ঢাকা: নাশকতার দুই মামলায় আগাম জামিন না পেলেও ভোট চেয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ও নগর বিএনপির আহবায়ক মির্জা আব্বাস। দুর্নীতির মামলায় বিচারিক আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি থাকায় গ্রেফতারের আশঙ্কাও করছেন তিনি।
বুধবার (১৫ এপ্রিল) তার আগাম জামিনের বিষয়ে বিভক্ত আদেশ দেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। আদেশের পর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির কক্ষে বসে নিজের জন্য ভোট চান তিনি। তিনি সাংবাদিকদের মাধ্যমে ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি তো সরাসরি আপনাদের কাছে আসতে পারলাম ভালো, না পারলে আমাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এবং আমাকে গ্রেফতার করা হলে গ্রেফতারের জবাবে মগ প্রতীকে ঢাকা দক্ষিণ সিটিবাসী যেন আমাকে ভোট দেন, সেটা কামনা করি।
এর আগে বুধবার সকালে মির্জা আব্বাসের জামিন বিষয়ে বিভক্ত আদেশ দেন বিচারপতি কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
বেঞ্চটির জ্যেষ্ঠ বিচারপতি তিন সপ্তাহের আগাম জামিন দেন। কনিষ্ঠ বিচারপতি জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়ে বুধবারের মধ্যে মির্জা আব্বাসকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন। আইন অনুসারে এখন বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। তিনি জামিনের আবেদন নিষ্পত্তিতে অন্য কোনো বেঞ্চ গঠন করে দেবেন।
দুদকের দায়ের করা দুর্নীতির অন্য মামলাটির জামিনের আবেদনের শুনানি কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন এ বেঞ্চ।
মোট তিনটি মামলায় আগাম জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন মির্জা আব্বাস। বাসে অগ্নিসংযোগ ও বিস্ফোরণের অভিযোগ ২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর পল্টন থানায়, একই বছরের ৬ মার্চ প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের পক্ষ থেকে শাহবাগ থানায় এবং বিস্ফোরক আইনে চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি মতিঝিল থানায় দায়ের করা মামলায় এ আগাম জামিনের আবেদন করা হয়।
এর মধ্যে পল্টন ও মতিঝিল থানার মামলা দু’টিতে বিভক্ত আদেশ দেওয়া হলেও দুদকের মামলাটি এ বেঞ্চের কার্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে জামিনের জন্য অন্য বেঞ্চে যেতে বলেছেন আদালত। দুদকের মামলায় বিচারিক আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে।
আদেশ শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, দুই বিচারপতির দ্বিমত হওয়ার প্রেক্ষিতে আত্মসমর্পণের আগে যা ছিল, এখনও মামলাগুলো সে অবস্থায়ই আছে। দুর্নীতি মামলায় অবশ্যই তাকে গ্রেফতার করতে পারে দুদক।
খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ মির্জা আব্বাসকে কোনো ধরনের হয়রানি করলে উচ্চ আদালতের চরম অসম্মান হবে।
গত রোববার (১২ এপ্রিল) জামিনের আবেদনগুলো উপস্থাপন করেছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন।
শুনানি শেষে সোমবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে বুধবার আদেশের দিন ধার্য করেছিলেন আদালত। ওইদিন আদালত আরও আদেশ দেন, এ সময় পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার বা হয়রানি করা যাবে না। তিনি বাসায় যাবেন এবং আদেশের দিন হাইকোর্টে আসবেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি কোথাও যেতে পারবেন না, নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না।
জামিনের আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন ও সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন খোকন।
ওইদিন শুনানির জন্য বেলা সাড়ে বারোটার দিকে অনেকটা গোপনে হাইকোর্টে আসেন মির্জা আব্বাস। গ্রেফতার এড়াতে তিনি অবস্থান নেন খন্দকার মাহবুবের কক্ষে।
মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে বর্তমানে ৩৭টি মামলা রয়েছে বলে তিনি হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।
গত ৭ এপ্রিল সিটি নির্বাচনের প্রার্থীদের আগাম জামিন চেয়ে হাইকোর্টের একই বেঞ্চে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন।
ওইদিন খন্দকার মাহবুব সাংবাদিকদের বলেন, কিছু সময় ধরে আগাম জামিন দিচ্ছেন না হাইকোর্ট। আমরা আদালতে বলেছি, যারা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে নির্বিঘ্নে প্রচারণার জন্য অন্তত নির্বাচনের দিন পর্যন্ত যেন আগাম জামিন দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৫
ইএস/এএসআর
** মির্জা আব্বাসের আগাম জামিন বিষয়ে হাইকোর্টের বিভক্ত আদেশ