ঢাকা: সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একক প্রার্থী সমর্থন দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটি করপোরেশনের ৯৩টি ওয়ার্ডের প্রায় অধিকাংশেই দল সমর্থিত প্রার্থী ছাড়াও আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ অবস্থায় দল সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা আশঙ্কা করছেন। তবে দল সমর্থিত প্রার্থীর বাইরে এখনও যারা নির্বাচনী প্রচারে রয়েছেন তাদের বসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলেও আওয়ামী লীগের ওই নেতারা জানান।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, গত বুধবার (১৫ এপ্রিল) রাতে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা সিটি নির্বাচন নিয়ে বৈঠক করেন। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের বাসায় অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে দল সমর্থিত প্রার্থীর বাইরে দলের যারা এখনও নির্বাচনে রয়েছেন তাদের বসে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের দল থেকে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বৈঠকে।
বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) তাদেরকে ফোন করে বসে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে দলের একক প্রার্থী সমর্থন দেওয়ার নির্দেশ দেন।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগের দিন গত ৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের দল সমর্থিত কাউন্সিলরদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। যারা দলের সমর্থন পাননি তাদেরকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশও দেওয়া হয়। কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রায় অধিকাংশ ওয়ার্ডেই একাধিক প্রার্থী এখনও নির্বাচনী প্রচারে রয়েছেন।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে বেশ কিছু ওয়ার্ডে একাধীক প্রার্থীর নাম জানা গেছে। তাদের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৩নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ফয়সাল বাশার ফুয়াদ। এ ওয়ার্ডে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে মাঠে রয়েছেন মোস্তাক আহমেদ ও মাহাবুব ফয়েজ। ২১নং ওয়ার্ডে দল সমর্থিত প্রার্থী ওসমান গণির বিরুদ্ধে নির্বাচনে রয়েছেন গোলাম মোস্তফা। ২২নং ওয়ার্ডে হাজী মো. লিয়াকত আলীকে সমর্থন সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তার বড় ভাই আক্কেল আলী বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী। এখানে আওয়ামী লীগের আরও রয়েছেন এ বি এম আহম্মদ উল্লাহ ও নুরুল ইসলাম। ২৪নং ওয়ার্ডে দল সমর্থিত প্রার্থী সফিউল্লাহ শফির বিরুদ্ধে রয়েছেন তালুকদার সারওয়ার হোসেন।
দক্ষিণে ১নং ওয়ার্ডে দলের সমর্থন পেয়েছেন ওয়াহিদুল হাসান মিল্টন। তার বিরুদ্ধে নির্বাচনে রয়ে গেছেন কাজী ফরিদ আহম্মদ তপন। ২নং ওয়ার্ডে দলের সমর্থন পেয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা আনিসুর রহমান। এ ওয়ার্ডে আব্দুল মান্নান ও কামরুল হাসান নামে আরও দু’জন নির্বাচন করছেন। ৩নং ওয়ার্ডে দল সমর্থিত মাকসুদ হোসেন মহসিনের বিরুদ্ধে নির্বাচন করছেন দলের অপর নেতা আফছার উদ্দিন। ৫নং ওয়ার্ডে দলের প্রার্থী আশরাফুজ্জামান ফরিদের বিরুদ্ধে নির্বাচনে রয়েছেন ইসমত তাকির ও ইসমাইল সরদার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যারা নির্বাচন করছেন তাদের প্রত্যেকের সঙ্গে দলের কিছু কর্মী রয়েছেন। তারা নির্বাচনী প্রচারে থাকলে দলের প্রার্থী বিপদে পড়বেন।
দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও উত্তর সিটি করপোরেশনে দলের পক্ষে নির্বাচন সমন্বয়কারীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্নেল (অব.) ফারুক খান বাংলানিউজকে বলেন, একক প্রার্থীর একটা চ্যালেঞ্জ তো আছেই। তবে সেটা কমে এসেছে। এখন আমরা মনে হয়, ২০ শতাংশ ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকতে পারেন। তাদের বসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আমরা আশা করছি, তারাও বসে যাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৫
এসকে/এএসআর