ঢাকা: ঢাকা উত্তর সিটি করপোশেনের ভোট ব্যাংক মিরপুরে রয়েছে তিনটি সংসদীয় আসন। এদিকে এই তিন আসনে আওয়ামী লীগের তিন সংসদ সদস্যের মধ্যে পুরনো অন্তর্দ্বন্দ্ব মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে।
আর মাত্র চার দিন বাদেই সিটি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। এখন থেকেই চলছে ভোটের হিসাব নিকাশ। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত বৃহত্তর মিরপুর এলাকা। সব প্রার্থীই মনে করেন যিনি মিরপুরের ভোট বেশি পাবেন তিনিই হবেন উত্তরের নতুন নগরপিতা। এরই মধ্যে প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপও শুরু হয়ে গেছে মিরপুর কেন্দ্রিক। ঢাকা উত্তরের ভোটারের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই মিরপুর এলাকায়।
বিভক্ত সিটি করপোরেশনের ৩৬টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত উত্তর সিটি করপোরেশন। এরমধ্যে বৃহত্তর মিরপুরেই রয়েছে ১৫টি ওয়ার্ড। এছাড়া মিরপুরে অন্যান্য ওয়ার্ডের তুলনায় জনসংখ্যার ঘনত্বও অনেক বেশি। মিরপুর এলাকায় ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে শুরু করে ১৬ নম্বর ওয়ার্ড পর্যন্ত রয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডেই রয়েছে সর্বাধিক ভোট।
এরইমধ্যে মিরপুরের তিন আসনের আওয়ামী লীগের তিন এমপির মধ্যে সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুরনো অন্তর্দ্বন্দ্ব মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। আর এর খেসারত দিতে হতেও পারে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হককে।
ঢাকা-১৬ আসনের সংসদ সদস্য ইলিয়াছ উদ্দিন মোল্লা মুখে-মুখে আনিসুলের প্রচারণায় থাকলেও নেই মাঠে। তারই বড় ভাই এখলাস উদ্দিন মোল্লা ঢাকার মেয়র হওয়ার আশায় বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েও পাননি মনোনয়নপত্র। সেই ক্ষোভে পরিবারের অন্য কেউই আনিসুলের পক্ষে প্রচারণায় নামছেন না বলে জানা গেছে।
এর বহিঃকাশ হিসেবে গত ১৮ এপ্রিল মিরপুর এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে ইলিয়াছ উদ্দিন মোল্লার প্রতি ক্ষোভ ঝাড়েন আনিসুল হক। মোল্লা মার্কেটের সামনে দু’জনের মধ্যে কথা হয় নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে।
এ সময় আনিসুল হক বলেন, আপনার লোক আমার পক্ষে কোনো কাজ করছে না। আমার ৬শ লোক বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছে তারাই সব প্রমাণ রেখেছেন। কেউ কোনো কাজ করছেন না। এমনকি আমার পোস্টারও ঠিকমতো লাগানো হয়নি।
এছাড়া মিরপুরের ভোটারদের বড় একটি অংশ রয়েছে অবাঙালিদের (বিহারি) ক্যাম্পে। গত বছর বিহারি ক্যাম্পের ওপর হামলায় এমপি ইলিয়াছ মোল্লার ওপর ক্ষিপ্ত অবাঙালি ভোটাররা। সেই ভয়ে আনিসুল হককে নিয়ে বিহারি ক্যাম্পে ভোট চাইতে যাননি ইলিয়াছ মোল্লা।
এদিকে কামাল আহম্মেদ মজুমদার নিজেই মেয়র পদে নির্বাচন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেও শেষ পর্যন্ত টিকেট পাননি। তাই আনিসুলের প্রচারণায়ও নেই তিনি। শুধুমাত্র লোক দেখানো প্রচারণায় গত ১৭ এপ্রিল কাজীপাড়া জামে মসজিদে আনিসুল হকের সঙ্গে জুম্মার নামাজ পড়েন এবং তার পক্ষে মুসল্লিদের কাছে দোয়া চান। এরপর আর কোনো প্রচারণায় দেখা যায়নি।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, দুই তিন দিন আগে কামাল মজুমদারের বড় ছেলে জুয়েল মজুমদার বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সেখানে তিনি তাবিথ আউয়ালকে বলেছেন, ভাই আমরা তো মাঠে নামতে পারছি না, তবে আপনার পক্ষে আছি।
তবে অন্য এমপি আসলামুল হক কিছুটা হলেও মাঠে থেকে আনিসুল হকের পক্ষে প্রচারণায় আছেন। তবে নিজের পছন্দের কাউন্সিলর প্রার্থী না থাকায় মন খুলে কাজ করছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
মিরপুর ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, এমপি সাহেবকে (ইলিয়াছ মোল্লা) আনিসুল হকের পক্ষে দেখা গেলেও নেই তার অন্যভাই এখলাস উদ্দিন মোল্লা। এছাড়া তার পরিবারের অন্য কেউ মাঠে থেকে কাজ করছেন না।
দলীয় কর্মীরাও শুধুমাত্র এমপিকে দেখানোর জন্য মাঠে থাকে, বাস্তবে কেউ কাজ করছে না। এর প্রধান কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন এখলাস মোল্লাকে মনোনয়ন না দেওয়া।
এছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী থাকায় এমপিদের নির্দেশও কাজে আসছে না। মেয়র হিসেবে আনিসুল হক নির্বাচনী প্রচারণায় গেলে দল সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা কাছে আসেন, ভোট চান নিজের ও মেয়রের জন্য। আর যারা বিদ্রোহী তারা দল সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে আনিসুল হক ভোট চাওয়ায় মনক্ষুন্ন হন। এর সুযোগ নিয়ে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল গুছিয়ে নিচ্ছেন ভোটারদের। তাছাড়া মিরপুর এলাকায় জামায়াতে ইসলামেরও অনেক ভোট রয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০০৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৫
এসএম/এসএন/আরআই