ঢাকা: ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মনোয়নপত্র দাখিলের সময় দুই থেকে তিন দিন বাড়াতে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিএনপির চেয়ারপারসনের ‘উপদেষ্টা’ হিসেবে পরিচিত অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ।
বুধবার (২৫ মার্চ) প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের সঙ্গে তার কার্যালয়ে বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
বৈঠকটি বিকেল সাড়ে ৩টায় শুরু হয়ে বিকেল ৫টার দিকে শেষ হয়।
দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে সুপ্রিম কোর্ট আ সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, কবি আব্দুল হাই শিকদার, অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নী ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, সামনে তিনদিন সরকারি ছুটি রয়েছে। আর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় আগামী ২৯ মার্চ। তাই সবাই যাতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সুযোগ পান, সেজন্য দুই থেকে তিনদিন সময় বাড়ানোর জন্য বলেছি। এছাড়া অনেক নেতাকর্মী জেলে আটক রয়েছেন। যাদের অনেকে নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক, তাদের যেন জামিন দেওয়া হয়। বিএনপির দুই কার্যালয়সহ রাজনৈতিক দলের সব বন্ধ কার্যালয়গুলো খুলে দেওয়ার জন্যও প্রস্তাব করা হয়েছে।
তিনি বলেন, একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন যাতে হয়, সিইসিকে সে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। হেরে গেলেও সবার নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত। এটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অলঙ্কার। তবে যারা প্রার্থী হবেন, তাদের যেন প্রশাসন নির্যাতন না করে, সে নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। কেননা, প্রার্থী হতে আগ্রহীরা আতঙ্কের মধ্যে আছেন। পুলিশ হয়রানি করবে না- এমন আশ্বাস পেলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন। তাই যারা নির্বাচনে অংশ নেবেন, তারা যেন মিছিল, মিটিং, সভা-সমাবেশ করতে পারেন, নির্বাচনে যেন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সৃষ্টি হয়, সে পরিবেশ সৃষ্টির কথাও সিইসিকে বলা হয়েছে।
বর্তমানে অনেক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করা হচ্ছে উল্লেখ করে এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, এটা কখনও কাম্য নয়। জনগণের দ্বারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে বরখাস্ত করার সুযোগ কারো নেই। তাই যারা নির্বাচিত হবেন, তাদের যেন বরখাস্ত করা না হয়, সে ব্যবস্থাও নিতে হবে।
আপনারা বিএনপির পক্ষ থেকে এসেছেন কি-না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে আসিনি। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ‘শত নাগরিক’ নামের সংগঠনের পক্ষ থেকে এসেছি।
নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে সমর্থন জানাবেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হলে এবং প্রার্থী সৎ, দুনীতিমুক্ত হলে আমরা শত নাগরিকের পক্ষে থেকে সমর্থন দেবো। তবে আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে আসিনি।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘ম্যাডাম’ খালেদা জিয়াকে বলেছি, যদি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়, পুলিশি হয়িরানি বন্ধ হয়, তবে নির্বাচন করা উচিত। তিনি দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন।
বৈঠকে আপনাদের প্রস্তাবে সিইসি কী আশ্বাস দিয়েছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে এমাজউদ্দীন বলেন, সিইসি সাধ্যানুযায়ী সব কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন। আমরা ইতিবাচক মনোভাব পেয়েছি। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের জন্য সাহসের সঙ্গে বিবেককে উজ্জীবিত করে দায়িত্ব পালনের জন্য বলেছি। আরো বলেছি, এটা সারাদেশের নির্বাচন নয়। সব কিছু আপনার আয়ত্বে থাকবে। কাজেই ইচ্ছা করলেই সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে পারবেন। তাই আমরা সুষ্ঠু, সুন্দর, পক্ষপাতহীন নির্বাচন দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করতে বলেছি। যা মডেল হিসেবে কাজ করবে। সিইসি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।
কবি আব্দুল হাই শিকদার ‘শত নাগরিক’ সংগঠনের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, আমরা এখানে বিএনপিকে রিপ্রেজেন্ট করতে আসিনি। ‘শত নাগরিক’ সংগঠনটির পক্ষ থেকে এসেছি। ১৯৯৭ সালে ‘এ ন্যাশন ওয়াইড ফোরাম অব সিভিল সোসাইটি’র ব্যানারে সংগঠনটি গঠিত হয়। এ সংগঠন দেশ ও জাতীয়তাবাদী চেতনায় বিশ্বাস করে। দেশ ও সার্বভৌমত্বে যারা বিশ্বাস করে এটা তাদের সংগঠন।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২৮ এপ্রিল তিন সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সে অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় আগামী রোববার (২৯ মার্চ) পর্যন্ত নির্ধারণ করা আছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৯ ঘণ্টা,২৫ মার্চ,২০১৫