ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

দুই মাস পর প্রকাশ্যে আসছেন বুলবুল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৫
দুই মাস পর প্রকাশ্যে আসছেন বুলবুল

রাজশাহী: নাগরিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান রাজশাহী সিটি করপোরেশনে দেখা দিয়েছে চরম অচলাবস্থা। গত ৫ জানুয়ারির পর বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনের নামে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের পাঁচটিসহ মোট ১৬টি মামলা ঘাড়ে নিয়ে প্রায় দুই মাস ধরে আত্মগোপনে রয়েছেন মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল।



নগরের ৩০ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মধ্যে কারাগারে রয়েছেন প্যানেল মেয়রসহ দুই কাউন্সিলর। আর নাশকতার একাধিক মামলা মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন বিএনপি-জাময়াতপন্থি আরও ২৬ কাউন্সিলর। এ অবস্থায় নগর উন্নয়নসহ সার্বিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

তবে আশার কথা হচ্ছে এতদিন আত্মগোপনে থাকার পর রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল আবারও জনম্মুখে আসছেন! জনসংযোগ শাখা সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

বুধবার (২২ এপ্রিল) জনসংযোগ কর্মকর্তা কাজী আমিরুল করিম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়,  আগামী শনিবার (২৫ এপ্রিল) জাতীয় ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন ২০১৫ পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) সকাল ১০.৩০টায় নগর ভবনস্থ সরিৎ দত্ত গুপ্ত সেমিনার কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে সম্মতি জানিয়েছেন।

তবে এতগুলো মামলা মাথায় নিয়ে তিনি কিভাবে এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন সে ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা মুখ খুলতে রাজি হননি।    
 
এদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঝিমিয়ে পড়েছে সিটি করপোরেশন কর্মচারীদের কার্যক্রমের গতি। থমকে গেছে নগর পরিষ্কার-পরিছন্নের কাজও। বিশেষ করে নগরে ড্রেন পরিষ্কার-পরিছন্নের কোনো কার্যক্রম নেই। ড্রেনের পানি উপচে পড়ে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। ফলে নগর জুড়ে বেড়েছে মশার অত্যাচার। মশা নিয়ন্ত্রণে নেই কোন উদ্যোগ। গরমের মধ্যে মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী।

এছাড়াও নগর জুড়ে বেড়েছে বে-ওয়ারিশ কুকুরের সংখ্যাও। রাতে কুকুরের অত্যাচারে সাধারণ মানুষের রাস্তা দিয়ে হাঁটা দায় হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় রাসিক’র কর্মকাণ্ডে হতাশার মধ্যে রয়েছেন নগরবাসী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাসিক’র এক কাউন্সিলর জানান, নগর ভবনের সব ধরনের কাজ স্থবির হয়ে পড়েছে। নগরবাসী নানান সমস্যায় জর্জরিত। ড্রেনেজ ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গেছে, নগরবাসী অতিষ্ট হয়ে গেলেও মশক নিধনের কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে। এতে যতো দিন যাচ্ছে ততোই সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। এ অবস্থায় মেয়রের উপস্থিতি একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছে বলেও জানান তিনি।

করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান মেয়র দায়িত্ব গ্রহণের পর নতুন কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। এর উপর নগরের ভদ্রা বাজার, শালবাগান বাজার, নওদাপাড়া বাজার, লক্ষ্মীপুর ক্লিনিক, বর্ণালী সিনেমা হলের পেছনের ট্রেনিং সেন্টার, আরডিএ মার্কেটের পাশে দোকানঘর নির্মাণকাজগুলো দরপত্র হওয়ার পরও বাতিল করা হয়েছে। উন্নয়ন কর্মকা- থেমে থাকার পাশাপাশি বর্তমানে রাজস্ব আদায়েও গতি কমে গেছে। অথচ রাজস্ব আয় থেকেই প্রতিমাসে কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হয়।

কর্মচারীরা জানান, সাবেক মেয়রের আমলে মাসের শুরুতেই বেতন পেতেন তারা। এখন আর তা হয় না। বেতন দিলেও গত মেয়রের সময় বিভিন্ন ব্যাংকে করা এফডিআরগুলো ভেঙ্গে কর্মচারিদের বেতন দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে সিটি করপোরেশনে নিয়মিত ৪৮২ জন ও মাস্টাররোলের ২ হাজার ১৬৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন এক মাস দেরিতে হচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা জানান, চলমান পরিস্থিতিতে মেয়র নগরভবনে আসছেন না। বর্তমানে মেয়রের নামে ১৬টি মামলা রয়েছে। ৫ জানুয়ারি’র পর থেকে নাশকতায় দায়ে তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি জোটের চলমান অবরোধ হরতালের মধ্যে গত ১৯ জানুয়ারি গভীর রাতে নগরের ভদ্রায় এলাকায় গাড়ি বহরের বাসে পেট্রোল বোমা হামলা, গত ২২ জানুয়ারি দুপুরে নগর ভবনের সামনে গাড়ি বহরে পেট্রোল ও হাতবোমা হামলা ও ২৫ জানুয়ারি গভীর রাতে কাপাশিয়ায় গাড়ি বহরের বাসে পেট্রোল ও বোমা হামলার ঘটনায় মামলায় মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল হুকুমের আসামি হয়েছেন।

এর আগে ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিএনপি জোটের মিছিল থেকে পুলিশের গাড়িতে বোমা হামলা চালানো হয়। এতে পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ সরকার নিহত হন। এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরণ আইনে দায়ের করা দুইটি মামলায় মেয়র বুলবুল চার্জশিটভুক্ত আসামি। এর প্রেক্ষিতে গত ২৩ জানুয়ারি তাকে বরখাস্তের সুপারিশ করে পুলিশ সদর দফতরে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আজাহার আলী বলেন- ‘কার্যক্রম অচল হয়ে পড়েছে এ কথা ঠিক নয়। তবে একজন মেয়র না থাকলে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্য হবে এটা স্বাভাবিক। এর পরও বিভিন্ন কার্যক্রমের ফাইল-পত্র ঠিকই সচল রয়েছে। তিনি (মেয়র) নগরভবনে ফিরে এলে তখন সব সমস্যাই দূর হয়ে যাবে। নাগরিকরা আরও বেশি সুবিধা ভোগ করতে পাবেন। ’

আগামীকালের (বৃহস্পতিবার) সংবাদ সম্মেলনে সিটি মেয়রের উপস্থিতির ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে  করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা বলেন- ‘এটা আয়োজকরা বলতে পারবেন’।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৫
এসএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।