ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

বাংলানিউজকে তাবিথ

যেই হন মেয়র, জয় ঢাকাবাসীর

সাজেদা সুইটি, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৫
যেই হন মেয়র, জয় ঢাকাবাসীর ছবি:কাশেম হারুন / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: নিজের চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদেরই প্রশংসা বেশি করে ঝরলো ঢাকা সিটি নির্বাচনে উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের মুখে। বললেন, নির্বাচিত হলে সকল প্রার্থীই হবেন যোগ্য মেয়র।

আর তাই যিনিই জয়ী হন, সে জয় হবে ঢাকাবাসীর।

বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতা চলছিল তরুণ এই মেয়র প্রার্থীর।

কথা হচ্ছিল তেজগাঁও-লিংকরোডের রেগনাম টাওয়ারে তার নির্বাচনী কার্যালয়ে বসে। তবে এই ফাঁকে নিজের যশ-গৌরব-দক্ষতা-যোগ্যতার কথা তুলে ধরতেও ভুললেন না।

বাংলানিউজের মাধ্যমে কোটি ভোটারের কাছে তিনি পৌঁছে দিতে চান কিছু কথা যা একান্তই তার নিজের। যেসব কারণে উত্তরের ঢাকাবাসী তাকেই মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করবেন।

কি সেসব যোগ্যতা? সে প্রশ্নে পাঠকদের তথা ভোটারদের কাছে নিজেকে আরও সহজ করে প্রকাশ করতে চাইলেন তাবিথ আউয়াল।
 
আনিস, মাহী, সাকি যোগ্যপ্রার্থী
উত্তরে তাবিথের প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক, মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জোনায়েদ সাকিকে ঢাকার মেয়রপদে ‘যোগ্যপ্রার্থী’ বললেন তিনি।
 
তাবিথ বলেন, আমি গর্বিত যে, এমন যোগ্য প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে নির্বাচন করছি। আমি জেতার আশা রাখি, তবে না জিতলেও দুঃখ থাকবে না। কারণ যোগ্যের কাছে নগরের দায়িত্ব থাকুক- এটাইতো চেয়েছি। মেয়র যেই হোক, জয় কেবল ঢাকাবাসীরই হবে। ঢাকাবাসীতো আমিও।
 
আনিস, মাহী, সাকি যোগ্য সুশিক্ষিত ছাড়াও তারা সুদর্শন-স্মার্ট সে কথাও যোগ করতে ভুললেন না তাবিথ। তিনি বলেন, সবার পরিপাটি আচার-আচরণ আমাকে মুগ্ধ করে। এবার একসঙ্গে এতজন পছন্দের প্রার্থী দেখে আনন্দিত হয়েছি।
 
‘এমন ব্যক্তিদের প্রার্থী হওয়াই প্রমাণ করে, রাজনীতিতে নতুনের কেতন ওড়ার সময় হয়েছে। নতুন মানে বয়সে নয়, চিন্তা-চেতনা, চেহারা ও তৎপরতায় নতুন,’ বলেন তিনি।
 
মনোনয়ন ঘটনাটি কৌশলগত
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে এই তাবিথ আউয়াল। বাবা-ছেলে একসঙ্গে মনোনয়ন চাওয়ার বিষয়টি আলোচিত ও সমালোচিত। শেষ পর্যন্ত মিন্টুর মনোনয়ন বাতিল হয়। বিএনপি তাবিথকে প্রার্থী হিসেবে সমর্থন ঘোষণা করে।
 
এ নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। কিন্তু কিছু খোলাসা করেন নি কেউ।
 
এ প্রসঙ্গ টানতেই তাবিথ বলেন, ওটি ছিল কৌশল মাত্র। এ নিয়ে এখন আর কথা বলতে চাই না। শুধু এটুকু বলতে চাই, যা যা করেছি ও করছি সবই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও আমার বাবার পরামর্শে। তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে কৌশল বাতলে দিয়েছেন। আর এখনও শেখাচ্ছেন সবকিছু।
 
‘ম্যাডাম বুঝেছিলেন, ফিল্ড এখন ভালো’
তাবিথ বলেন, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) বুঝেছিলেন ফিল্ড এখন ভালো আছে। নির্বাচনে সবাই আগ্রহী। তাই তিনি পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, সবার কাছে আমার জন্য ভোট চেয়েছেন।

‘যা অনেক অনেক ইতিবাচক হয়েছে। আমি সত্যিই সৌভাগ্যবান!, বলেন একজন উচ্ছ্বসিত তাবিথ আউয়াল।
 
তিনি বলেন, নির্বাচন করবো অনেকিই ভাবেন নি। আমার নির্বাচন আসলে ১০ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে। এর আগে বিষয়টি নিশ্চিত ছিল না। এখন প্রতিদিন সবার কাছে যাচ্ছি, তারা কনভিন্সড হচ্ছেন।
 
‘জেতানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েছে জোট’
তাবিথ বলেন, বিএনপি একটি বড় দল, ২০ দলীয় জোটও বেশ বড় জোট। আমার নির্বাচন একেকজন একেকভাবে নেবেন- এটাই স্বাভাবিক। প্রথমদিকে যারা মেনে নিতে পারছিলেন না, তারাও বদলে যাচ্ছেন। আমি তাদের মন জয় করে নিয়েছি।
 
‘এখন সবাই জোটের স্বার্থে, নগরের স্বার্থে আমাকে আপন করে নিয়েছে। সেদিক থেকে আমি সৌভাগ্যবান। জোটের সবাই আমাকে জেতানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। প্রার্থী যেই হন, নিজেদের প্রার্থীকে জেতানোর চ্যালেঞ্জ জোটেরই, বলেন তিনি।
 
আমার আমি
এমন গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে নিজেকে কেন যোগ্য মনে করেছেন?
 
