির উৎপত্তি।   

দু’টি মামলারই বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বর্তমান উপ-পরিচালক (তৎকালীন সহকারী পরিচালক) হারুন-অর রশীদ।

যেভাবে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অভিযোগে বলা হয়, ১৯৯১-৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে খালেদা জিয়ার পক্ষে সোনালী ব্যাংকের রমনা শাখায় ‘প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল’ নামে একটি সঞ্চয়ী হিসাব খোলা হয়। যার চলতি হিসাব নম্বর ৫৪১৬। ওই অ্যাকাউন্টে ১৯৯১ সালের ৯ জুন এক সৌদি দাতার পাঠানো ইউনাইটেড সৌদি কর্মাশিয়াল ব্যাংকের ডিডি নম্বর ১৫৩৩৬৭৯৭০ মূলে ১২ লাখ ৫৫ হাজার ইউএস ডলার যার মূল্য তৎকালীন বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে বাংলাদেশি টাকায় ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকা অনুদান হিসেবে জমা হয়।

১৯৯১ সালের ৯ জুন থেকে ১৯৯৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খালেদা জিয়া সোনালী ব্যাংকের ওই অ্যাকাউন্টে জমাকৃত এ অর্থ কোনো এতিমখানায় দান করেননি। এ সময়ের মধ্যে তারেক রহমান তার ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকো ও জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট গঠন করেন।

তবে এ ট্রাস্ট গঠনের প্রক্রিয়ায় আরাফাত রহমান কোকোর কোন স্বাক্ষর না থাকায় তাকে এ মামলায় আসামি করা হয়নি।

১৯৯৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর গুলশান সাব রেজিস্ট্রি অফিসে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নাম নিবন্ধন করা হয়। যার ঠিকানা হিসেবে সেনানিবাসের ৩ শহীদ মঈনুল রোডের বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়। এ সময় তারেক রহমানকে দি অথর বা দি সেটেলর অব দি ট্রাস্ট (ট্রাস্ট সৃষ্টিকারী) নিয়োগ করা হয় এবং মমিনুর রহমান এ ট্রাস্টের ট্রাস্টি হন।

১৯৯৩ সালের ১৩ নভেম্বর খালেদা জিয়ার পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলের সোনালী ব্যাংকের রমনা শাখার তৎকালীন হিসাব নম্বর ৫৪১৬ এ জমা থাকা অনুদানের মধ্যে ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের একই ব্যাংকের গুলশানের নিউনর্থ সার্কেল শাখার এসটিডি হিসাব নম্বর-৭ মূলে হিসাব নম্বর ৭১০৫৪১৬৪ এ ট্রান্সফার করা হয়।

১৯৯৩ সালের ৪ ডিসেম্বর (চেক নম্বর ৪৮৮২৪০১) ৪ লাখ টাকা তুলে বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার দাড়াইল মৌজায় ১৭টি দলিল মূলে ২ দশমিক ৭৯ একর জমি ক্রয় দেখানো হয়।

এরপর ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত অনুদানের বাকি টাকা অন্য কোনো স্থাপনা বা দুস্থদের কল্যাণে ব্যয় না করায় ওই হিসাবে ২০০৬ সালের ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সুদসহ জমা পড়ে ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৯ হাজার ৭৫৭ টাকা।

তারেক রহমান এবং স্ট্রাস্টি মমিনুর রহমানের যৌথ স্বাক্ষরে ২০০৬ সালের ১২ এপ্রিল, ১৫ জুন এবং ৪ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে সর্বমোট ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা প্রাইম ব্যাংকের গুলশান শাখায় এফডিআর খোলার জন্য হস্তান্তর করা হয়।

অভিযোগ অনুযায়ী, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ৫০ লাখ টাকা কাজী সলিমুল হকের নামে ২০০৬ সালের ১২ এপ্রিল জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অ্যাকাউন্ট থেকে ট্রান্সফার করা হয়। অভিযোগে আরো বলা হয়, এই শাখায় কাজী সলিমুল হকের নামে পরবর্তীতে ২ কোটি টাকার আরো দু’টি এফডিআর খোলা হয়। যা তিনি নিজ নামেই ট্রান্সফার করেন। এছাড়া ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের ছেলে সৈয়দ আহমেদের নামে একটি ১ কোটি টাকা এবং দু’জনের যৌথ নামে আরেকটি ১ কোটি টাকার এফডিআর খোলেন কাজী সলিমুল হক। তাদের মধ্যে সৈয়দ আহমেদ এখন মৃত।

