ঢাকা: পরিবেশবান্ধব, যানজটমুক্ত সবার জন্য বাসযোগ্য মানবিক ঢাকা গড়ার অঙ্গীকারে ৭১ দফা প্রস্তাবের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রপ্রার্থী আবদুল্লাহ আল ক্বাফী।
বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, বিশিষ্ট নাগরিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতিতে তিনি এ ইশতেহার ঘোষণা করেন।
ইশতেহার ঘোষণার পাশাপাশি ব্যক্তিগত ৮ দফা অঙ্গীকারও তুলে ধরেন বাসযোগ্য ঢাকা আন্দোলনের নেতা মেয়রপ্রার্থী ক্বাফী।
দরিদ্র বস্তিবাসী, শ্রমজীবী, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের জন্য উপযুক্ত নাগরিক সেবার নিশ্চয়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইশতেহা ঘোষণায় ক্বাফী বলেন, সব প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়নে আমি আমার সর্বোচ্চ মেধা, শ্রম দিয়ে কাজ করবো।
উত্তর ঢাকাবাসীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, নির্বাচনে হার-জিত থাকবে। তারপরও একটি আদর্শ-নীতি ও কর্মসূচির পক্ষে আপনাদের দাঁড়াতে হবে। একটা নির্বাচনে সর্বোচ্চ প্রকাশ হচ্ছে নির্বিঘ্নে ভোট প্রয়োগ। সেই ভোটের মাধ্যমে একটি নীতিনিষ্ঠ অবস্থান গ্রহণই হচ্ছে নির্বাচনের প্রকৃত গণতান্ত্রিক মর্মবোধ। আসন্ন নির্বাচনে আপনাদের কাছে সেটাই আমার দাবি ও প্রার্থনা।
‘একাত্তর’ দফা প্রস্তাবিত ইশতেহার প্রসঙ্গে ক্বাফী বলেন, ৭১ একটি বিশেষ সংখ্যা। এই সংখ্যাটির সঙ্গে আমাদের ঐতিহাসিক জাতীয় চেতনা জড়িয়ে আছে। সেই ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি, আমার প্রতিটি প্রতিশ্রুতি সুনির্দিষ্ট। কোনোভাবেই এসব প্রতিশ্রুতি ফাঁকা বুলি নয়।
ঢাকা শহরকে নতুন কাঠামোতে গড়ে তোলারও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন এ মেয়রপ্রার্থী। ইশতেহারে মেয়রের কেন্দ্রীভূত ক্ষমতার বদলে অংশগ্রহণমূলক, প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক প্রশাসন গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আবদুল্লাহ আল ক্বাফী।
এছাড়া নগর সরকার বিষয়ক আইন করতে জনমত গড়ে তোলা, সিটি করপোরেশনের বিদ্যমান সেবাকে ই-সেবায় রূপান্তর করা, সেবার মান উন্নয়নে ২৪/৭ কল সেন্টার স্থাপন, সর্বস্তরে ই-টেন্ডার চালু, বস্তিবাসী-ছিন্নমূলদের আবাসন ব্যবস্থা, বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন, যানজট নিরসনে ওয়াটার-রেল-রোড সারকুলার চালু, প্রতিটি রাস্তায় বাইসাইকেল লেন প্রতিষ্ঠা, আবাসিক এলাকায় শিল্প কারখানা অপসারণ এবং সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে উন্মুক্ত ওয়াইফাই জোন করারও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় ইশতেহারে।
একাত্তর দফা নির্বাচনী ইশতেহারে ক্বাফীর ৮ দফা ব্যক্তিগত অঙ্গীকারের মধ্যে রয়েছে, মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হলে তিনি কখনোই ভিআইপি মর্যাদা গ্রহণ করবেন না। প্রতিবছর আয়কর প্রদানের শেষ তারিখের এক সপ্তাহ আগে বিজ্ঞাপন দিয়ে সম্পত্তির হিসাব জনগণের সামনে প্রকাশ করবেন।
নির্বাচিত হলে মেয়র এবং রাজনৈতিক দায়িত্ব পালনের বাইরে কোনো ধরনের ব্যবসায়ীক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করবেন না। তার নিকটাত্মীয়দের কেউ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে কোনো ধরনের ব্যবসায়ীক লেনদেনে যুক্ত হবে না বলেও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন আবদুল্লাহ আল ক্বাফী।
ক্বাফী আরও অঙ্গীকার করেন, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন আইন) ২০০৯-এ বিধান না থাকলেও মেয়র নিজের কর্মকাণ্ড তদারকির জন্য একজন অবৈতনিক স্বাধীন ‘ন্যায়পাল’ নিয়োগ দেবেন। ন্যায়পাল তার সহকর্মীদের নিয়ে স্বাধীনভাবে সিটি মেয়রের কর্মকাণ্ড তদারকি এবং মেয়রের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ নগরবাসীর অভিযোগের নিষ্পত্তি করবেন।
ইশতেহার ঘোষণার আগে ঢাকা উত্তরের এ মেয়র প্রার্থীর রাজনৈতিক, পারিবারিক, সামাজিক এবং শিক্ষা জীবনের পরিচয় তুলে ধরেন সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।
এ সময় মঞ্চে ছিলেন, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, ড. আমু মোয়াজ্জেম হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক এম এম আকাশ, ক্ষেতমজুর সমিতির সভাপতি শামসুজ্জামান সেলিম, বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, সিপিবি নেতা সাজ্জাদ জহির চন্দনসহ আরও অনেকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৫
এমএইচপি/আইএ
** দুর্বৃত্তরা গ্রেফতার না হলে ক্বাফী’র অবস্থান কর্মসূচি