ঢাকা: নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে কেক কেটে ৮৬ তম জন্মদিন উদযাপন করলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২ টা এক মিনিটে রাজধানীর বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসভবনে জন্মদিনের এ আয়োজন করে জাতীয় পার্টির যুব সংগঠন জাতীয় যুব সংহতি।
কেক কাটার পর এরশাদ সাংবাদিকদের সঙ্গে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নিজ দলের অবস্থা এবং বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে কথা বলেন। এর আগে দলের বিভিন্ন শাখা এবং অঙ্গসংগঠন তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়।
বিশ্বকাপ ক্রিকেট
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ২য় কোয়ার্টার ফাইনাল নিয়ে এরশাদ বলেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। ভুল জাজমেন্ট দেয়া হয়েছে। আম্পায়াররা সঠিক সিদ্ধান্ত দেননি। এখন আমাদের (দেশের) পক্ষ থেকে আপিল করা হবে।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি
চলমান রাজনীতির বিষয়ে এরশাদ বলেন, জনগণ মেরে ক্ষমতায় যেতে চাই না। আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য মানুষ পোড়ানোর রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। দেশের জনগণকে স্বস্তি দেয়ার জন্য জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় যেতে চায়।
জাতীয় পার্টি
নিজ দলের বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা ক্ষমতায় যেতে চাই। এ জন্য জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করতে হবে। দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, তোমরা আমার সন্তান। আমার জন্মদিন পালন করছো এ জন্য আমি অভিভূত। দলকে ভালোবাসো। শক্তিশালী করো।
মাত্র দুই নেতা
জাতীয় পার্টি একইসঙ্গে সরকার ও বিরোধীদলে থাকলেও দলীয় চেয়ারম্যানের জন্মদিন পালনের প্রথম প্রহরে ছিলেন না অধিকাংশ প্রভাবশালী নেতা। ছিলেন মাত্র মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু ও প্রেসিডিয়াস সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
বর্ণাঢ্য জীবন
১৯৩০ সালের এই দিনে তৎকালীন রংপুর জেলার কুড়িগ্রাম মহকুমার নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার পিতা মুহম্মদ মকবুল হুসেইন ছিলেন পেশায় আইনজীবী। ১৯৫০ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এরশাদ। ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন অফিসার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬০ থেকে ১৯৬২ সালে তিনি চট্টগ্রাম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে অ্যাডজুট্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৬ সালে তিনি কোয়েটার স্টাফ কলেজ থেকে স্টাফ কোর্স সম্পন্ন করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি শিয়ালকোটে ৫৪ ব্রিগেডের মেজর ছিলেন। ১৯৬৯ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি লাভের পর ১৯৬৯ ও ১৯৭০ সালে ৩ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ড্যান্ট ও ১৯৭১ থেকে ১৯৭২ সালে ৭ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ড্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তান থেকে দেশে ফেরার পর তাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৭৩ সালের ১২ ডিসেম্বর তিনি কর্নেল ও ১৯৭৫ সালের জুন মাসে ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি পান। ১৯৭৫ সালের ২৪ আগস্ট ভারতে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় তিনি মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান ও ডেপুটি চিফ অব আর্মি স্টাফ হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। বিরোধী দলের আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর তিনি পদত্যাগ করেন।
ক্ষমতা হারানোর পর এরশাদ গ্রেপ্তার হন এবং ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত কারারুদ্ধ থাকেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি জেল থেকে অংশ নেন এবং রংপুরের পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনেও তিনি পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচিত হন।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে নানা নাটকীয়তার পর রংপুর-৩ আসন থেকে তিনি নির্বাচিত হন।
বাংলাদেশ সময়: ০২২৩ ঘণ্টা, মার্চ ২০, ২০১৫