ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

ক্যামেরা সংযোগে মনোযোগ তাবিথ-মাহীর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৫
ক্যামেরা সংযোগে মনোযোগ তাবিথ-মাহীর মাহী বি. চৌধুরী ও তাবিথ আউয়াল

ঢাকা: গণসংযোগের চেয়ে ক্যামেরাসংযোগে মনোযোগী হয়ে পড়েছেন উত্তরের তরুণ দুই মেয়রপ্রার্থী। তাবিথ আউয়াল ও মাহী বি. চৌধুরীর সময়জ্ঞান নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।

অগোছালো মিডিয়া সেলও অকার্যকর প্রমাণ হচ্ছে।
 
বিশেষ করে, সিটি নির্বাচনে এ দুই প্রার্থীর সংবাদ সংগ্রহে ব্যস্ত সাংবাদিকদের অভিযোগ ক্রমশ বাড়ছে। নানা সমস্যায় গলদঘর্ম হতে হচ্ছে তাদের।
 
অনেকেই বলাবলি করছেন, প্রথমদিকে সময়জ্ঞান ভালোই ছিল তাবিথ আউয়ালের। সকাল ৭টা/৮টা থেকেই সময়মতো শুরু করে দিতেন প্রচারণা। কিন্তু ইদানিং তিনি যেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করছেন। খালেদা যেমন সময়মতো কোথাও যেতে অভ্যস্ত নন, সেই শিক্ষাই যেন দিচ্ছেন নিজের সমর্থিত প্রার্থীকে। সে প্রার্থী নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে আসছেন কথা দেওয়া স্পটগুলোতে।
 
সাংবাদিকরা প্রার্থীদের পিছু নেয়, কিন্তু একবার দলছুঁট হলে মুশকিলে পড়েন। কারণ সুনির্দিষ্টভাবে ফোনে যোগাযোগে থাকছেন না দায়িত্বশীল কেউ। বলতে পারছেন না, ‘ওখানে আসুন, তাবিথকে পাবেন!’
 
রাজনীতিতে একদমই অনভিজ্ঞ এ প্রার্থীর মিডিয়া সেল নিয়েও নানা অভিযোগ রয়েছে। সেলের পক্ষ থেকে যেসব ফোন নম্বর দেওয়া থাকে, সেগুলোতে রিং হলেও কেউ কেউ ধরেন না। আবার অনেকে যেহেতু তাবিথের সঙ্গী হন না প্রতিদিন, সহযোগিতা পাওয়া যায় না তথ্যপ্রাপ্তিতে। তাই তাবিথ কোথায় আছেন, কোথায় যাবেন- এসব তথ্য পেতে বেশ বেগ পেতে হয় সাংবাদিকদের।
 
অনেক সাংবাদিকের অভিযোগ, বেজায় ‘বিরক্ত’ করছেন মাহী। কথা দিয়ে কথা রাখতে যেন পুরোপুরিই নিরুৎসাহী তিনি। কোথা থেকে প্রচারণা শুরু করবেন, কোথায় শেষ করবেন- সে বিষয়ে যেমন জানানোর প্রয়োজন মনে করেন না, তেমনি নির্দিষ্ট সময়ে কথা দেওয়া জায়গায় তার পৌঁছানোর নজিরও বিরল।
 
প্রার্থীদের নিয়ে এসব আলোচনা-সমালোচনা ক্রমশই বাড়ছে। কেউ বলছেন, এখনই এ তরুণরা নিজেদের ‘মেয়র’ ভাবতে শুরু করলেন!
 
কেউ বলছেন, ধনীর দুলালরা মাঠে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করছেন না সময়মতো! রোদ-ধুলা-কাদার ভয় তাদের? মেয়র হলে দেখা যাবে তো?
 
আবার কেউ তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ও অপেক্ষাকৃত ‘বয়স্ক’ প্রার্থী আনিসুল হকের সঙ্গে তুলনা করতেও ছাড়ছেন না।
 
তারা বলছেন, আনিস যেখানে রোদে পুড়ে চেহারাটি কয়লা করে ফেলেছেন, সেখানে মাহী এখনো ছায়া খুঁজে বেড়ান!
 
আনিস দৌঁড়‍ুচ্ছেন, ঝাড়ু দিচ্ছেন, সাইকেল চালাচ্ছেন, সেমিনারে যাচ্ছেন কখনো-সখনো। আর তাবিথ-মাহী অপেক্ষাকৃত আরামের খোঁজ করছেন। টকশো, সেমিনারগুলোতে প্রায় প্রতিদিন হাজিরা দিচ্ছেন।
 
মাহীতো উল্টো আনিসুলের প্রতি নিয়মিত ক্ষোভ ঝাড়েন, কেন তিনি গণসংযোগে বেশি ব্যস্ত, যেখানে মাহী-তাবিথরা এসব অনুষ্ঠানে আছেন!
 
