ঢাকা: আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নাগরিকদের ওপর একটি সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক। ঢাকা উত্তরের ৩৬টি ওয়ার্ডের ৭৬ হাজার ৭৩৫ জন নাগরিকের সঙ্গে কথা বলে সমীক্ষা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
সোমবার (২০ এপ্রিল) বেলা পৌনে ৩টায় গুলশান স্পেকট্র্রা কনভেনশন সেন্টারে ‘নাগরিক সমস্যা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক এ জরিপ সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, স্থপতি ইকবাল হাবিব, নগর পরিকল্পনাবিদ প্রফেসর নজরুল ইসলাম, প্রফেসর আবুল কাশেম, আনিসুল হকের সহধর্মীনি রুবানা হক প্রমুখ।
সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরিতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনকে ৫টি জোনে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে জোন: ১-এ রয়েছে উত্তরা এলাকা, জোন: ২-এ মিরপুর, পল্লবী, জোন: ৩-এ গুলশান, জোন: ৪-এ মিরপুর, কাজীপাড়া, গাবতলী, জোন: ৫-এ রয়েছে কারওয়ানবাজার।
পাঁচটি জোনের ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ৬২ দশমিক ৬৩৮ বর্গকিলোমিটার। এরমধ্যে আয়তনে বৃহত্তম জোন-২, আর ক্ষুদ্রতম জোন-১। ঢাকা উত্তরের জনসংখ্যা ৩৭ লাখ ৭৩ হাজার। উত্তরে হোল্ডিং রয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৬টি (তথ্যসূত্র: বিবিএস)।
জরিপে উত্তরদাতাদের ৮৯ দশমিক ৫৩ শতাংশের বয়স ২০ থেকে ৫০ বছর। এছাড়া ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশের বয়স ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে। উত্তরদাতাদের মধ্যে ৬৯ দশমিক ৪০ শতাংশ মধ্যবিত্ত শ্রেণির। এছাড়া ২১ দশমিক ১৪ শতাংশ নিম্নবিত্ত ও ৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ উচ্চবিত্ত শ্রেণির নাগরিক।
এসব নাগরিকদের জরিপে দেখা গেছে ঢাকা উত্তরের প্রধান সমস্যা মশা, পথঘাটের বেহাল দশা, বাড়ি ভাড়া ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এছাড়া রয়েছে নিরাপত্তার সংকট, গণপরিবহণের অভাব, দুর্নীতি, জলাবদ্ধতা, পরিবেশ দূষণ, মাদকসহ আরও বেশকিছু বিষয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মশা ৬৮ দশমিক ৩ শতাংশ, রাস্তাঘাট ৪৪ শতাংশ, বাড়ি ভাড়া ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ, ড্রেনেজ ৩০ শতাংশ, মাদক ২৭ দশমিক ২ শতাংশ, পরিবেশ ২৫ দশমিক ৪ শতাংশ, বেকারত্ব ২৫ দশমিক ২ শতাংশ, জলাবদ্ধতা ২৫ দশমিক ২ শতাংশ, ডাস্টবিন সমস্যা ২৩ শতাংশ, পানীয় সমস্যা ২২ শতাংশ, টয়লেট ১৯ শতাংশ, ছিনতাই ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ, বর্জ্য ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ, ফরমালিন ১৫ শতাংশ, দুর্নীতি ১৪ শতাংশ, গ্যাস ১২ শতাংশ, ফুটপাত ১১ দশমিক ৬ শতাংশ, মাঠ ১১ শতাংশ, পানি ১০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বাহনকে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ নাগরিক সমস্যা হিসেবে মতামত প্রকাশ করেন ।
