ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

ফেঁসে যেতে পারেন জাপা মহাসচিব

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৫
ফেঁসে যেতে পারেন জাপা মহাসচিব জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু

ঢাকা: চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় ফেঁসে যেতে পারেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। তার ভাগ্য নির্ধারণে আগামী বুধবার (২২ এপ্রিল) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দলের জরুরি প্রেসিডিয়াম সভা ডেকেছেন বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র।


 
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে সোলায়মান আলম শেঠকে সমর্থন দিয়েছে জাতীয় পার্টি। কিন্তু জাতীয় পার্টির মহাসচিব চট্টগ্রামে গিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজম নাজিরের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সেই প্রচারণার ভিডিও এরশাদের হাতে পৌছে দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে একাধিক দলীয় সূত্র।
 
একাধিক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, মহাসচিবের এই ভূমিকায় দলের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে। নিষ্ক্রিয় থাকা মহাসচিব বিরোধী গ্রুপটি সরব হয়ে উঠেছে। তারা একযোগে মহাসচিবকে বহিষ্কারের দাবি তুলেছে।
 
বিভিন্ন এলাকায় নতুন কমিটি গঠনের সময় ‍পদবঞ্চিত এবং পুরাতন কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ার কারণে যারা ক্ষিপ্ত ছিলেন তারাও এখন একাট্টা হয়ে মাঠে নেমেছেন। এমনকি এতদিন যারা মহাসচিবপন্থি বলে পরিচিত ছিলেন তারাও তার পাশ থেকে সরে গেছেন, অথবা নীরব ভূমিকা পালন করছেন।

বলতে গেলে ৪০ সদস্যের প্রেসিডিয়াম সভায় পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও তাজ রহমান ছাড়া আর কেউ নেই বাবলুর পাশে।
 
যদিও কারো কারো দাবি, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদও অন্তর দিয়ে বাবলুর পক্ষে নেই। এক-এগারোর সময় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন আনিসুল ইসলাম। সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে সব সময় বাবলুর পরে বক্তব্য রাখতেন তিনি। আগের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারও আনিসুল ইসলামের আগেই বক্তব্য রাখতেন।
 
কিন্তু বাবলু মহাসচিব হওয়ার পর রাজশাহীতে গিয়ে আনিসুল ইসলামের পরে বক্তব্য রাখেন। সেই থেকে সম্পর্কে চিড় ধরেছে। তবে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেননি নানা হিসেব-নিকেশের কারণে।
 
অন্যদিকে ভোটের সময় রওশনপন্থি থাকলেও মহাসচিবের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তার সঙ্গে সাপে নেউলে সম্পর্ক বিরাজ করছে জাপা মহাসচিবের। বিশেষ করে বিরোধীদলীয় উপনেতা নিয়োগ ইস্যুতে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয়। কারণ রওশন এরশাদ চেয়েছিলেন কাজী ফিরোজ রশীদকে বিরোধীদলীয় উপনেতা নিয়োগ দিতে।
 
এ জন্য সংসদীয় দলের বৈঠক দেখাতে এমপিদের কাছ থেকে স্বাক্ষর চেয়েছিলেন রওশন এরশাদ। কিন্তু তাতে স্বাক্ষর না দিয়ে উল্টো এরশাদকে দিয়ে নিজের নামে পাল্টা ডিও লিখে নেন বাবলু।

পার্টির অপর সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদের এর সঙ্গে শুধু হাতাহাতি বাকি রয়েছে। ২০১৪ সালের ২৫ জুন আইডিইবি ভবনে জাতীয় মস্যজীবী পার্টির এক অনুষ্ঠানে জিএম কাদের তার বক্তব্যে একই সঙ্গে সরকার ও বিরোধীদলে থাকা নিয়ে জাতীয় পার্টির অবস্থানকে দ্বি-চারিতা বা ডাবল স্ট্যান্ড বলে অভিহিত করেন। আর এতেই ক্ষেপে যান মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।

মঞ্চে বসেই ধমক দিয়ে ওঠেন বাবলু। তারপরও জিএম কাদের বক্তব্য চালিয়ে যেতে থাকলে চেয়ার ছেড়ে উঠে যান তিনি। সিনিয়র কয়েকজন নেতা মহাসচিবকে আটকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ক্ষিপ্ত মহাসচিব শেষ-মেষ বক্তব্য না দিয়েই চলে যান। সভা শেষে অ্যাসোসিয়েশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স সভাপতির কক্ষে দ্বিতীয় দফায় তর্ক বেধে যায় তাদের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি হুমকি পর্যায়ে গড়ায় বলে উপস্থিত নেতারা ‍জানিয়েছিলেন।

অন্যদিকে উপনেতা ইস্যুতে কাজী ফিরোজ রশীদের সঙ্গে মতাপার্থক্য তৈরি হলে তাকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাতীয় পার্টির সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেন বাবলু। সে কারণে ফিরোজ রশীদের সঙ্গেও তার প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব রয়েছে। সেই থেকে কোন কর্মসূচিতে অংশ নেন না ফিরোজ রশীদ।

একইভাবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গার সঙ্গেও তার দূরত্ব তৈরি হয়েছে রংপুর মহানগর কমিটি থেকে রাঙ্গাকে সরিয়ে দেওয়ার কারণে। অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, এরশাদ নিজেও না-কি চাইছেন বাবলুর বিরুদ্ধে এদিন সবাই কথা বলুক। সে কারণে নিজেই চিঠি দিয়ে প্রেসিডিয়ামের সভা ডেকেছেন।
 
তবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রামে গিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার অংশ নেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা, বোগাস কথা।
 
দলের মধ্যে কোন সমস্যা নেই বলেও দাবি করেন জাপা মহাসচিব।
 
দীর্ঘ ৭ মাস পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই প্রেসিডিয়ামের বৈঠকটি সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে। এতো দিন পার্টির মহাসচিব অথবা এরশাদের প্রেস ও পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সভা ডাকতেন। কিন্তু এবার এরশাদ স্বাক্ষরিত চিঠি প্রেসিডিয়াম সদস্যদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
 
প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এরশাদের প্রেস ও পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সুনীল শুভরায় প্রেসিডিয়ামের বৈঠকের বিষয়ে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, এবার দ্রুততম সময়ে বৈঠক ডাকার কারণে পার্টির চেয়ারম্যান নিজেই স্বাক্ষর করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৫
এসআই/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।