ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

সিটি নির্বাচনে নারী ক্ষমতায়নের প্রতিফলন হয়নি

ইকরাম-উদ দৌলা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৫
সিটি নির্বাচনে নারী ক্ষমতায়নের প্রতিফলন হয়নি

ঢাকা: আসন্ন তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নারী প্রার্থী নেই একজনও। অন্যদিকে সাধারণ কাউন্সিলর পদে যে কয়েকজন নারীর অংশগ্রহণ তাও হতাশাব্যঞ্জক।

সব দিক বিবেচনায় এ নির্বাচনে নারীর ক্ষমতায়নের প্রতিফল হয়নি বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
 
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) দেওয়া তথ্যমতে, তিন সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্য ৪৮। এদের মধ্যে ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) উত্তরে ১৬ জন ও দক্ষিণে ২০ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন। আর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ১২ জন মেয়রপ্রার্থী। এ পদে কোন নারী প্রার্থীই নেই।
 
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে অবশ্য ঢাকা উত্তরে দু’জন নারী প্রার্থী এগিয়ে এসেছিলেন। তাদের একজন হেলেনা জাহাঙ্গীর হেলেন। তিনি ঢাকায় বিলবোর্ডও লাগিয়েছিলেন। তবে শেষ সময়ে পারিবারিক সমস্যার কারণ দেখিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি তিনি। অন্যজন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সারাহ বেগম কবরী। তিনি শেষ সময়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ এপ্রিল তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দলীয় শৃঙ্খলার কারণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশকে সম্মান জানানোর জন্যই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলাম।
 
তিন সিটি নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৮৭৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে নারী প্রার্থী রয়েছেন মাত্র ২১ জন। যার শতকরা হিসাব হচ্ছে ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
 
এরমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩৬টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীর সংখ্যা ২৮০ জন। কিন্তু এরমধ্যে নারী প্রার্থী রয়েছেন ১২ জন।
 
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৫৭টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন ৩৮৬ জন। যাদের মধ্যে নারী প্রার্থীর সংখ্যা মাত্র ৬ জন।
 
এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৪১টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সংখ্যা ২১২ জন। এ সিটি নির্বাচনেও নারী প্রার্থীর অংশগ্রহণ তেমন নেই। এখানে মাত্র ৩ জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
 
সিটি নির্বাচনে এই যখন চিত্র, তা হতাশাজনক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, নারী অংশগ্রহণ যখন সারাবিশ্বে বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, এমন সময় দেশের রাজধানী ও বাণিজ্যিক রাজধানীতে এ চিত্র আপত্তিকর।
 
বিষয়টি নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচনে নারী অংশগ্রহণ বাড়াতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ব্যাপক ক্যাম্পেইনের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এ বিষয়ে তাদের উদ্যোগ ছিল না এবং নেই বললেই চলে।
 
তিনি বলেন, নারী নেতৃত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে এতো কম অংশগ্রহণ খুব নেতিবাচক বিষয়। যেহেতু কাউন্সিলর প্রার্থীদের দলগুলোই সাপোর্ট দেয়, সেহেতু এর দায় দলগুলোকেই নিতে হবে। এটা চিন্তিত হওয়ার মতো বিষয়।
 
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর ফেলো, অধ্যাপক রওনক জাহানও এজন্য দলগুলোকেই দায়ী করেন। বাংলানিউজকে বলেন, দলগুলো এসব নির্বাচনে পুরুষ প্রার্থীকেই সমর্থন দেয়। যেহেতু নারীদের পেশী শক্তি বা কালো টাকার প্রভাব নেই, তাই কোনো দলই নারীদের ওপর ভরসা করে না।

রওনক জাহান বলেন, এজন্য তারা নির্বাচনগুলোতে নারীদের ব্যাকআপ দেয় না। যে কারণে স্থানীয় সরকারে নারীর অংশগ্রহণও তেমন হচ্ছে না।
 
কেবল সংরক্ষিত আসনে নারী সদস্য নির্বাচন সত্যিকারের অংশগ্রহণ নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
 
আগামী ২৮ এপ্রিল ডিসিসি উত্তর ও দক্ষিণ এবং চসিক নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৪
ইইউডি/আইএ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।