গুলশান থেকে: শনিবারই হতে পারে কার্যালয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শেষ রাতযাপন। তার সঙ্গে অবস্থানকারী নেতা ও স্টাফ এবং দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন তিনি।
খালেদার ঘনিষ্ঠ একজন বাংলানিউজকে বলেন, শুধু কার্যালয় হারানোর ভয়ে নয়, সঙ্গী ও কর্মীদের দুরবস্থায় ফেলা হবে বলেই তিনমাস ধরে এখানে বসবাস করছেন তিনি।
কার্যালয়ে তার সঙ্গে অবস্থানকারীদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন সুলতানাসহ অনেকের নামেই মামলা রয়েছে। তাদের একটি সুব্যবস্থা চান খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া চলে গেলে কার্যালয়ে তার অবস্থানকারী সঙ্গীদের কী হবে, তারা কি শনিবার রাতেই এক এক করে কার্যালয় ছাড়বেন, নাকি রোববার বা তার পরে বের হয়ে আদালতে জামিন নেওয়ার চেষ্টা করবেন- এসব প্রশ্নের সদুত্তর একমাত্র খালেদাই দিতে পারেন বলে জানান তাদের একজন। শনিবার রাতে খালেদার নির্দেশনা পাবেন বলে জানান তিনি।
শুধু তাই নয়, অপর সূত্র জানায়, গুলশান বা নয়াপল্টন কার্যালয়ের যেকোনো একটিতে কর্মীদের প্রবেশ অবাধ না করে বাসায় ফিরতে আগ্রহী নন খালেদা।
নয়াপল্টন কার্যালয়ে স্বাভাবিক অবস্থা পেতে শনিবার দিনভর দল থেকে চেষ্টা চালানো হয়েছে বলেও জানায় সূত্র। বিভিন্ন থানা ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
খালেদা জিয়ার চাহিদা- গুলশান বা নয়াপল্টন কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের যাতায়াত অবাধ হোক ও প্রাণচঞ্চল হোক।
দলের পক্ষ থেকে চাওয়া হচ্ছে- যেহেতু এ তিনমাসে কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা ঢুকতে পারে নি, তাই নতুন করে ঢোকার সময়ও কিছু বিষয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
কার্যালয়ে ঢোকার সময় পুলিশ ও গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি চান তারা। যাতে কার্যালয়ে অবৈধ কিছু কেউ রেখে বিএনপিকে অভিযুক্ত করার সুযোগ না পায়। সুরক্ষিত ও নিরাপদ বলে নিশ্চিত হয়েই কেবল কার্যালয়ে নিজেদের কার্যক্রম চালুর সাহস পাবে দলটি।
অপর সূত্রও জানায়, নেতাকর্মীদের একটি ব্যবস্থা না করে বাসায় ফিরে গেলে হতাশা তৈরী হবে বলে খালেদার আশঙ্কা। শুধু তাই নয়, দলের কার্যক্রম পরিচালনার জন্যও এটি অত্যন্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন তিনি।
গত ৩ জানুয়ারি থেকে টানা তিনমাস বাসা ছেড়ে গুলশানের ৮৬ নম্বর সড়কের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বসবাস করছিলেন এ দলপ্রধান।
ডুপ্লেক্স কার্যালয়টিতে এ দীর্ঘবাসে কোথাও যাওয়াতো দূর, মূল ফটকের বাইরেও পা রাখেননি তিনি।
রোববার (০৫ এপ্রিল) জিয়া অরফারেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মালায় আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়ার কথা জানাচ্ছেন তার আইনজীবী ও দলের নেতারা।
দলের এক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, আদালতের কাজ শেষে তাকে যদি কার্যালয়ে ঢুকতে বারণ করা হয়, তিনি কোনো উচ্চবাচ্য না করেই বাসায় ফিরবেন। কারণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে তিনি কিছু ফিল্ড-ওয়ার্ক করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। কার্যালয়ে নিষ্প্রাণ না থেকে বাসায় থেকে কার্যক্রম পরিচালনা আরেকটু যৌক্তিক মনে করা হচ্ছে।
