ঢাকা: কোনো প্রকার পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই শনিবার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে হুট করে দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের জন্য ভোট চাইতে মাঠে নেমে পড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
এদিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কাউকে কিছু না জানিয়ে গুলশানের বাসা থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বচানে ‘আদর্শ ঢাকা আন্দোলন’র প্রার্থী তাবিথের পক্ষে ভোট চাইতে বেরিয়ে পড়েন খালেদা জিয়া।
নিজের নিরাপত্তা কর্মী, ব্যক্তিগত সহকারী, দলের একজন ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা দলের কয়েকজন নেতা-কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে সোজা চলে যান গুলশান-২ এর পিংকসিটি শপিং কমপ্লেক্সে।
সেখানে থাকা দোকানি, সাধারণ ক্রেতা এবং উৎসুক লোকজনের মধ্যে নিজ হাতে বিতরণ করেন তাবিথের ‘বাস মার্কার’ লিফলেট। হাসিমুখে প্রার্থনা করেন ভোট।
বিকেল পৌনে ৫ টায় পিংকসিটি থেকে বেরিয়ে গাড়ি বহর নিয়ে ধীর গতিতে এগুতে থাকেন গুলশান-১ নম্বরের দিকে। এ সময় রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে থাকা উৎসুক লোকজনের উদ্দেশে গাড়ির ভেতর থেকে হাত নাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে গুলশান-১ এর ডিসিসি মার্কেটে ঢোকেন বিএনপির চেয়ারপারসন। এখানেও দোকানি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে নিজ হাতে লিফলেট বিতরণ করেন। খালেদা জিয়ার আকস্মিক আগমনে অনেকটা বিস্মিত হন ব্যবসায়ী এবং সাধারণ ক্রেতা। এ সময় মার্কেটটির নীচ তলার বেশিরভাগ দোকানে গিয়ে তাবিথের জন্য ভোট চান তিনি।
বিকেল ৫টা ৫ মিনিটের দিকে গুলশান-১ এর গোল চত্বরে নাভানা টাওয়ার শপি কমপ্লেক্সে ঢোকেন খালেদা জিয়া। মার্কেটটির নিচতলায় থাকা ১৫/২০ টি দোকানে ঢু মারেন তিনি। এ সময় ক্রেতা-সাধারণ ও দোকানিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে তাবিথের জন্য ভোট চান বিএনপি প্রধান।
বিকেল ৫টা ২০ মিনিটের দিকে সেখান থেকে বেরিয়ে গুলশান-বাড্ডা লিংকরোড হয়ে উত্তর বাড্ডার দিকে রওয়ানা হন খালেদা জিয়া। এ সময় গাড়িতে বসেই গুলশান-বারিধারা লেকের পাড়ে সবজি ও ফল বিক্রেতাদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করেন তিনি।
বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ বাড্ডার প্রগতী সরণিতে পৌঁছালে মধ্য বাড্ডা থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত রাস্তা ফাঁকা করে দেয় পুলিশ। তবে পেছন থেকে রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।
পেছনে তীব্র যানজট থাকলেও খালেদার গাড়ি বহর সামনের ফাঁকা রাস্তা দিয়ে এগুচ্ছিলো কচ্চপ গতিতে। এ সময় লিংরোড থেকে আমেরিকান অ্যাম্বাসি পর্যন্ত পৌঁছাতে খালেদা জিয়া সময় নেন প্রায় আধাঘণ্টা। ধীর গতির গাড়িতে বসেই চালান তাবিথের নির্বাচনী প্রচারণা।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর পৌঁছে বনানী সুপার মাকের্টে। এ সময় মার্কেটের সরু পথ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। নিজ হাতে বিতরণ করেন তাবিথ আউয়ালের লিফলেট।
বনানী সুপার মার্কেট থেকে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে বেরিয়ে বনানী ১১ নম্বর সড়ক দিয়ে ভোট চাইতে চাইতে সামনের দিকে এগোন খালেদা জিয়া। সন্ধ্যা ৭টার দিকে সেখানে উপস্থিত হন মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। তবে সেখানে বেশি সময় থাকেননি তাবিথ। খালেদা জিয়ার কাছ থেকে দোয়া নিয়ে চলে যান তিনি।
