ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

‘খালেদা চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৯ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৫
‘খালেদা চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আর জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারবেন না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি (খালেদা জিয়া) যা করতে চেয়েছিলেন তা ৮১ দিনেও করতে পারেননি। তিনি চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।

আর কিছুই করতে পারবেন না।

শুক্রবার (২৭ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী দেশের বিবেকবান মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, খালেদা জিয়া জামায়াত-শিবিরকে সঙ্গে নিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারছে, মানুষ হত্যা করছে। যারা মানুষ পুড়িয়ে মারে, দেশের বিবেকবান মানুষ তাদের ভোট দেবে কীভাবে?

তিনি বলেন, ৮১ দিন ধরে অবরোধ করে আসছেন, কিছু করতে পারেননি। তিনি যাদের দিকে মুখ করে ছিলেন, তারাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এখন কার উপর ভরসা করবেন। উনাকে সবাই ছেড়ে চলে গেছেন। উনার পাশে এখন তো আর কেউ নেই, উনি এখন একা। উনি কীসের আশায় বাড়ি ছেড়ে দলীয় কার্যালয়ে বসে আছেন? মনে হচ্ছে আমাকে হত্যা না করে বোধহয় উনি ঘরে ফিরবেন না। কিন্তু আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রাখলে উনি কী করবেন? আমার মৃত্যু নিয়ে কোন ভয় নেই।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য, জনগণের ভাগ্যের উন্নয়নে কাজ করে। আর বিএনপি-জামায়াত জোট দেশকে ধ্বংস করতে চায়। তারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বাধা দিয়েছিলো। নির্বাচন ঠেকাতে মানুষ হত্যা করে, নারী, শিশু, যানবাহনের চালক, শ্রমজীবি মানুষকে তারা হত্যা করেছে। নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। আবার এক বছর পর ৫ জানুষযারি থেকে সেই হত্যাকাণ্ড শুরু করে। ঠিক পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী একাত্তর সালে যেভাবে মানুষ হত্যা করেছিলো, গণহত্যা চালিয়েছিলো, খালেদা জিয়া জামায়াত-শিবিরকে সঙ্গে নিয়ে ঠিক একই কায়দায় মানুষ হত্যা করে চলেছেন। জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারছেন। এটা গণহত্যার সামিল।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যারা বিবেকবান মানুষ, যাদের মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ আছে তারা কীভাবে বিএনপি-জামায়াতকে ভোট দেবেন? যারা জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারে, যারা মুক্তিযুদ্ধে মূল্যবোধকে ধ্বংস করতে চায় সচেতন, বিবেকবান মানুষ তাদের কীভাবে ভোট দিতে পারেন? বিবেকবান মানুষ মানুষ কীভাবে তাদের পক্ষে কথা বলতে পারেন, তাদের হাতে হাত মেলাতে পারেন- এই প্রশ্ন আমি দেশের মানুষের কাছে রেখে যাচ্ছি। কিছু মানুষ আছেন, তারা বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ হয়ে কথা বলেন, তাদের পক্ষে লেখেন। যারা মানুষ হত্যা করে, খুন করে সেই খুনিদের মানবাধিকার নিয়ে কীভাবে কথা বলেন। যারা খুন হচ্ছেন, যারা আগুনে পুড়ে বার্ন ইউনিটে কাতরাচ্ছেন তাদের পক্ষে কথা বলেন না আপনারা। তারা খুনির মানবাধিকার নিয়ে ব্যস্ত।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে জঙ্গিবাদের স্থান হতে দেবো না। আমি জানি আমার উপর আঘাত আসতে পারে। অতীতেও এসেছে। আল্লাহ যাকে রক্ষা করে কেউ তার ক্ষতি করতে পারে না। মানুষ জন্মালে মরতে হবে। মৃত্যু নিয়ে আমি ভয় করি না। আমি এদেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাবো। খালেদা জিয়ার সাধ্য নেই মানুষের জন্য কাজ করা থেকে আমাকে বিরত রাখে।

খালেদা জিয়া পরাজিত শক্তির দোসর এটা প্রমাণ হয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদ দিবসে শহীদ মিনারে যাননি, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে স্মৃতিসৌধে যাননি। তিনি যে পরাজিত শক্তির দোসর এর মধ্য দিয়ে সেটা প্রমাণ হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, দীর্ঘকাল ধরে শোষিত-বঞ্চিত বাঙালির ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। চূড়ান্ত স্বাধীনতা লাভের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ধাপে ধাপে জাতিকে উজ্জীবিত করেছিলেন। এরপর আন্তর্জাতিক সমর্থন নিয়ে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। তার নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতা লাভের পর বাঙালির ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। এখন প্রতিটি জায়গায় বাঙালি। বিশ্বের বুকে বাঙালি এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছে।

স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ-তিতীক্ষার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাকে মিথ্যা মামলা ও ফাঁসি দিয়ে মারার অপচেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তার আদর্শ থেকে এক পা-ও পিছু হটেননি। আদর্শে অনড় থাকাই ছিল বঙ্গবন্ধুর বড় গুণ।

কিছু মানুষ থাকে যারা অন্যের ভাল দেখতে পারে না; সহজ পথে ক্ষমতায় গিয়ে নিজেদের ভাগ্য গড়ার চেষ্টা করে। এমন মানুষ এখনও আছে তখনও ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানি দালালদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন তখন এক শ্রেণীর মানুষ বিরোধিতা করেছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জনগণকে নিয়ে লড়াই করেছেন।

ছয় দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, সত্তরের নির্বাচন ও পাকিস্তানিদের টালাবাহানাসহ স্বাধীনতা আন্দোলনের অনেক ঘটনা বক্তৃতায় তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, সত্তরের নির্বাচনের আগে বঙ্গবন্ধু বলতেন আমরা জয় লাভ করবো, কিন্তু তারা ক্ষমতা দেবে না। আমাদের প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্রের দরকার। পরে সেসবেরও ব্যবস্থা বঙ্গবন্ধু করেছেন। এর মধ্যে তিনি আরও এক বিষয়ে বিশেষ লক্ষ্য রেখেছেন- যেন বাঙালির আন্দোলন বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে চিহ্নিত না হয়। কারণ, বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে আন্তর্জাতিক সমর্থন পাওয়া যায় না।

জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলন করেছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এমন আন্দোলন পৃথিবীর আর কোথাও হয়নি, হবেও না। একাত্তরের মার্চ মাসের শুরুতে প্রতিদিন গণজাগরণ সমাবেশ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ৭ মার্চের ভাষণে সব দিক নির্দেশনা দিয়ে রেখেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। তিনি কেবল স্বাধীনতার কথা বলেননি, মুক্তির কথাও বলেছিলেন-অর্থনৈতিক মুক্তির কথা।

শেখ হাসিনা আরও স্মরণ করেন, বঙ্গবন্ধু অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন বলে কোনো বাবুর্চি পাকিস্তানি শাসক ইয়াহিয়ার বাসায় রান্না করতে রাজি হননি। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে অনুমতি নিতে হয়েছিল। তারপর বাবুর্চিরা রান্না করতে রাজি হয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত থেকে জনগণকে সঙ্গে নিয়েই আওয়ামী লীগ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশ সময়: ২১১১ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০১৫

** বাঙালির ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন বঙ্গবন্ধু

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।