ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

খালেদার খনি দুর্নীতি মামলার স্থগিতাদেশ বাড়লো ছয় মাস

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৫
খালেদার খনি দুর্নীতি মামলার স্থগিতাদেশ বাড়লো ছয় মাস বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলার কার্যক্রমের স্থগিতাদেশ আরও ছয় মাসের জন্য বৃদ্ধি করেছেন হাইকোর্ট।

বৃহস্পতিবার (০৯ এপ্রিল) বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।



মামলার শুনানির জন্য গত মঙ্গলবার (০৭ এপ্রিল) এ বেঞ্চের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (এসকে সিনহা)। বেঞ্চটি এ মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রুলেরও শুনানি নিয়ে এর নিষ্পত্তি করবেন।

খালেদার আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন শুনানিতে স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করে।
আদেশের পর খোকন সাংবাদিকদের বলেন, মামলার অবস্থা আগের মতোই রয়েছে। আইন অনুসরণ করে মামলাটি করা হয়নি। স্থাগিতাদেশের মেয়াদ আদালত ছয় মাসের জন্য বাড়িয়েছেন। তবে রুল শুনানির জন্য আছে।

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা ছাড়াও নাইকো দুর্নীতি মামলা ও গ্যাটকো দুর্নীতি মামলারও স্থগিতাদেশ ও বাতিল প্রশ্নে হাইকোর্টের জারি করা রুলের নিষ্পত্তি করবেন এ বেঞ্চ।

এসব মামলার বেঞ্চ পরিবর্তনে গত ২ এপ্রিল প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। তার আইনজীবীদের এ সংক্রান্ত চারটি আবেদন গ্রহণ করেন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা। পরে মঙ্গলবার নতুন বেঞ্চটিকে এ তিন মামলার শুনানির দায়িত্ব দেন তিনি।

গত ৫ এপ্রিল পূর্ববর্তী স্ব স্ব হাইকোর্ট বেঞ্চ মামলাগুলোর বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়ে দেন।

মামলাগুলোর মধ্যে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলার রুলের শুনানি শেষ হয়েছিল। এর রায়ের দিন গত ৫ এপ্রিল ধার্য ছিল বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চে। এর মধ্যে আসামিপক্ষকে শুনানি শেষ করতে বলা হয়েছিল।

অন্যদিকে নাইকো দুর্নীতি মামলা ও গ্যাটকো দুর্নীতি মামলার রুলের শুনানি শুরুর অপেক্ষায় ছিল।

খালেদা জিয়াকে প্রধান আসামি করে করা এসব মামলা হাইকোর্টের আদেশে কয়েক বছর ধরে স্থগিত ছিল। সম্প্রতি মামলাগুলো সচলের উদ্যোগ নিয়ে রুল শুনানির দিন ধার্যের আবেদন জানায় দুদক।
 
জরুরি অবস্থার সময়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া ও তার মন্ত্রিসভার সদস্যসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা দায়ের করে।

কনসোর্টিয়াম অব চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইম্পোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনকে (সিএমসি) বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির অনুমোদন দিয়ে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতির অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন দুদকের উপ-পরিচালক শামসুল আলম। একই বছরের ৫ অক্টোবর আদালতে এ মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়।

মামলায় মন্ত্রিসভার বৈঠকে সভাপতি হয়ে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির অনুমোদন দিয়ে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়েছিল। এতে চারদলীয় জোট সরকারের স্থানীয় সরকার, সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী আবদুল মান্নান ভূঁইয়া (মরহুম), অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান (মরহুম), শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তথ্যমন্ত্রী শামসুল ইসলাম, কৃষিমন্ত্রী এম কে আনোয়ার, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছিল।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, কয়লা উত্তোলনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা সিএমসির সঙ্গে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি করায় সরকারের প্রায় ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

পরে এ মামলা দায়েরের বৈধতা চ্যালেঞ্জ হাইকোর্টে রিট করেন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের ১৬ অক্টোবর বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি ফরিদ আহাম্মদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি মামলার কার্যক্রম তিন মাস স্থগিত করেন। একই সঙ্গে মামলা দায়ের ও কার্যক্রম কেন অবৈধ ও বেআইনি হবে না জানতে চেয়ে সরকারকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন। পরে সময়ে সময়ে মামলার স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

এ মামলায় স্থায়ী জামিনে রয়েছেন খালেদা জিয়া।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৩ থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। তবে আসামিপক্ষ শুনানিতে অংশ নেননি। গত ৪ মার্চ তারা সময়ের আবেদন জানালেও আদালত তা নামঞ্জুর করেন।

তিনদিনের রুল শুনানি শেষে গত ৫ মার্চ এর রায় দেওয়ার জন্য ১০ মার্চ দিন ধার‌্য করেছিলেন আদালত। তবে এর আগেই ৮ মার্চ খালেদার পক্ষে ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, জয়নুল আবেদীন ও মাহবুব উদ্দিন খোকন আদালতে গিয়ে শুনানির সুযোগ চান।

আসামিপক্ষের এ আবেদনে রায়ের দিন পিছিয়ে ১৫ মার্চ পুনর্নির্ধারণ এর মধ্যে শুনানি করতে বলেন আদালত।
 
১৫ মার্চ শুনানি করতে এবং রায়ের দিন পেছাতে ফের সময়ের আবেদন জানান আসামিপক্ষের আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে রায়ের দিন ৫ এপ্রিল পুনর্নির্ধারণ করেন বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জেবিএম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। এ সময়ের মধ্যে আসামিপক্ষকে শুনানি শেষ করারও আদেশ দেন আদালত।

এদিকে এ মামলার রুল শুনানির জন্য হাইকোর্টের বেঞ্চ বদলের আবেদন জানান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার পক্ষে তার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন গত ১১ মার্চ আদালত পরিবর্তন করে মামলাটি অন্য আদালতে বদলির জন্য হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন জানান। গত ২ এপ্রিল ওই আবেদনটিই তারা প্রধান বিচারপতির কাছে দেন।

এ মামলা বাতিলে অপর দুই আসামি জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ দুটি আবেদন করেছিলেন, যা আগেই খারিজ হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০১৫
ইএস/জেডএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।