ঢাকা: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থী ও ভোটারদের কাছে তরুণদের চাওয়া-পাওয়া তুলে ধরতে তারুণ্যের ইশতেহার প্রকাশ ও প্রার্থীদের বিতর্ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সোমবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে ফার্মেগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে ‘মিট দ্য ঢাকা’ নামে মেয়র প্রার্থীদের এ বিতর্ক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এর আগে ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেটিকস অ্যান্ড ডেভেলাপমেন্ট (আইআইডি) তারুণ্যের ইশতেহার প্রনয়ণ করে। জনমত সংগ্রহ, প্রাসঙ্গিকতা যাচাই, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, প্রচার ও পর্যবেক্ষণ করে যেসব বিষয়ে মেয়রের পদক্ষেপ দরকার সেগুলো তুলে ধরা হয়।
তারুণ্যের ইশতেহারে ঢাকার উন্নয়নে ছয়টি বিষয়ের প্রাধান্য দেওয়া হয়। এগুলো হচ্ছে- জনস্বাস্থ্য ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নিস্কাশন ব্যবস্থা, পানি সরবরাহ, যানজট, সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা।
উন্মুক্ত বিতর্ক অনুষ্ঠানে এ ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মেয়র প্রার্থীদের পরিকল্পনা জানতে চান তরুণেরা। প্রার্থীরা একে একে এসব বিষয়ে নিজেদের কর্মপরিকল্পনার কথা জানান। এছাড়াও এই উন্মুক্ত বিতর্কে আলোচনা হয় নারীর জন্য নিরাপদ ঢাকা গড়ার বিষয়েও।
আলোচনায় সব প্রার্থীরা একই সুরে কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকন বলেন, বিশ্বের পরিচিত শহরগুলোর মতো ঢাকায় নাগরিক সেবা না থাকলেও নিজস্বতা আছে। নির্বাচিত হলে মায়া বন্ধনের ঢাকাকে বাসযোগ্য করে জনজীবনের মানোন্নয়ন করবো।
তিনি বলেন, সুন্দর ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য বর্জ্য অপসারণের দায়িত্ব পঞ্চায়েতের হাতে দিয়ে দেবো। পানি নিস্কাশন ব্যবস্থাপনার জন্য ড্রেনগুলো প্রশস্ত ও গভীর করবো। ওয়াসার সঙ্গে সমন্বয় করে স্যুয়ারেজ লাইনেরও সংস্কার করবো।
সাঈদ খোকন বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে অনেক স্নেহ করেন। তার এই স্নেহকে ঢাকাবাসীর জন্য কাজে লাগাতে চাই। আর এর মাধ্যমে ৫২টি প্রতিষ্ঠান ও ২০টি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় সেল করবো। এতে ঢাকার কাজ অনেকটা এগিয়ে যাবে।
যানজট নিরসনে সরকারের সাফল্যের চিত্র তুলে ধরে সাঈদ খোকন বলেন, ফ্লাইওভারগুলোর কাজ শেষ হলে কিছুটা হলেও যানজট নিরসন হবে। ড্রাইভারদের মধ্যে সচেতনতার সৃষ্টি করতে হবে। অন্তত ঢাকা শহরের ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে মিনিমাম ট্রেনিং থাকতে হবে। গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার ক্ষেত্রে একজন, দু’জন বা কয়জন চলে এটা নির্ণয় করবো। সাইকেল চালানোর উৎসাহ যোগাতে কাজ করবো। এছাড়াও যানজট নিরসনে কনসালটেন্ট নিয়োগ করে তার পরামর্শ অনুয়ায়ী ধাপে ধাপে কাজ করবো।
বিনোদনের ব্যবস্থা নিয়ে সাঈদ খোকন বলেন, ৫৭টি খেলার মাঠের মধ্যে ১৩টি মাত্র উন্মুক্ত। নির্বাচিত হলে দখলকৃত মাঠগুলো দখলমুক্ত করা আমার প্রথম কাজ হবে। দখলদারদের কোনো রকম ছাড় দেওয়া হবে না।