উত্তরে হাসেন তাবিথ, বলেন, তরুণদের জন্য সবাই কথা বলছে, কিন্তু সেই তরুণদের প্রতিনিধিত্ব করছি আমি। আমি এ যাবৎ এমন কোন মন্দ কাজ করিনি, যা নিয়ে কেউ আমাকে অপছন্দ করতে পারে। আমি উচ্চশিক্ষা নিয়ে নিজেকে দেশের যোগ্য সন্তান হিসেবে প্রমাণ করতে চেয়েছি।
 
‘আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো ফলাফল করে দেশের সম্মান বাড়িয়েছি। শুধু ক্লিন ইমেজে নয়, বরং সাফল্যের বিবেচনায়ও আমাকে সবাই পছন্দ করবেন বলে বিশ্বাস করি। দেশের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ, পারিবারিক জীবনযাত্রাসহ সব বিষয়ে আমাকে নগরের মানুষ আপন করে নেবেন বলেই আমার বিশ্বাস। ’

‘তারা জানেন, আমি তাদেরই একজন,’ বলেন তাবিথ আউয়াল।
 
বিতর্কিত করার চেষ্টা হচ্ছে
তাবিথ বলেন, ‘সরকার পক্ষ প্রথম থেকেই কোন না কোনভাবে বাধা দিচ্ছে। নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করছে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার একটি অনুষ্ঠান ছিল- তা করতে দেওয়া হয়নি। এতে অবশ্য অবাক হচ্ছি না। ’
 
তিনি বলেন, ‘এর আগে আমার বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংক মিথ্যা আপিল করে। এছাড়া গণমাধ্যমকর্মীদের কাউকে কাউকে দিয়ে এমন কিছু প্রশ্ন করানো হয়, যাতে আমি বেফাঁস কথা বলে ফেলি, যাতে আমি বিতর্কিত হই। মানুষ আমাকে যেন মন্দ ভাবে,’ অভিযোগ এই তরুণ মেয়র প্রার্থীর।
 
‘কিন্তু আমি ধৈর্য্যশীল। ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছি, ভালোভাবে কাজ করতে চাই,’ বলেন তিনি।
 
কোন সে আদর্শ শহর?
আদর্শ শহর বলতে কোনটিকে মডেল ধরে এগোচ্ছেন তাবিথ? সে প্রশ্ন ছিলো বাংলানিউজের পক্ষ থেকে।
 
উত্তরে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট শহরকে নয়, বিভিন্ন শহরের সুযোগ-সুবিধাগুলো আমাদের শহরে সমন্বিত করে ঢাকাকে আদর্শ করতে চেয়েছি।
 
যেমন- জাপানের ‘নগর কৃষি, মুম্বাইর স্কাই-ওয়াক, সিঙ্গাপুরের নিরাপদ জীবন- এসব ঢাকায়ও নিশ্চিত করতে চাই। সিঙ্গাপুর যদিও অনেক এগোনো, তবু তেমন পরিপাটি ও নিরাপদ স্থান হিসেবে রাজধানীকে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখি।
 
তাবিথ বলেন, ঢাকা হবে তেমনই এক শহর, যেখানে আমাদের ছেলে-মেয়েরা মাঝরাতেও নিরাপদে চলতে পারবে। মেয়েরা ধর্ষণ বা ইভটিজিংয়ের শিকার হবে না।
 
তিনি বলেন, পড়ালেখা ও চাকুরির সুবদে যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ বছর ছিলাম। সেদেশের নগরীগুলো দেখে তখনও মনে হয়েছে, ঢাকাকে এভাবেই গড়া যাবে।
 
স্ত্রী সন্তানের চোখে তাবিথ
আলাপচারিতার সময় পাশেই বসে ছিলেন স্ত্রী সওসান ইস্কান্দার।   বাংলানিউজকে তিনিও স্বামীর কাছে তার প্রত্যাশার কথা জানান।
 
সওসান বলেন, তরুণ, মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থী হিসেবে তাবিথকে মানুষ পছন্দ করছে। ভালো লাগছে যে, রাজনীতিতে জেনারেশন চেঞ্জ আসছে। আমি তাকে নিয়ে আশাবাদী।
 
সওসান বলেন, তিনি মেয়র হলে নারী নিরাপত্তা, ক্ষুদ্র বীমা ও স্বাস্থ্যবীমা নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে পারবো।
 
‘এছাড়া রানা প্লাজার মতো ঘটনা যেন না ঘটে, এসব ঘটনায় পূনর্বাসনের ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে ভিকটিমদের মানসিক কাউন্সিলিং দেওয়ার বিষয়ে তাকে সহযোগিতা করবো’- বলেন সওসান।
 
দুয়েক দিনের মধ্যেই স্বামীর হয়ে নিজেও প্রচারণায় নামবেন সওসান ইস্কান্দার। তিনি বলেন, সবাইকে বলতে চাই তাবিথ নগরের যোগ্য প্রতিনিধি’।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি শিক্ষক ও গবেষক হিসেবে কাজ করছেন সওসান।
 
বৃহস্পতিবার দুপুরে তাবিথ আউয়াল তার নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেন। এতে ১২ দফায় ৮৩টি পদক্ষেপে ‘আদর্শ শহর’ গড়ার অঙ্গীকার করেন তিনি।  
 
বাংলাদেশ সময় ১৮৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৫
এসকেএস/এমএমকে

** সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করবেন তাবিথ
** তাবিথের ইশতেহারে ১২ দফায় ৮৩ প্রতিশ্রুতি
** চলছে তাবিথের ইশতেহার ঘোষণার আয়োজন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।