ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

‘নিরাপদ, আলোকিত ও চলমান ঢাকা’ গড়বেন মাহী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৫
‘নিরাপদ, আলোকিত ও চলমান ঢাকা’ গড়বেন মাহী ছবি:কাশেম হারুন / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: প্রজন্মের ভাবনা থেকেই প্রজন্মের নগরী গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরী জানিয়েছেন, নির্বাচিত হলে তার প্রধান তিনটি লক্ষ্য হবে- নিরাপদ, আলোকিত ও চলমান ঢাকা গড়া।
 
বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর হোটেল লেকশোরে তার নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশকালে মাহী বি. চৌধুরী এ কথা জানান।

ঈগল প্রতীক নিয়ে ডিএনসিসির মেয়র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশ’র যুগ্ম-মহাসচিব মাহী।

ইশতেহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত  ছিলেন  বিকল্পধারা বাংলাদেশ’র প্রেসিডেন্ট ও সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান,   মাহী বি. চৌধুরীর মা হাসিনা ওয়ার্দা চৌধুরী, মাহী বি. চৌধুরীর সহধর্মিনী আশফা হক লোপা প্রমুখ।
 
মাহী জানান, তিনি নির্বাচিত হলে দায়িত্ব গ্রহণের পর মেয়াদপূর্তির মধ্যে সব রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সমাজ ও সাধারণ নাগরিকদের ঐকমত্যের  ভিত্তিতে প্রজন্ম ভাবনাকে সম্পৃক্ত করে আগামী ৫০ বছরের লক্ষ্য নির্ধারণে একটি সামগ্রিক অগ্রগামী নগর পরিকল্পনা কঠামো প্রণয়ন করবেন।

মাহী বি. চৌধুরী তার ইশতেহারকে সাতটি অধ্যায়ে বিভক্ত করে বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে সেসবের সমাধানে করণীয় তুলে ধরেন।
 
এরমধ্যে প্রথম অধ্যায়ে রয়েছে প্রজন্ম ভাবনা থেকে প্রজন্ম শহর। দ্বিতীয় অধ্যায়ে রয়েছে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি।
 
প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গিতে কীভাবে কাজ করবেন তা উল্লেখ করে মাহী তার ইশতেহারে বলেন, কেবল ভোটারদের মন জয় করার উদ্দেশে সত্য ও বাস্তবতাকে গোপন করে অন্তঃসারশূন্য নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করা নয়। নির্বাচিত হলে যেসব সামাজিক অসমতা ও অপরাধগুলো রাজনৈতিক ও  সামাজিকভাবে এতকাল অস্বীকৃত ছিলো, প্রজন্ম শহর বির্নিমাণে সে বিষয়গুলো উন্মোচিত ও সমাধানের লক্ষ্যে যথাসম্ভব কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
 
মাহীর ইশতেহারকে স্মার্ট (Smart) উল্লেখ করে এর বিশ্লেষণে বলা হয়, S-Specific (সুনির্দিষ্ট) M-Measurable (গণনাযোগ্য), A-Achievable (অর্জনযোগ্য), R-Realistic (বাস্তবসম্মত), T-Time Bound (সময় নির্ধারিত)। এই স্মার্ট ইশতেহার বাস্তবায়ন করে প্রজন্মের নগরী গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন মাহী।

এই মেয়র প্রার্থী জানান, তিনি নির্বাচিত হলে সিএমসি-নাগরিক পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন, এনআরবি সাপোর্ট টিম গঠন, অ্যাডভোকেসি সাপোর্ট টিম গঠন, বাৎসরিক রিপোর্ট কার্ড প্রণয়ন ও টাউনহল মিটিং করা হবে।
 
মাহী বলেন, আমি মেয়র নির্বাচিত হলে ইশতেহারের উল্লিখিত অঙ্গীকারনামা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঢাকা উত্তর সিটিকে একটি প্রজন্ম শহর হিসেবে গড়ে তোলার ভিত্তি রচনা করবো। এজন্য তিনটি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে চাই। নির্বাচিত হলে প্রধান কাজই হবে নিরাপদ ঢাকা গড়া, চলমান ঢাকা এবং আলোকিত ঢাকা গড়া।

নিরাপদ ঢাকা গড়তে যা করা হবে
মাহী তার ইশতেহার প্রকাশ করে জানান, তিনি নির্বাচিত হলে নিরাপদ ঢাকা গড়তে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ চালু করবেন। বায়ু, শব্দ, পানি ও মৃত্তিকা দূষণরোধে উত্তর সিটি কর্পোরেশনে একটি বিশেষ বিভাগ চালু করবেন। নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তায় পর্যায়ক্রমে উত্তর সিটি কর্পোরেশনকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনবেন। জনসাধারণের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকল্পে উত্তরের সকল বাজারের পরিচ্ছন্নতা এবং হোটেল রেস্তোঁরার খাবারের মান নিশ্চিত করার জন্য সনদপত্র প্রদানের পদ্ধতি আধুনিকায়ন করবেন। উত্তরে একক বা যৌথভাবে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গড়ে তুলবেন। মা ও শিশু বিশেষ করে নিন্ম, মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবী শ্রেণীর জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে ন্যূনতম স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করবেন। ঢাকা শহরে কোনো উন্মুক্ত ডাস্টবিন থাকতে দেবেন না।
 
