ঢাকা: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১২ নং সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী (বর্তমান ৩১, ৩৩, ৩৪) আলেয়া সারোয়ার ডেইজি। আওয়ামী লীগ সমর্থিত এই নারী কাউন্সিলর প্রার্থী পানপাতা প্রতীক চেয়েছিলেন কিন্তু লটারিতে পেয়েছেন মুলা।
এই প্রতীক নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি।
প্রচারণার সময় নানা ধরনের বাজে মন্তব্য শুনতে হচ্ছে তাকে। এমনকী স্বস্তি নিয়ে ভোটারদের কাছে যেতে পারছেন না ডেইজি।
বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুর টাউন হলে আওয়ামী লীগ অফিসে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপ হয় ডেইজির। মুলা প্রতীক নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে তিনি বলেন, মুলা কোনো প্রতীক হতে পারে না। এটা যারা সিলেকশন করেছেন তারা কাণ্ডজ্ঞানহীন। ভোটারদের কাছে গিয়ে কী বলবো? মুলা মার্কায় ভোট দিন?
মুলা কোনো রুচিশীল মার্কা নয় মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, এটার পরিবর্তন করা দরকার। দেশে আরও অনেক প্রতীক আছে, আম আছে, কাঁঠাল আছে, ফুলকপি আছে। কিংবা বই মার্কাসহ অন্য মার্কা দেওয়া যেতে পারতো।
সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদের জন্য ১০টি প্রতীক হলো- পিঞ্জর, টিস্যুবক্স, বৈয়ম, কেটলি, গ্লাস, পানপাতা, মুলা, মোড়া, শিলপাটা ও স্টিল আলমারি। সব মার্কা নিয়েই ক্ষোভ জানিয়েছেন মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
তাদের মধ্যে অন্যতম ঢাকা দক্ষিণের সংরক্ষিত আসন ৫ (১৩, ১৯ ও ২০ ওয়ার্ড) নংয়ের কাউন্সিলর প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার শম্পা বসু। তিনি রোববার (১২ এপ্রিল) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রতীক নিয়ে তার ক্ষোভের কথা জানান। পছন্দ না হলেও তাকে কেটলি প্রতীক নিয়ে লড়াই করতে হচ্ছে।
এ সময় তিনি বলেন, কেটলি, গ্লাস, পানপাতা, বৈয়াম, মোড়া, শিলপাটা, ঝুমঝুমি, দোলনা, প্রেসার কুকার, ভ্যানিটি ব্যাগ ও মুলা প্রতীক রাখা হয়েছে আমাদের জন্য। সব প্রতীকই ঘরের দ্রব্যাদির মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু নারীরা এখন আর ঘরের মধ্যে আবদ্ধ নয়। তাই নির্বাচন কমিশনের উচিত পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব দূর করা।
শুধু মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীরাই নয়, প্রতীক নিয়ে সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যেও অসন্তোষ আছে। তাদের মধ্যে অন্যতম ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী শেখ বজলুর রহমান। তিনি মিষ্টি কুমড়া প্রতীক নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। মোহাম্মদপুর ৩৩ নং ওয়ার্ডের মকবুল হোসেন ডিগ্রি কলেজ সংলগ্ন তার অফিসের সামনে গিয়ে দেখা গেলো, বড় বড় ৭টি আস্ত মিষ্টি কুমড়া ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এছাড়া কাগজ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বড় একটি কুমড়া। তবে প্রকৃতপক্ষে কুমড়া প্রতীক নিয়ে অস্বস্তিতে আছেন তিনি। প্রচারণার সময় শুনতে হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের হাস্যকর উক্তি।
শেখ বজুল বাংলানিউজকে বলেন, মিষ্টি কুমড়া প্রতীক নিয়ে মহা বিপদে পড়েছি। ভোট চাইতে গেলেই ভোটাররা একটা মুচকি হাসি দেয়। নির্বাচন কমিশন কুমড়ার বদলে অন্য প্রতীক দিতে পারতো। ভোটাররা সামনে কিছু না বললেও পিছনে কুমড়া নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন।
তিনি আরও বলেন, আমি চেয়েছিলাম ঠেলাগাড়ি কিন্তু লটারিতে ভাগ্যে মিলেছে মিষ্টি কুমড়া।
সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত ১২টি প্রতীক হলো- মিষ্টি কুমড়া, এয়ারকন্ডিশনার, করাত, ঘুড়ি, টিফিন ক্যারিয়ার, কাঁটা চামচ, ট্রাক্টর, ঠেলাগাড়ি, রেডিও, ঝুড়ি, ব্যাডমিন্টন র্যাকেট ও লাটিম।
অপর দিকে, অনেক প্রার্থী পছন্দের প্রতীক পেয়ে মহা খুশি। এদের মধ্যে অন্যতম ঢাকা দক্ষিণের মেয়রপ্রার্থী সাঈদ খোকন (ইলিশ মাছ) ও মির্জা আব্বাস (মগ), ঢাকা উত্তরের মেয়রপ্রার্থী আনিসুল হক (টেবিল ঘড়ি), চট্টগ্রাম সিটির মেয়রপ্রার্থী আ জ ম নাছির (হাতি)।
প্রতীক নিয়ে ক্ষোভ আছে এমন মেয়রপ্রার্থীও আছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম ঢাকা দক্ষিণের মেয়রপ্রার্থী আখতার উজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ। লটারিতে তিনি পেয়েছেন লাউ প্রতীক।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আয়াতুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, আমি প্রথমে ইলিশ মাছ প্রতীক চেয়েছিলাম। কিন্তু একই প্রতীক আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাঈদ খোকনসহ আমরা মোট ছয়জন প্রার্থী চেয়ে বসি। কিন্তু সাঈদ খোকন আমাদের বলেন, এই প্রতীকে নাকি তার পিতা সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফ নির্বাচন করেছিলেন। এরপর একে একে চারজন প্রার্থী ইলিশ মাছ প্রতীক ছেড়ে দেন। বাকি ছিলাম আমি। চেয়েছিলাম শেষ পযর্ন্ত লটরিতে গড়াবো। পরে জোরাজোরির কারণে ইলিশ মাছ ছেড়ে দিই। এরপর প্রতীক হিসেবে ঘাড়ে এসে পড়ে লাউ।
তিনি আরও বলেন, লাউ আমি চাইনি। এটা কোনো মেয়র পদের প্রতীক না। লাউ ঘাড়ে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৫
এমআইএস/আরএম/