ঢাকা: হাইকোর্টের আদেশ দাখিল সাপেক্ষে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সকল আসামির বিরুদ্ধে পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়ার লক্ষ্যে আগামী ১৩ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন বিচারিক আদালত। কারাগারে আটক এ মামলার তিন আসামি ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে ওইদিন হাজির করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-২ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা এ মামলা চলছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। মামলাটি বাতিলে খালেদা জিয়ার আবেদনের ভিত্তিতে এ স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়।
সোমবার (১৬ মার্চ) এ বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশ দাখিলের দিন ধার্য ছিল।
আগামী ৫ এপ্রিল হাইকোর্ট এর রায় দেবেন বলে আদালতকে জানান আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন মেজবাহ। এরপর ১৩ এপ্রিল নতুন দিন ধার্য করে আদালতের বিচারক হোসনে আরা বেগম ওইদিন হাইকোর্টের আদেশ দাখিল সাপেক্ষে মামলার পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে বলে জানান। সকল আসামিকেই হাইকোর্টের আদেশ দাখিল এবং কারাগারে আটক তিন আসামিকে হাজির করার আদেশ দেন আদালত।
জরুরি অবস্থার সময়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ও তার মন্ত্রিসভার সদস্যসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা দায়ের করে। শাহবাগ থানায় মামলাটি করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. সামছুল আলম। মামলায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতি হয়ে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির অনুমোদন দিয়ে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়েছিল। এতে চারদলীয় জোট সরকারের স্থানীয় সরকার, সমবায় ও পল্লী উন্নয়নমন্ত্রী আবদুল মান্নান ভূঁইয়া (মরহুম), অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান (মরহুম), শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তথ্যমন্ত্রী শামসুল ইসলাম, কৃষিমন্ত্রী এম কে আনোয়ার, সমাজকল্যাণমন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছিল।
এ মামলায় স্থায়ী জামিনে রয়েছেন খালেদা জিয়া।
কনসোর্টিয়াম অব চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনকে (সিএমসি) বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির অনুমোদন দিয়ে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতির অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন দুদকের উপ-পরিচালক শামসুল আলম। একই বছরের ৫ অক্টোবর আদালতে এ মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, কয়লা উত্তোলনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা সিএমসির সঙ্গে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি করায় সরকারের প্রায় ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
পরে এ মামলা দায়েরের বৈধতা চ্যালেঞ্জ হাইকোর্টে রিট করেন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের ১৬ অক্টোবর বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি ফরিদ আহাম্মদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি মামলার কার্যক্রম তিন মাস স্থগিত করেন। একই সঙ্গে মামলা দায়ের ও কার্যক্রম কেন অবৈধ ও বেআইনি হবে না জানতে চেয়ে সরকারকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়ে রুল জারি করেন। পরে সময়ে সময়ে মামলার স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানো হয়।
হাইকোর্টের ওই স্থগিতাদেশ আপিলেও বহাল থাকায় বর্তমানে স্থগিত রয়েছে মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম।
সম্প্রতি দুদক মামলাটি সচলের উদ্যোগ নিয়ে হাইকোর্টে রুল নিষ্পত্তির আবেদন জানায়। রাষ্ট্রপক্ষ ইতোমধ্যেই রুল শুনানিতে অংশ নিয়েছেন।
রোববার (১৫ মার্চ) এ রুলের রায়ের দিন ধার্য থাকলেও আসামিপক্ষের আবেদনে আগামী ৫ এপ্রিল পুনর্নির্ধারণ করেছেন বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। এর মধ্যে আসামিপক্ষকে শুনানি শেষ করতে বলা হয়েছে।
দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৩ থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। তবে আসামিপক্ষ শুনানিতে অংশ নেননি। গত ৪ মার্চ তারা সময়ের আবেদন জানালেও আদালত তা নামঞ্জুর করেন।
তিনদিনের রুল শুনানি শেষে গত ৫ মার্চ এর রায় দেওয়ার জন্য ১০ মার্চ দিন ধার্য করেছিলেন আদালত। তবে এর আগেই আসামিপক্ষের আবেদনে গত ৮ মার্চ রায়ের দিন পিছিয়ে ১৫ মার্চ পুনর্নির্ধারণ করা হয়। ১৫ মার্চ আসামিপক্ষের আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী শুনানি করতে এবং রায়ের দিন পেছাতে সময়ের আবেদন জানালে তা মঞ্জুর করেছেন আদালত।
অন্যদিকে এ মামলার রুল শুনানির জন্য হাইকোর্টের বেঞ্চ বদলেরও আবেদন জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন গত ১১ মার্চ আদালত পরিবর্তন করে মামলাটি অন্য আদালতে বদলির জন্য হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন জানান।
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন আবেদনে বলেছেন, তারা গত ৪ মার্চ রুলের ওপর শুনানি পেছানোর আবেদন জানালেও আদালত তাদের কথা শোনেননি। দুদকের আইনজীবীর শুনানি নিয়েই গত ৫ মার্চ আদেশের দিন ১০ মার্চ ধার্য করেছিলেন। পরে ৮ মার্চ আমাদের পক্ষে ব্যারিস্টার রফিক-উল হকের আবেদনে রায়ের দিন পিছিয়ে ১৫ মার্চ ধার্য করা হয়েছে।
খালেদা জিয়া এ বেঞ্চে ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কায় বেঞ্চ পরিবর্তনের আবেদন জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৫, আপেডেট: ১৫০৩ ঘণ্টা