ঢাকা: নির্বাচিত হয়ে নাগরিকদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে যাবেন না সিটির মেয়র। জয়ের আগে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো শুধু ‘কেতাবে না রেখে গোয়ালেও’ সুলভ করুন।
সিটি নির্বাচনে ঢাকার (উত্তর ও দক্ষিণ) মেয়রপ্রার্থীদের প্রতি এমন আহ্বান রাখেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম।
সোমবার (২০ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে একটি পত্রিকা অফিসে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখছিলেন তিনি।
‘আমি যদি মেয়র হই’ শিরোনামের এ বৈঠকে অংশ নেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ, উত্তরের মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক, তাবিথ আউয়াল, মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মো. জোনায়েদ আব্দুর রহিম সাকি, আবদুল্লাহ আল ক্বাফী ও দক্ষিণ থেকে আসেন প্রার্থী সাঈদ খোকন।
নজরুল বলেন, প্রতি মুহুর্তে সাড়া দেবেন মানুষের যোগাযোগের। তথ্য সেন্টার রাখবেন। যাতে কেউ ফোন দিলে উত্তর পান। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি করতে পারেন। অ্যাডভোকেসির প্রয়োজন রয়েছে। শহরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী, সচল করতে হবে।
তিনি বলেন, যত পারেন, ভোটারকে কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। অন্তত ৬০ ভাগ মানুষকে কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। আশা করি, এতজন প্রার্থী যেহেতু, ভোটার হয়তো আসবে।
প্রার্থীদের উপস্থিতিতে নাগরিকদের পক্ষে এসব আহ্বান ও পরামর্শ রাখেন এ নগরবিদ।
এর আগে প্রার্থীরা নিজেদের কথা বলেন।
আনিস বলেন, প্রথমত, একটি ভালো নির্বাচন প্রয়োজন। নিরাপদ নগর, নারী নিরাপত্তা, বর্জ্যমুক্ত শহরের কথা সবাই ভাবছি। সব ক্ষমতা একজনের হাতে থাকে না। একটি সমন্বিত যাত্রা প্রয়োজন। এলাকায় এলাকায় সমন্বিত কমিটি করতে হবে। তাহলেই নগর ভবনকে নাগরিক ভবনে পরিণত করা যাবে।
খোকন বলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে প্রথম দিনই ‘ঢাকা ডায়লগ’ শিরোনামে ঢাকাবাসীকে নিয়ে আলোচনায় বসবো।
তাবিথ বলেন, যতই অস্বীকার করা হোক, অপরাধ হচ্ছে, সেগুলো বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, কেন ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা বাড়ছে? নিরাপত্তার এ অভাব দূর করা হবে। ক্রাইম কমাতে ওয়ার্ডভিত্তিক একটি ‘ম্যাপিং সিস্টেম’ করবো।
মেয়র হলে সমাজে অব্যাহতভাবে কন্যাশিশু নিপীড়ণের প্রতিকার করবো, বলেন মাহী।
সাকি বলেন, নগরের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনে কঠোরতার সঙ্গে প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
ক্বাফি বলেন, মেয়র হিসেবে সুবিধা নেবো না। নিজের সম্পদের হিসেব দেবো। আত্মীয়দের কোনো পদে জড়িত করবো না। মেয়রের ভাতার বাইরে কোনো আয় থাকবে না। ঘুষ, দুর্নীতি থেকে নিজেকে বিরত রাখবো। ন্যায়পাল নিয়োগ থাকবে, মেয়রের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ নগরবাসীর অভিযোগের বিচার করবেন তিনি।
সব প্রার্থীর বক্তব্য শোনার পর নজরুল ইসলাম বলেন, সবার কথা শুনে মনে হচ্ছে, এতদিন কোথায় ছিলেন? কথা শুনে বোঝা যাচ্ছে, সবাই প্রতিভাবান, নেতৃত্বগুণ সম্পন্ন, অসাধারণ।
আশা করবো এসব প্রতিশ্রুতি ‘কেতাবে আছে গোয়ালে নেই’ গোছের কিছু হবে না। বাস্তবায়িত করবেন নিজেদের প্রতিশ্রুতি।
তিনি বলেন, সময় করে নাগরিকদের সঙ্গে কথাবার্তা বলবেন। তথ্য সেন্টারের গুরুত্ব খুব বেশি। তাদের কাছে তথ্য সুলভ করবেন।
কলাম্বিয়ার এক নেতার উদাহরণ টেনে নজরুল বলেন, সে নেতা বস্তিতে গিয়েও থাকতেন, মানুষের কষ্টের কথা শোনার জন্য।
সুশাসনের নির্দেশকগুলো মেনে চলার আহ্বান জানান নজরুল, বলেন, সততা থাকতে হবে সব কাজে।
বৈঠকে উত্তরের ৫ প্রার্থী ও দক্ষিণের এক প্রার্থী ছিলেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই মেয়রপ্রার্থী উপস্থিত থাকলেও, বিএনপি সমর্থিত দুই প্রার্থীর মধ্যে ছিলেন কেবল উত্তরের তাবিথ।
আয়োজকরা জানান, বৈঠকে দক্ষিণের প্রার্থী মির্জা আব্বাসকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি অপারগতা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৫
এসকেএস/এসইউজে/জেডএস