ঢাকা: মেয়র হলে কী কী করবেন, সেসব প্রতিদিনই আওড়ে যাচ্ছেন সিটি নির্বাচনের প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা। সেই ধারাবাহিকতায় বুধবার (১৫ এপ্রিল) একটি সংলাপে ঢাকা উত্তরের প্রার্থীরাও শোনালেন নানা স্বপ্নের গান।
‘তারুণ্যের ভাবনায় ঢাকা’ শিরোনামে সিটি নির্বাচনে উত্তরের প্রার্থীদের নিয়ে নির্বাচনী সংলাপের আয়োজন করে ইউএনডিপি। এতে উপস্থিত প্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ১২ জন মেয়র প্রার্থী।
বুধবার সকাল সোয়া ১০টায় গুলশানের স্পেক্ট্রা কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। সংলাপ পরিচালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক শেষ পর্যন্ত আসেননি সংলাপ অনুষ্ঠানে। এ নিয়ে সমালোচনাও কম হয়নি। প্রার্থী ও উপস্থিত অনেকেই বিষয়টি নিয়ে নানা মন্তব্য করছিলেন।
উপস্থিত ছিলেন, তাবিথ আউয়াল, মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মো. জোনায়েদ আব্দুর রহিম সাকি, আবদুল্লাহ আল ক্বাফী, আনিসুজ্জামান খোকন, শেখ শহীদুজ্জামান, কাজী মো. শহীদুল্লাহ, মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ, নাদের চৌধুরী, এ ওয়াই এম কামরুল ইসলাম, মো. জামান ভূঞা, শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদ।
আনিসুল না আসায় অনেকে এটিকে প্রতিবন্ধীদের প্রতি ‘অবহেলা’ বলে মন্তব্য করলেন। তবে উপস্থিত হয়েও প্রতিবন্ধীদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দিয়ে গেলেন কাজী মো. শহীদুল্লাহ।
হুইল চেয়ারে বসা একজন তরুণ ছাত্র মাইক হাতে নিজের মনের কথা বলতে চান, কিন্তু কয়েক সেকেন্ডেই চরম বিরক্তি প্রকাশ করেন শহীদুল্লাহ।
তিনি প্রায় ধমকে উঠে বারবার বলতে থাকেন, আমাদের সময়ের দাম আছে। আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে করুন। সবাই এতো কথা বললে অনেক সময় নষ্ট হবে। আমাদের এক মিনিট সময়ের দাম এখন কোটি টাকা।
উপস্থিত সবাই তার আচরণে হতচকিত হয়ে পড়েন। তাবিথ আউয়াল তাকে থামানোর চেষ্টা করে বলেন, ‘প্লিজ, তাদেরকে বলতে দিন। তাদের কথা শুনতেই এসেছি আমরা’।
কিন্তু শহীদুল্লাহকে থামানো যাচ্ছিল না। মাইক হাতের যুবক একটি শব্দই উচ্চারণ করেন, ‘প্যাথেটিক, প্যাথেটিক!’