চলমান ঢাকা গড়তে যা করা হবে
মাহী জানান, চলমান ঢাকা গড়তে তিনি দেশীয় এবং সফল প্রবাসী বাংলাদেশি পরিবহন প্রকৌশলীদের পরামর্শক্রমে একটি যুগোপযোগী সামগ্রিক ট্রাফিক ব্যবস্থা প্রচলন করবেন। সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে সামগ্রিক ট্রাফিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যেগ নেবেন। ট্রাফিক জ্যাম নিয়ন্ত্রণ ও সহজীকরণের জন্য একমুখী ট্রাফিক ব্যবস্থা চালু করবেন। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে বহুতল কার পার্কিং চালু করবেন। এক্ষেত্রে বহুতল পার্কিং ব্যবসা হতে অর্জিত আয়ের ১০ বছর কর রেয়াতের জন্য সরকারকে সুপারিশ করবেন। যানজট নিরসনে শিক্ষার্থীদের জন্য এলাকাভিত্তিক সমন্বিত বাস সার্ভিস চালু করবেন। দিনের ব্যস্ততম সময়ে ব্যক্তিগত যানবাহনের ক্ষেত্রে ইলেক্ট্রনিক রোড প্রাইসিং (ইআরপি) চালু করবেন। যানজট কমাতে মোটর সাইকেল-ট্যাক্সি চালু করবেন। চাকরিজীবীদের জন্য এলাকাভিত্তিক মিনি-মাইক্রোবাস সার্ভিস চালু করবেন। জরুরি কাজ না হলে জনদুর্ভোগ নিরসনে বর্ষাকালে সড়ক খনন কাজ বন্ধ রাখবেন।

আলোকিত ঢাকা গড়তে যা করা হবে
বিকল্প ধারার মহাসচিব জানান, তিনি নির্বাচিত হলে মাদক সেবন বন্ধে অভিভাবক, শিক্ষক এবং ছাত্র সমাজের সচেতনতা বৃদ্ধি কবেন। ইভটিজিং বন্ধে গণসচেতনতা গড়ে তুলবেন। টোল ফ্রি নম্বর চালু করবেন এবং প্রয়োজনে গোপনীয়তা রক্ষা করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করবেন। নান্দনিক ঢাকা গড়ার লক্ষ্যে সৌন্দর্য বর্ধনে পরিকল্পিত নগর বনায়ন করবেন। লাল-সবুজের আধিক্য রেখে বিভিন্ন সড়কে, রাস্তায় ও পার্কে ফুলের বাগান সৃজন ও ল্যান্ডস্কেপিং, বিদ্যমান বিলবোর্ডগুলোকে ইলেকট্রনিক বিলবোর্ড করবেন। ঢাকা উত্তরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় মোড়ক উন্নত ও আলোকিত করবেন। হিজড়া সম্প্রদায়ের সামাজিক মর্যাদা ও নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কারিগরী শিক্ষার ব্যবস্থা চালু করবেন। হকারদের এলাকাভিত্তিক স্থান সুনির্দিষ্ট করবেন। ছিন্নমূল, উদ্বাস্ত ও গৃহহীনদের জন্য আশ্রয় স্থল নির্মাণ করবেন। সম্মানীত প্রবীণ নাগরিকদের নেতৃত্বে মেধাবী তরুণদের নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইনডিপেনডেন্ট কমিটি ফর ট্রান্সপারেন্সি (আইসিএফটি) গঠন করবেন।

এছাড়া, মাহী জানান তিনি নির্বাচিত হলে সিটি কর্পোরেশনে দক্ষ জনবল বৃদ্ধিতে নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবেন। পাশাপাশি দক্ষ জনবল ধরে রাখার জন্য যথাযথ মানব সম্পদ নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের জন্য স্বচ্ছতা নিশ্চিতকল্পে নৈতিক আচারণবিধি প্রণয়ন করা হবে। প্রতি বছর মেয়রের কর্ম মূল্যায়ন ব্যাখা সহকারে রিপোর্ট আকারে প্রকাশ করা হবে। প্রতি ত্রৈমাসিক টাউন হল সভার মাধ্যমে নাগরিকদের অভিযোগ শোনা হবে এবং সাথে মেয়রের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। ই-টেন্ডার পদ্ধতি চালু করা হবে।
 
নির্বাচিত হলে দায়িত্ব গ্রহণের ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনাও এসময় তুলে ধরেন তিনি। এসব কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে- কেন্দ্রীয় ও ওয়ার্ড ভিত্তিক নাগরিক এবং পর্যবেক্ষণ কমিটি কর্মপন্থা সহকারে গঠন করা। সরকারের জন্য সুপারিশ নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে অ্যাডভোকেসি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করা। মেয়রের পরামর্শের জন্য নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীদের সমন্বয়ে আমন্ত্রণ গ্রহণ স্বাপেক্ষে বিশেষ উপদেষ্টা কাউন্সিল গঠন করা। সিটি কর্পোরেশনের আয়ের উৎসের পরিধি বৃদ্ধি করা এবং জনগণের ওপর অযৌক্তিক করের  বোঝা না চাপিয়েও আগামী ৫ বছরে সিটি কর্পোরেশনের আয় বৃদ্ধির রূপরেখা ও কর্মকৌশল প্রণয়ন করা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৫
এসএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।