যশোর: যশোর সকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের আসাদ হল দখলের তিন দিনের মাথায় এবার সরকারি সিটি কলেজের ছাত্রাবাস দখলে নিতে ব্যাপক বোমাবাজি ও গুলিবিনিময় করেছে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ।
বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মারুফ হোসেন ইকবাল ও সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন রিমনের গ্রুপের মধ্যে এ বোমাবাজির ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুরে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ সরকারি সিটি কলেজ ক্যাম্পাসে মুখোমুখি হয়। এ সময় ক্যাম্পাসে ৫-৬ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে ৬-৭টি বোমা ফাটানো হয়। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। এসময় আবাসিক ছাত্ররা আতঙ্কে হল ছেড়ে যায় এবং কক্ষগুলোতে তালা লাগিয়ে দেয় ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ।
পরে কলেজ অধ্যক্ষের উপস্থিতিতে পুলিশ কক্ষগুলোর তালা ভেঙে ছাত্রদের জন্য অবমুক্ত করে। কিন্তু আতঙ্কগ্রস্ত ছাত্ররা হলে না ফিরে বাড়ি ফিরে গেছে।
এ বিষয়ে সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি মারুফ হোসাইন ইকবাল বাংলানিউজকে বলেন, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আরিফুল ইসলাম রিয়াদের ছোট ভাই ও সিটি কলেজ শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের সন্ত্রাসীরা হলে দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এ খবর পেয়ে আমি ক্যাম্পাসে গিয়েছিলাম।
এসময় সভাপতি আরিফুল ইসলাম রিয়াদ, সিটি কলেজ ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন রিয়াদের উপস্থিতিতে বিল্লাল, তরিকুল, ইব্রাহিমসহ বহিরাগত সন্ত্রাসীরা আমাকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে।
জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আরিফুল ইসলাম রিয়াদ বাংলানিউজকে বলেন, গোটা যশোরে কারা দখলবাজি করে একনায়কতন্ত্র করে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছে সেটা সবাই জানে। যশোরে যেমন দখলবাজির রাজনীতি হচ্ছে, তারাই অংশ হিসেবে সিটি কলেজে বোমাবাজি ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সিটি কলেজের পাশেই আমাদের বাড়ি। সিটি কলেজের হল আমাদের দখলে ছিল। সেই হল দখল করার জন্য ক্যাম্পাসে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে হামলা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা শুনে আমি ক্যাম্পাসে গিয়েছিলাম। সেখানে কলেজের অধ্যক্ষসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। হামলার ঘটনার পর হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনেকে চলে গেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা না দিতে পারলে তো তারা থাকবে না।
যশোর জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল বলেন, সিটি কলেজের ছাত্রাবাসটি দীর্ঘদিন ধরে মাদকসেবি ও সন্ত্রাসীদের আখড়া। জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রিয়াদের পোষ্য মিজু, টাক ইব্রাহিম, জিয়া, তরিকুল, চোর বিল্লাল প্রমুখ সন্ত্রাসী ওখানে আস্তানা গেড়ে রয়েছে। তারা হলের আবাসিক ছাত্রদের নির্যাতন করে। ছাত্ররা ওই সন্ত্রাসীদের উৎখাত করতে গেলে আজকের ঘটনাটি ঘটে।
সিটি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবু তোরাব মোহাম্মদ হাসান বাংলানিউজকে বলেন, বোমা-গুলির ঘটনা ঘটেছে কিনা আমি দেখিনি। তবে কিছু ছেলেপিলে দৌড়াদৌড়ি করছিল দেখেছি, এর বেশি কিছু নয়।
যশোর কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিকদার আককাছ আলী বাংলানিউজকে বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে খবর পেয়ে আমি ফোর্স নিয়ে ক্যাম্পাসে যাই। সেখানে বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে বলে দেখতে পাই। তবে গুলির ঘটনা ঘটেছে কি না জানি না।
তবে ঘটনা প্রসঙ্গে ওসি বলেন, ছাত্রলীগের এক গ্রুপ ছাত্রাবাস দখলে রাখতে চায়, আরেক গ্রুপ দখল করতে চায়। এনিয়ে ঘটনার সূত্রপাত বলে শুনেছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
১৫ এপ্রিল সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের শহীদ আসাদ হল দখল করে নেয় ছাত্রলীগের সেক্রেটারি আনোয়ার হোসেন বিপুল সমর্থকরা। ছাত্রলীগের এ গ্রুপটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারপন্থি বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৫
এসএইচ