বিএনপিও এক প্রকার ধরেই নিয়েছে খালেদা বের হলে গুলশান কার্যালয়টি বন্ধ করে দেওয়া হবে। এটি ভবিষ্যতে সাধারণ একটি বাড়ি হিসেবেই থাকবে, কোনো দলের কার্যালয় হিসেবে নয়। দলের চেয়ারপারসনের পরবর্তী রাজনৈতিক কার্যালয়টি অন্তত কূটনীতিক পাড়ায় হবে না বলেও মনে করা হচ্ছে।
শনিবার (০৪ এপ্রিল) বিকেলের মধ্যেই গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কে তার বাসাটির পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ করা হয়। খালেদার কক্ষ, বাইরের বাগান ও বসার ঘরটি আগের মতো করেই গুছিয়ে রাখা হয়েছে।
দুপুরে বাসার সামনে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে সিএসএফ সদস্যদের (চেয়ারপারসনস সিকিউরিটি ফোর্স) তত্ত্বাবধানে যাবতীয় কাজ সমাধা হচ্ছে।
এক সদস্য বাংলানিউজকে বলেন, বাসা সম্পূর্ণ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি (খালেদা) যদি কাল (রোববার, ০৫ এপ্রিল) আদালতে যান, সেক্ষেত্রে বাসায় আসার সম্ভাবনা বেশি।
সিএসএফ সদস্য আরও বলেন, বাসায় ফেরার বিষয়টি চূড়ান্ত হলেই নিরাপত্তার দায়িত্ব থেকে ফিরিয়ে নেওয়া পুলিশ সদস্যদের পাঠাবে প্রশাসন। এ বিষয়ে কোনো গাফিলতি হবে না বলে নিশ্চয়তাও দেওয়া হয়েছে বলে জানান এ সদস্য।
গত ১ মার্চ থেকে খালেদার বাসার নিরাপত্তা কর্মীদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
সিএসএফ সূত্র আরও জানায়, খালেদা জিয়া আদালতে যাবেন বলেই তাদের জানিয়েছেন ও সামগ্রিক প্রস্তুতি রাখতে বলেছেন। তবে যে কোনো বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রস্তুতিও একই সঙ্গে রাখতে বলেছেন তিনি।
বিকেলে কার্যালয়ের সামনের ফটক ঘেঁষে রাখা গাড়িটিও পরিস্কার করতে দেখা গেল। চালক আবুল বাশার বালতিতে কাপড় ভিজিয়ে ঘষে পরিস্কার করছিলেন খালেদার প্রটোকলের গাড়িটি।
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে তার দাবি, নিয়মিতই গাড়ি পরিস্কার রাখার ধারাবাহিকতায় আজও (শনিবার) করছেন তিনি। নতুন কোনো নির্দেশনার ভিত্তিতে ‘মোছামুছি’ করছেন না।
খালেদার ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র জানায়, এই তিনমাসে বাসা থেকে খালেদার ব্যবহারের বিভিন্ন সামগ্রী কার্যালয়ে আনা হয়েছিল। সেগুলো একইভাবে একটু একটু করে এ কদিনে ফেরত নেওয়া হয়েছে বাসায়।
গুলশান সূত্র জানায়, খালেদা চান আদালত থেকেও যদি তাকে বাসায় যেতেও হয়, কার্যালয়টিতে নিয়মিত যাতায়াতের সুযোগ যেন পান।
রোববার খালেদাকে গ্রেফতার বা তার কার্যালয় তল্লাশির আশঙ্কা সেভাবে করছেন না খালেদার ঘনিষ্ঠরা। যদিও ২৫ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারিতে কেউ কেউ দুশ্চিন্তায় ছিলেন। এরপর ১ মার্চ তার কার্যালয় তল্লাশির নির্দেশ আসে ও বাসার নিরাপত্তা সরিয়ে নেওয়া হয়। দুশ্চিন্তা অনেকের বাড়লেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো দুর্ব্যবহার আসেনি।
বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে গুলশান থানার কর্মকর্তারাও নিশ্চিত করেন, খালেদাকে বিব্রত করার কোনো নির্দেশ তাদের প্রতি নেই, এমন কিছু তারা ভাবছেনও না।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৫