এর পরের যাত্রা সোজা মহাখালী আন্তঃজেলা বাসটার্মিনাল। তবে যাবার পথে মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে ফুট পথের দোকানিদের কাছে গাড়িতে বসেই ভোট চান খালেদা জিয়া।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ মহাখালী আন্তঃজেলা বাসটার্মিনালে পৌঁছে বাসকাউন্টার কর্মী, পরিবহন শ্রমিক ও সাধারণ যাত্রীদের কাছে ভোট চান তিনি। রাত পৌনে ৮টায় সেখান থেকে বেরিয়ে তেজগাঁও কলোনি বাজার হকার্স মাকেটে যান খালেদা জিয়া। সেখানেও গাড়িতে বসেই তাবিথের জন্য ভোট চান।
এরপর তেজগাঁও-গুলশান লিংকরোড দিয়ে বের হয়ে সোজা হাতিরঝিলে যান খালেদা জিয়া। হাতিরঝিলের গুলশান প্রান্ত দিয়ে ঢুকে খালেদা জিয়ার গাড়ি বহর প্রথমেই পৌঁছে রামপুরা ব্রিজ প্রান্তে। সেখানে গাড়ি থামিয়ে বেশ কিছু সময় গাড়িতে বসেই পার করেন তিনি।
এ সময় সাধারণ দর্শনার্থী ও উৎসুক লোকদের ডেকে খালেদা জিয়ার গাড়ির কাছে আনেন মহিলা ও ছাত্রদল কর্মীরা। এ সময় গাড়ির ভেতরে বসেই মানুষের অভিভাদনের জবাব দেন বিএনপির চেয়ারপারসন।
হাতিরঝিলের রামপুরা প্রান্তে কিছু সময় কাটিয়ে মগবাজারপ্রান্ত দিয়ে পশ্চিমের দিকে অগ্রসর হন খালেদা জিয়া। এরপর হাতিরঝিলের ওপর তৈরি মগবাজার-গুলশান সংযোগ সেতুতে পৌঁছে গাড়ি থেকে নামেন ২০ দলীয় জোটের নেত্রী। এ সময় দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষ খালেদা জিয়ার সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন।
এদের মধ্যে একজন খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে বলেন, ম্যাডাম আমরা ইতিবাচক রাজনীতি চাই। তখন বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, আমরা সব সময় পজেটিভ রাজনীতি করি। সেই জন্যই তরুণদের বেছে নিয়েছি। ওকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন, তাহলে আপনারা ইতিবাচক রাজনীতিই পাবেন। আর যারা নেতিবাচক রাজনীতি করছে তাদের বর্জন করুন।
সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষে গাড়িতে চেপে বসেন খালেদা জিয়া। গাড়িবহর ব্রিজের ওপর উঠে ইউটার্ন নিয়ে ফের মগবাজার প্রান্ত দিয়ে মগবাজার তেজগাঁও সংযোগ সেতুতে পৌঁছালে সেখানেও কিছু সময় পার করেন তিনি।
সেখান থেকে হাতিরঝিলের ঝিলপাড় ব্রিজ পার হয়ে তেজগাঁও প্রান্ত দিয়ে গুলশান-১ হয়ে রাত সাড়ে ৯টায় বাসায় ফিরে যান খালেদা জিয়া।
কাউকে না জানিয়ে হঠাৎ ভোটের জন্য মাঠে নেমে পড়ায় খালেদা জিয়ার গণসংযোগে নেতা-কর্মীদের বাড়তি ভিড় ছিলো না। কেবল মাত্র দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, ঢাকা মহানগর মহিলা দলের সভানেত্রী সুলতানা আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা পারভীন, শামা ওবায়েদসহ কয়েকজন মহিলাদল নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন। এ ছাড়া দলের শীর্ষ বা পরিচিত কোনো নেতা তার সঙ্গে ছিলেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নেতা-কর্মীদের বাড়তি ভিড় এড়াতেই পূর্ব ঘোষণা ছাড়া ভোটের জন্য শনিবার বিকেলে মাঠে নেমেছিলেন খালেদা জিয়া।
তবে গুলশান-১ ও গুলশান-২ এর মার্কেটগুলোতে প্রচারণা চালানোর সময় স্থানীয় দোকানি ও সাধারণ ক্রেতাদের প্রচণ্ড ভিড় ঠেলেই সামনে এগুতে হয়েছে বিএনপি নেত্রীকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৫/ আপডেট: ১৭১১ ঘণ্টা/ আপডেট: ১৭৩৬ ঘণ্টা/ আপডেট: ১৮২১ ঘণ্টা/ আপডেট: ১৯১৬ ঘণ্টা/ আপডেট: ২০১১ ঘণ্টা/ আডডেট: ২১১৫ ঘণ্টা/এপ্রিল ১৯, ২০১৫/আপডেট: ০১১৩ ঘণ্টা
এজেড/জেএ/জেডএম/এটি/
** ভোটের মাঠে নেতিবাচক রাজনীতি বর্জনের আহবান খালেদার