নগরীর এসব সমস্যা জরিপ করতে সহায়তা করেছে গবেষণা সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড রিসার্চ অ্যান্ড কন্সাল্টিং লিমিটেড (আইআরসি)। এতে ১৬ জন সুপারভাইজার ও ৪ জন জরিপ বিশেষজ্ঞ ২০ হাজার ২১২টি উত্তর পর্যালোচনা করেছেন। ২৪৭ জন তথ্য সংগ্রাহক মোট ১৮টি বিষয়ে নাগরিকদের কাছ থেকে তথ্য নিয়েছেন।
পরিচ্ছন্ন-সবুজ ঢাকা:
পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়তে মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করবেন। ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, বর্জ্যের আধুনিক ব্যবস্থাপনা, ওয়ার্ড, রাস্তা ও বাড়ি ভিত্তিক পরিকল্পিত বৃক্ষায়ণ, লেক মাঠ পার্ক পরিষ্কার ও উন্নয়ন করা হবে।
নিরাপদ-স্বাস্থ্যকর ঢাকা:
ফরমালিনমুক্ত বাজার ও নিরাপদ খাবার পানীয় নিশ্চিত করা হবে। মাদক প্রতিরোধ, আধুনিক টয়লেট ও দূষণ ও ধুলোবালি নিয়ন্ত্রণে কাজ করা হবে।
সচল ঢাকা গড়তে যা করবেন:
গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, বাস ও বাসস্ট্যান্ডের ব্যবস্থা করা হবে। সড়ক সংস্কার এবং ফুটপাতকে প্রশস্ত করা, জেব্রাক্রসিং, পথচারী সংকেত কমিউনিটি ট্রাফিক প্রচলন,পার্কিং কাম কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স নির্মাণ, নগর সাইকেল ব্যবহার উৎসাহিত করা।
নাগরিক সেবার ঢাকা:
শ্রমজীবী ও স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বসস্থান করা হবে। পানি বিদ্যুৎ গ্যাস ব্যবস্থার উন্নয়নে সমন্বিত উদ্যেগ গ্রহণ করা হবে। কর্মসংস্থান ও নতুন উদ্যোক্তা তৈরির প্রণোদনা ও ব্যবস্থা করা হবে।
নাগরিক নিরাপত্তা ও অধিকারের ঢাকা:
সিসিটিভির মাধ্যমে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে। নাগরিক তথ্য কেন্দ্র স্থাপন, সবধরনের সেবাকে ডিজিটাল করা, তথ্যসমৃদ্ধ মোবাইল অ্যাপ চালু করা, সেবা অভিযোগ, সমস্যা সমাধানে ২৪ ঘণ্টার হটলাইন চালু করা হবে।
অংশগ্রহণমূলক ও সুশাসিত ঢাকা:
নগরসভা, ওয়ার্ডসভা ও নগর উন্নয়ন উপদেষ্টা কাউন্সিল গঠন করা হবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত করা, দুর্নীতি রোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ, ডিএনসিসির নিজস্ব মনিটরিং ব্যবস্থা।
নগরে নিরাপদ নারী:
নারীদের জন্য শিক্ষা স্বাস্থ্য বাসস্থান কর্মসূচি নেওয়া হবে। নারীসহ সকলের জন্য পর্যাপ্ত আধুনিক টয়লেট, নারীদের জন্য বিশেষ বাস সার্ভিস চালু করা হভে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ডে কেয়ার সেন্টার কাম প্রি-স্কুল নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে ছাত্রী ও কর্মজীবী নারীদের জন্য হোস্টেল নির্মাণ করা হবে।
স্মার্ট ঢাকা গড়তে যা করবেন:
পাবলিক স্পেসে ফ্রি ওয়াইফাই চালু, ই-লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা, ডিজিটাল বুলেটিন বোর্ড স্থাপন করা হবে। প্রয়োজনীয় তথ্যসমৃদ্ধ মোবাইল অ্যাপ চালু করা, কর্পোরেশনের সব সেবাকে ডিজিটাল করা, ই-সেবা চালু করা হবে।
আনিসুল হক বলেন আমি মেয়র নির্বাচিত হলে যেসব সমস্যা চিহ্নত করা হয়েছে সেগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধান করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৫
এসএম/এমজেএফ