এই দুই এফডিআর থেকে গিয়াস উদ্দিন আহমেদের এফডিআরে ট্রান্সফার হয়। এর কিছুদিন পরই গিয়াস উদ্দিন আহমেদ তার এফডিআরের এক কোটি টাকা ভেঙ্গে ৫০ লাখ টাকার ২টি এফডিআর করেন। এরপর আবার সেই এফডিআর ভেঙ্গে শরফুদ্দিনের অ্যাকাউন্টে ৬টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফার করেন। ট্রাস্টের কাজে শরফুদ্দিন আহমেদ ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা তুলে নেন।

আর এই ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগেই দায়ের করা হয় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের ৩ জুলাই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে রমনা থানায় এ মামলা দায়ের করে দুদক। এতিমদের সহায়তার জন্য একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা অনুদানের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়। বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা হারুন-অর রশীদ ২০১০ সালের ৫ আগস্ট খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন।

চার্জশিটভুক্ত ছয় আসামির মধ্যে খালেদা জিয়াসহ মোট তিনজনের বিরুদ্ধে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। অন্য দু’জন হচ্ছেন- মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ। তারেক রহমান জামিনে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে আছেন।   বাকি দু’জন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক। তাদের বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।

যেভাবে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা
নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অর্থ লেনদেনের অভিযোগ আনা হয় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অভিযোগে বলা হয়, খালেদা জিয়া ‘জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’ এর নামে ২০০৫ সালে ঢাকার কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ৪২ কাঠা জমি কেনার সময় জমির মূল্য দেখিয়েছিলেন ৬ কোটি ২৫ লাখ ৭ হাজার টাকা। কিন্তু জমির মূল্য পরিশোধের সময় জমির মালিক সুরাইয়া খানমকে প্রদান করা হয়েছিলো ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অর্থাৎ জমির মূল্যের চাইতে জমির মালিককে ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা বেশি প্রদান করা হয়েছে। যার কোনো উৎস ট্রাস্টটি দেখাতে পারেনি।

অন্যদিকে সোনালী ব্যাংকের রমনা শাখায় খালেদা জিয়ার পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলের চলতি হিসাব নম্বর ৫৪১৬ বরাবর যে প্রায় ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার বাংলাদেশি টাকা অনুদান হিসেবে এসেছিলো সেখান থেকে একই ব্যাংকের গুলশানের নিউনর্থ সার্কেল শাখায় এসটিডি হিসাব নম্বর-৭ মূলে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের হিসাব নম্বর ৭১০৫৪১৬৪ এ ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা হস্তান্তর করা হয়েছিল।

এরপরও খালেদা জিয়ার পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলের অ্যাকাউন্টে জমা ছিল ২ কোটি ১১ লাখ ৪৭ হাজার ৭১৬ টাকা যা সোনালী ব্যাংকের রমনা শাখার অ্যাকাউন্টে জমা থাকে। ২০০৫ সাল পর্যন্ত এই ২ কোটি ১১ লাখ ৪৭ হাজার ৭১৬ টাকা টাকা সুদে-আসলে দাঁড়ায় প্রায় ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা।

কাকরাইলের সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে জমি কেনার সময় যখন ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়, তখন জমি কেনা বাবদ এই মূল্যের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের রমনা শাখার অ্যাকাউন্ট থেকে বাকি থাকা ওই ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। আর এ টাকাটাই অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে পরিশোধ করার নামে আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়।

২০১১ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় এ মামলা দায়ের করে দুদক। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা হারুন-অর রশীদ। ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।

অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন- খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান জামিনে আছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু থেকেই পলাতক। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি রয়েছে।