অনেকেই বলছেন, এ দুই প্রার্থী বেছে বেছে সেই অনুষ্ঠানগুলোতে ঠিকই সময়মতো যাচ্ছেন, যেগুলোতে অল্প খাটুনিতে অধিক প্রচারের সুযোগ পাওয়া যায়, ক্যামেরায় থাকা যায় বেশিক্ষণ।
 
নিয়মিত তাবিথের খবর সংগ্রহকারী সাংবাদিকদের কাছ থেকে জানা যায়, ১০ এপ্রিল প্রচারণা শুরুর প্রথম দিন তাবিথ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পৌঁছে যান কারওয়ান বাজার। গণমাধ্যমকর্মীরা সেদিন নতুন এ প্রার্থীকে সম্মানের চোখে দেখেছিলেন। এরপর থেকে প্রতিদিন তার সকাল-সন্ধ্যা প্রচারণা ও নানা অনুষ্ঠানের পরিশ্রমও আলোচনায় আসে। যা এখন কমে গেছে। তাবিথ স্পটগুলোতে যাচ্ছেন দেরি করে। বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন টকশোসহ ক্যামেরাবন্দি হওয়ার অনুষ্ঠানগুলোতে।
 
মাহী সম্পর্কে সাংবাদিকদের কেউ কেউ কৌতুক করে বলেন, তিনি নিজের ব্যক্তিগত বিভিন্ন কাজে যেখানে যান, যখন যাওয়া প্রয়োজন সেখানেই ছবি তুলে ‘প্রচারণা’ বলে প্রচার করতে পছন্দ করেন। এক কাজে দুই কাজ হয়ে যায় তার। তিনি ক্যামেরায় বাঁচতে পছন্দ করেন।
 
তার মিডিয়া সেলের পক্ষ থেকে দিনশেষে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে, কয়েকটি ছবি ও স্পটের নাম উল্লেখ করে দাবি করা হয়, ‘মাহী এসব স্পটে প্রচারণা চালিয়েছেন’।
 
শ্যামলীসহ বিভিন্ন স্পটে প্রচারণার কথা বলে শেষ পর্যন্ত সেখানে যাননি মাহী। কয়েকঘণ্টা অপেক্ষা করে সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকরা জানতে পারেন, মাহী তালতলা থেকে প্রচার শুরু করেছেন, তাও নির্দিষ্ট সময়ের বেশ পরে। তার এসব খামখেয়ালীতে সংবাদকর্মীরা অবাক হয়েছিলেন।
 
প্রথমদিকে প্রচারণাসহ একাধিক অনুষ্ঠানে তার কড়া প্রসাধনমাখা চেহারা নিয়েও সমালোচনা হয়েছে।
 
‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক ও ২০ দল সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের প্রতি বিষোদগার করেও ক্যামেরায় বেশি সময় বাগানোর সুযোগ খোঁজেন তিনি’- অভিযোগ রয়েছে।
 
জবাবে আনিস ও তাবিথ তাকে নিয়ে সেভাবে কোন নেতিবাচক কথা বলেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না।
 
বিশেষ করে, আনিসুলের প্রশংসা রয়েছে সাংবাদিকদের মধ্যে। তারা বলছেন, আনিস বেশ রসিক ও সৌখিন মানুষ। সারাদিন পরিশ্রমের মধ্যেও হাসিখুশি থাকেন। বিশেষ করে, তার মিডিয়া সেল অনেক গোছানো। সাংবাদিকরা সময়মতো তথ্য-সুবিধা যেন পেতে পারেন, সে বিষয়ে মিডিয়া সেল বেশ আন্তরিক ও করিৎকর্মা।
 
তাবিথের কাছের মানুষরা আত্মপক্ষ সমর্থনে বলেন, তাবিথ সময়মতোই যান স্পটে। তবে যেহেতু অনেকদূরেই গাড়ি থেকে নেমে পড়েন তিনি, তার হেঁটে আসতে ওটুকু সময় লাগে। কারণ পথে পথে সবার সঙ্গে হাত মিলিয়ে দোয়া চেয়ে আসেন তিনি।
 
মাহীর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, মাহী গণসংযোগ করছেন নিজস্ব একটি স্টাইলে। তার বাবা একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রটোকল পান। তাই প্রচারণায় নামতে পারছেন না ছেলের পক্ষে। বড় কোন জোটের সমর্থনও নেই মাহীর। তবু নিজের মতো করে গুছিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছেন তিনি। আনিস ও তাবিথের প্রচারণার মাঝে সেভাবে মিডিয়া কাভারেজ পায় না তার প্রচারণা। তবু চেষ্টা করছেন কোন না কোনভাবে আলোচনায় থাকার।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৫
এসকেএস/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।