ঢাকা: আন্দোলন-সহিংসতা থেকে বিএনপিকে সরিয়ে আনার কৌশল হিসেবে তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন দিয়েছে সরকার। নির্বাচন কমিশন আগামী ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৬ জানুয়ারি থেকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট টানা অবরোধ-হরতাল চালিয়ে আসছে। বিএনপির এই কর্মসূচিতে জনগণের সম্পৃক্ততা না থাকলেও চোরা গোপ্তাভাবে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যাসহ সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে।
দুইটি বিশ্ব ইজতেমায় তারা কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। এ ধরনের কর্মসূচি ও সহিংসতার কারণে এসএসসি পরীক্ষা ব্যাহত হচ্ছে এবং দীর্ঘ সময় ধরে এই পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে।
টানা আড়াই মাস ধরে চলা এই পরিস্থিতি বন্ধের কৌশল হিসেবেই সরকার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে তারা জানান।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক ওই নেতাদের মতে, এই নির্বাচনে এরইমধ্যেই মানুষের মধ্যে সাড়া পড়ে গেছে। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা নির্বাচনের মাঠে নেমে পড়েছে। বিএনপিও নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক। সর্বস্তরের মানুষ নির্বাচনমুখী হয়ে পড়ায় আন্দোলন ছেড়ে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য হবে বলে ওই নেতারা আরও মন্তব্য করেন।
এদিকে আগামী বছরের শুরুতে সারা দেশে পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর পর অনুষ্ঠিত হবে স্থানীয় সরকারের সব চেয়ে বড় নির্বাচন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কোনো দলের অংশগ্রহণ করা, না করার বিষয়টি সাধারণ মানুষের মধ্যে বলতে গেলে কোনো প্রভাব পড়ে না।
কারণ দলীয় প্রভাব থাকলেও এই নির্বাচনগুলো কোনো দলীয় নির্বাচন নয়। তৃণমুল পর্যায়ের স্থানীয় সরকার কাঠামোর এই সব নির্বাচনে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ থাকে এবং তারা স্বতস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়। এই সব নির্বাচনের মধ্যে আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়ার সুযোগ পাবে না বিএনপি। আর এ বিষয়গুলো চিন্তায় রেখেই চলমান আন্দোলন ও সহিংসতা থামাতে তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন দিয়েছে সরকার।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এই সিটি নির্বাচনকে বিএনপির এক্সিট পয়েন্ট মনে করছেন।
রোববার (২২ মার্চ) সচিবালয়ে ভিয়েতনামের বাণিজ্য ও শিল্প বিষয়ক ভাইস-মিনিস্টারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, জঙ্গি তৎপরতা থেকে বেরিয়ে এসে সিটি করপোরেশন নির্বাচন হোক বিএনপির জন্য এক্সিট পয়েণ্ট। তারা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক, নাশকতা পরিহার করুক। বিএনপি আড়াই মাস পরে ঘরে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। আসলে কিন্তু রাস্তায় নেই।
এদিকে গত ১৯ মার্চ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই সিটি নির্বাচন সরকারের কৌশল বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি সিটি নির্বাচনে আসবে, এটা আমি জোর দিয়ে বলতে পারি। তারা নির্বাচনে আসবে বলেই তো নির্বাচন দিয়েছি।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এর আগেও তারা সব নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। সর্বশেষ গত বছর অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নিয়েছে। সিটি করপোরেশনের এ নির্বাচনেও অংশ নেবে। কারণ আন্দোলনের নামে তারা যে সন্ত্রাস চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।
খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি সিটি নির্বাচনে এলে ভালো। তাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হলে আন্দোলন ছেড়ে নির্বাচনে আসবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৫