মামলার বর্তমান অবস্থা
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা ওই দুই দুর্নীতি মামলার বিচার চলছে রাজধানীর বকশিবাজারে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের অস্থায়ী আদালতে।

গত বছরের ১৯ মার্চ দুই দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়। খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে চার্জ গঠন করা হয় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অপর আট আসামির বিরুদ্ধেও।
 
বিচারিক আদালতে বর্তমানে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। মামলা দু’টির পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ৫ এপ্রিল। অন্যদিকে এ আদালত পরিবর্তন ও বিচারিক আদালতের জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা স্থগিত চেয়ে উচ্চ আদালতে করা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটির পরে।

অবকাশকালীন ছুটি শুরু হচ্ছে ১৭ মার্চ আর শেষ হবে ৩১ মার্চ। ছুটি শেষে ১ অথবা ২ এপ্রিল শুনানি শুরু হতে পারে বলে জানান আদালত।

গত ১২ মার্চ শুনানির দিন ধার্য থাকলেও তা পিছিয়ে দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ শুনানি নেবেন।

গত ২৮ জানুয়ারি বিচারিক আদালতের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে আদালত পরিবর্তনের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদার আইনজীবীরা। পরে এ আবেদনের সম্পূরক হিসেবে বিচারিক আদালতের জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা স্থগিত চেয়েও আবেদন জানানো হয়। আবেদনে দুর্নীতি মামলা দু’টির বিচারিক কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ চেয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়। এ রুল বিচারাধীন থাকাকালে গ্রেফতারি পরোয়ানা স্থগিত চেয়েছেন আসামিপক্ষ।  

খালেদার আইনজীবীরা জানান, একই দিনে সব আবেদনের শুনানি করবেন তারা।

এর আগে শুনানিতে দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত থাকায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন বিচারিক আদালত। গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহার, আদেশ সংশোধন ও জামিন বহাল রাখতে খালেদার আবেদনের শুনানি শেষে গত ৪ মার্চ ওই গ্রেফতারি পরোয়ানা বহাল রাখা হয়েছে।

খালেদার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণসহ মামলা দু’টির কার্যক্রম আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি করেছেন আদালত।

ওইদিন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার দ্বিতীয় সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করার কথা। এর আগে এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদ।

৪ মার্চের আদেশে মামলাটির অপর আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমান আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে হাজিরা দেওয়ার অনুমতিও দিয়েছেন আদালত।

নানা কারণ দেখিয়ে মামলা দু’টির শুনানির জন্য নির্ধারিত ৬৫ কার্যদিবসের মধ্যে ৫৮ কার্যদিবসই অনুপস্থিত থেকেছেন খালেদা জিয়া, হাজির হয়েছেন মাত্র ৭ দিন। কোনো আসামিই আদালতে না থাকায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী দুদকের উপ-পরিচালক হারুন-অর-রশিদকে আসামিপক্ষের জেরাও বাতিল করেছেন আদালত। তবে পরবর্তী ধার্য তারিখ ৫ এপ্রিল তারেক রহমানের পক্ষে এ সাক্ষীকে জেরার সুযোগ নিতে পারবেন তার আইনজীবী।

গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সুপারিশে আইন মন্ত্রণালয় এ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়ের বদলে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ হিসাবে নিয়োগ দেয় আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবু আহমেদ জমাদারকে। আগের বিচারকের প্রতিও অনাস্থা জানিয়ে হাইকোর্টে আবেদন জানানো ছাড়াও তার আদালতে বিচারিক কার্যক্রম ব্যাহত করতে এজলাসকক্ষেই বিশৃঙ্খলা ও হই-হট্টগোল এবং বিচারকের প্রতি কটূক্তি করে আসছিলেন খালেদার আইনজীবীরা।

এ পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতির পরামর্শে বিচারক বদল করা হয়।

গত বছরের ৭ মে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলা ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ সংক্রান্ত বিশেষ মামলার বিচারিক কার্যক্রম ঢাকার মেট্রোপলিটন দায়রা জজ আদালত ভবনের পরিবর্তে ঢাকা মহানগরের বকশীবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালত ভবনে চালানোর আদেশ জারি করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।