সরকারি দলের বিভিন্ন সংগঠন ছাত্রলীগ-যুবলীগ দখলে প্রভাব ফেলে। ক্ষমতাসীনদের তাদের সঙ্গে ‘কম্প্রোমাইজ’ করতে দেখা যায়। আপনি এর সমাধান কীভাবে করবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সাঈদ খোকন বলেন, আমি নিশ্চিত করতে চাই, গ্যারান্টি দিতে চাই। এমন ‘কম্প্রোমাইজ’ সাঈদ খোকনের সঙ্গে হবে না। যারা অপরাধ করে তারা ছাত্রলীগ-যুবলীগের নামধারী। তাদের আমি চিনি। ব্যবস্থাও নিতে পারবো। মূলত, ছাত্রলীগ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং সাধারণ ছাত্রদের সংগঠন। ছাত্রলীগের জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো কি-না সন্দেহ।
শিক্ষার জন্য সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করবেন ও ওয়াইফাই ঢাকা করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
নারীর জন্য নিরাপদ ঢাকার বিষয়ে সাঈদ খোকন বলেন, বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যা ঘটেছে, সেটার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার নেই। আমি জানি না, ওই ঘটনা আমাদের নববর্ষ বরণের চেতনা স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য কি-না? যদি তাই হয়ে থাকে, তারা ভুল করেছে। তিনি নারী নির্যাতন রোধ, বিবাহ বিচ্ছেদে নিরুৎসাহিত করার সামাজিক সচেতনতা তৈরি করা এবং নগরে নারীরে প্রাধান্য দেওয়ার কথাও বলেন।
গোলাম মাওলা রনি বলেন, নগরের পুঞ্জীভূত সমস্যাগুলো সীমিত অর্থ ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মধ্য দিয়ে সমাধানের কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছি। নিজেকে ঢাকার সৎ, যোগ্য অভিভাবক হিসেবে উপস্থাপন করবো। যারা মাঠ দখল করে বা অপরাধ করে তারা ছাত্রলীগ-ছাত্রদল, যুবলীগ-যুবদল বড় কথা নয়, অপরাধকে অপরাধের দৃষ্টিতেই দেখবো। শিক্ষার সুযোগ সুযোগ বৃদ্ধিতে সেন্ট্রাল লাইব্রেরি ও ডিজিটাল লাইব্রেরি করার পরিকল্পনা আছে। সিটি করপোরেশনের ডিবেটিং ক্লাব করবো। যারা আন্তর্জাতিকভাবে ডিবেট করবে। নারীর সম্পর্কে নগরবাসীর দৃষ্টিভঙ্গি ইতিবাচক করতে সরকারি/বেসরকারিভাবে প্রচারণা চালাবো। আত্মপ্রত্যয়ে নারীদের প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করবো।
জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী সাঈফুদ্দিন মিলন বলেন, দলের মোহে আবদ্ধ না হয়ে বিবেকের তাড়নায় সৎ-যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করুন। সুন্দর বসবাসের যোগ্য ঢাকা করবো।
তিনি ভারতের কেজরিওয়ালের মতো শুরু করতে চান। মিলন বলেন, শুরু করতে হবে ভারতের কেজরিওয়ালের মত। দিল্লির মানুষ তাকে যে রায় দিয়েছে, এটা সততার রায়। আমি নিজেও সৎ। সততা দিয়ে ঢাকাবাসীর জন্য কাজ করতে চাই।
জাসদ সমর্থিত প্রার্থী শহীদুল ইসলাম বলেন, আমার প্রতীক ‘বাস’। এই ‘বাস’ কিন্তু পেট্রোল বোমায় পোড়ানো নয়। বাসে আগুন দেওয়ার প্রতিবাদেই আমি এই প্রতীকে নির্বাচন করছি।
তিনি বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার রি-সাইক্লিং করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবো। ছাত্রলীগ করেই মুক্তিযুদ্ধ করেছি। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কিছু শুনলে কষ্ট পাই। যারা ছাত্রলীগের নামধারী, তারা এই সংগঠনটির মান ক্ষুন্ন করছেন। তাদের কাছে আমার অনুরোধ, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এ সংগঠনটিকে কলুষিত করবেন না। খেলার মাঠ বেদখল এবং অপশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে স্থানীয় সরকারকে ক্ষমতা দিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৫
এসইউজে/এএসআর