রাজশাহী: ২০ দলের অবরোধ-হরতাল আর তোয়াক্কা করছে না রাজশাহীবাসী। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে তীব্র যানজট এখন নিত্য দিনের দৃশ্য।
চলমান অবরোধ-হরতালে এখন আর নূন্যতম সাড়া নেই কারও। অনেক আগেই আত্মগোপনে চলে গেছেন বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতারা। তাই ভোঁতা কর্মসূচি নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মাঠপর্যায়ের কর্মীরা। আর সব উপেক্ষা করে রাজশাহী এখন প্রাণচঞ্চল।
নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছেন রাজশাহীর ব্যবসায়ীরাও। ফের চাঙা হয়ে উঠতে শুরু করেছে উত্তরাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য। রাজশাহী নগরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা আর হরতাল-অবরোধ মানবেন না। যতই ঝুঁকি আসুক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখবেন।
মহানগর কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন দিপক বাংলানিউজকে জানান, অযৌক্তিকভাবে লাগাতার হরতাল-অবরোধে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে তাদের। তাই বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়েই এখন দোকানপাট খোলা রাখছেন তারা। ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে ঘুরে দঁড়াতে শুরু করেছেন। এতে চাঙা হয়ে উঠছে ব্যবসা-বাণিজ্য।
তিনি আরও জানান, শাক-সবজিসহ সব ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বাজারে এখন যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। রাজশাহী থেকে খাদ্যশস্য অনেকটা নির্বিঘেœই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে পৌঁছানো যাচ্ছে। অন্য স্থান থেকে রাজশাহীর বাজারেও কাঁচামালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আসছে নিয়মিত।
সাহেববাজার বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অশোক কুমার সাহা জানান, হরতাল-অবরোধে ব্যবসায়ীরা প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেছেন। দোকানপাট বন্ধের জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তারপরও দোকানপাট খুলছেন।
এভাবে ঘুরে না দাঁড়ালো হরতালকারীরা আরও পেয়ে বসবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাজশাহী রেস্তরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি রিয়াজ আহম্মদ খাঁন বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য এখন অনেকটাই সচল হয়ে উঠেছে। বাজারে বেড়েছে মানুষের সমাগমও। বেচাকেনাও হচ্ছে ভালো। সর্বত্র ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য। ক্ষতির ধকল কাটিয়ে উঠতে একটু সময় লাগবে।
এদিকে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহাতায় বাস ও ট্রাকসহ সব ধরনের পণ্য পরিবহন যথারীতি শুরু হয়েছে আবারও। এতে টানা অবরোধ ও হরতালে রাজশাহীর ব্যবসা-বাণিজ্যে যে স্থবিরতা নেমে এসেছিলো তার প্রায় ৭৫ ভাগই এখন স্বাভাবিক হয়ে এসেছে বলে মনে করছেন স্থানীয় পরিবহন নেতারা।
রাজশাহী জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাদরুল ইসলাম বলেন, এভাবে আর কতদিন চলা যায়। তাই শতভাগ না হলেও এক মাসেরও বেশি সময় থেকে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ যানবাহন চলাচল করছে। যানবাহন নিয়ে রাস্তায় নামা ছাড়া শ্রমিকদের আর কোনো উপাই নেই।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি জানান, দুই মাসের সহিংসতায় রাজশাহীর ব্যবসায়ীদের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। তাই যত বাধা এবং ঝুঁকিই আসুক তারা আর অবরোধ হরতাল মানবেন না।
সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও রাখবেন বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৫