শহীদুল্লাহ এক সময় যেন নিজের ভুল বুঝতে পারেন। পুরোটা অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যে আর খেই পাওয়া যাচ্ছিল না।
প্রতিবন্ধীদের জন্য যাতায়াত, শিক্ষাব্যবস্থা, চিকিৎসায় পৃথক সুযোগ-সুবিধা দেবেন বলে কথা দেন তাবিথ। তিনি বলেন, গাড়িতে বা উঁচু কোথাও ওঠা-নামায় কষ্ট যেন না হয়, সে উপযোগী ব্যবস্থা নেবো।
মাহী অবশ্য তার সঙ্গে একমত নন। তিনি বলেন, আলাদা নয়, সবার সঙ্গে রেখেই আলাদা ব্যবস্থা দেবো তাদের।
শহীদুজ্জামান যে আশ্বাস দিলেন, তাকে অনেকেই ‘আকাশ-কুসুম’ বলে মন্তব্য করলেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক প্রতিবন্ধী নাগরিকের জন্য একটি করে ফ্ল্যাট দেবেন তিনি। শহীদুজ্জামান মূলত আবাসন সমস্যার প্রতিকারে ব্যবস্থা নেবেন বলে বোঝাতে চাইলেন।
সাকি প্রতিবন্ধীদের জন্য শুধু নয়, সবার জন্য ‘মানবিক ঢাকা’ গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন। ফুট-ওভার নয়, জেব্রা-ক্রসিং ব্যবস্থা ভালো করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
ক্বাফি জানালেন, সবার জন্য সুবিধাজনক ব্যবস্থা রাখবেন তিনি। প্রতিবন্ধীরাও পাবেন সর্বোচ্চ সুযোগ।
বিব্রত শহীদুল্লাহ বলেন, আমি ঢাকাকে নিয়ে জেগে উঠবো। প্রতিবন্ধীদের জন্য সব করবো।
নাদের চৌধুরী বলেন, ইনফ্রাস্ট্রাকচার নিয়ে যা যা করলে ভালো হয়, সব ধরনের চেষ্টা করবো আমি। উঁচু ভবনে ওঠার ক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি-না, সে বিষয়ে গবেষণা ও পরামর্শ নিয়ে কাজ করবো।
আনিসুজ্জামান খোকন বলেন, তারা যেন সমাজের সম্পদে পরিণত হন, এমন ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবো। প্রতিবন্ধীরা বোঝা নয়, বরং তারা উপযুক্ত সুবিধায় সম্পদে পরিণত হতে পারেন- সেটিই প্রমাণ করবো আমি।
জামান বলেন, প্রতিবন্ধী ও হিজড়াদের জন্য সকল সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করবো। তাদের সঙ্গে আগে থেকেই আমার সুসম্পর্ক।
মজলিশ বলেন, সিটির সব মানুষের জন্য কাজ করবো। যার যা লাগে, তা দিতে পারলে প্রতিবন্ধীদের বাদ পড়ে কি? তাদের যা প্রয়োজন সবই করবো আমি।
কামরুল বলেন, যারা সুবিধাবঞ্চিত তাদের জন্য কিছু করতে না পারলে সেটা হবে চরম ব্যর্থতা। আমি ব্যর্থ হতে আসিনি।
মাসউদ বলেন, সৃষ্টিকর্তা একেকজনকে একেকভাবে সৃষ্টি করেছেন। সবার মাঝেই কোনো গুণ দেওয়া থাকে। প্রতিবন্ধী শুধু নয়, সবারই সেই গুণ কাজে লাগানোর চেষ্টা করা উচিত। আমি সেই চেষ্টাই করবো।
বলাই বাহুল্য, অনুষ্ঠানে সবার প্রতিশ্রুতি প্রায় একই রকম ছিল। সব সুবিধার প্রতিশ্রুতি, মায়া জাগানিয়া স্বপ্ন নিঃসন্দেহে।
তাহলে ‘বিশেষ’রা কাকে বন্ধু-মেয়র ভাবছেন? সত্যি বন্ধু কে হচ্ছেন বা হবেন তাদের?
এ প্রসঙ্গে অনুষ্ঠানের পরিচালক রোবায়েত ফেরদৌস বাংলানিউজকে বলেন, তারা বিশেষ মানুষ, বিশেষ তরুণ। মেয়র হলে এসব প্রার্থী তরুণদের জন্য নতুন কী করবেন, সেটি জানতে আগ্রহ ছিল। আর কিছু না।
তাবিথ, মাহী, সাকি ও কাফির বক্তব্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ‘বিশেষ’দের ভালো লেগেছে বলে রোবায়েতের মনে হয়েছে- জানান বাংলানিউজকে।
তিনি বলেন, শুধু তরুণ প্রার্থী বলে নন, তারা ‘বিশেষ’ তরুণদের নিয়ে নতুন কিছু চিন্তা করছেন বলে মনে করেছেন ‘বিশেষ’রা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৫
এসকেএস/এএসআর