ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

কেন এই লুকোচুরি!

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৫
কেন এই লুকোচুরি! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম (ফাইল ফটো)

ঢাকা: ২০১৪ সালের ১ নভেম্বর, আনুমানিক রাত সাড়ে ৯টা। নাটোর জনসভায় ভাষণ দিয়ে ঢাকায় ফিরছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।


 
পথিমধ্যে তার বহরে থাকা একটি গাড়ির চাকা বিকট শব্দে ফেটে যায়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সারা দেশে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, খালেদা জিয়ার গারিবহরে গুলি করেছে দুর্বৃত্তরা।  
 
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে স্থানীয় ২০ দলীয় জোট আয়োজিত ওই জনসভা কাভার করতে ঢাকা থেকে অর্ধ শতাধিক সাংবাদিক খালেদা জিয়ার সঙ্গে নাটোর যান। তবে ফেরার সময় যথারীতি সাংবাদিকদের রেখেই ঢাকার পথ ধরেন তিনি।
 
এদিকে সমাবেশ শেষে নিউজ লেখায় ব্যস্ত সাংবাদিকদের কাছে একের পর এক ফোন যায় ঢাকা থেকে। প্রকৃত ঘটনা জানতে উদগ্রীব সবাই।
 
এরই মধ্যে বিএনপির প্রেসউইং কর্মকর্তা সায়রুল কবীর খান এবং শামসুদ্দিন দিদারকে ফোন দিয়ে রীতি মতো শাসিয়ে দেন খালেদা জিয়ার প্রেস সেক্রেটারি মারুফ কামাল খান সোহেল। শায়রুল-দিদারের অপরাধ-কেন তারা খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের সঙ্গে সাংবাদিকদের পাঠাননি?

এর আগে ২০১৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। জামালপুর জনসভায় যোগ দিতে বঙ্গবন্ধু সেতু সংলগ্ন যমুনা রিসোর্টের উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে রওনা দেন খালেদা জিয়া। যেহেতু স্থানীয় ২০ দলীয় জোটের জনসভা পরের দিন ২৭ সেপ্টেম্বর, সেহেতু সাংবাদিকদের সঙ্গে নেননি তিনি। সাংবাদিক বহরটি জামালপুর যাবেন ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে।
 
কিন্তু একেবারে সাংবাদিকশূন্য গাড়িবহর মেনে নিতে পারছিলেন না খালেদা জিয়া। অগত্যা একটি অনলাইন নিউজপোর্টাল থেকে একজন এবং একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল থেকে ২ জনসহ মোট ৩ জন সাংবাদিককে বিএনপির চেয়ারপারসনের গাড়িবহরে যুক্ত করা হয়।
 
খালেদা জিয়ার জেলা সফর নিয়ে পুরোনো এ ঘটনা দু’টি তুলে ধরার প্রাসঙ্গিকতা এই যে, গত ৫ দিন ধরে দল সমর্থিত প্রার্থীদের জন্য ঢাকার অলি-গলিতে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরই মধ্যে ঘটে গেছে চার চারটি অঘটন।
 
বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা এখন প্রশ্ন তুলছেন-মির্জা আব্বাস ও তাবিথ আউয়ালের পক্ষে খালেদা জিয়ার প্রচার-প্রচারণার খবর আগে থেকে মিডিয়া এবং দলের লোকজন জানতে পারছে না কেন? কেন কাউকে কিছু না জানিয়ে প্রতিদিন বিকেলে ইনসিকিউরড অবস্থায় মাঠে নামছেন বিএনপি প্রধান। দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে কেন লুকোচুরি খেলা হচ্ছে?
 
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর বৃহস্পতিবার বাংলানিউজকে বলেন, আমারও ওই একই প্রশ্ন- কেন ম্যাডামের গণসংযোগ নিয়ে লুকোচুরি খেলা হচ্ছে। কেন আগে থেকে মিডিয়া এবং দলের লোকজনকে কিছু জানানো হচ্ছে না।
 
তিনি বলেন, প্রতিদিন আনপ্রিপেয়ার্ড অবস্থায় মাঠে নামছি। আর অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হচ্ছি। অথচ প্রটেস্ট করতে পারছি না।
 
এদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, নিরাপত্তার কথা বলে একুশে ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং ২৬ মার্চ জাতীয় স্মৃতি সৌধে যাননি খালেদা জিয়া। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরও নিরাপত্তাজনিত কারণে ৪২ দিন পর্যন্ত আদালতে হাজির হননি তিনি। এখন কীভাবে মিডিয়াকে না জানিয়ে নিরাপত্তা প্রটোকল ছাড়াই প্রতিদিন বিকেলে বের হচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী? চিপা গলি, সরু রাস্তা, অন্ধকার পথ এবং সাধারণ মানুষে ঠাসা বিপণী বিতান-সুপার মার্কেট ও শপিং কমপ্লেক্সগুলোতে সন্ধ্যার পর ঢুঁ মারছেন তিনি?
 
সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার সব ধরনের কর্ম সিডিউল নির্ধারণ করে থাকেন তার ব্যক্তিগত সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। তিনিই নির্ধারণ করেন কখন, কীভাবে, কোন এলাকায় মুভ করবেন বিএনপি প্রধান। তার কাছ থেকে পাওয়া খালেদা জিয়ার কর্মসূচিগুলো মিডিয়ার কাছে পৌঁছে দেয় চেয়ারপারসনের প্রেস ইউংয়ের কর্মকর্তারা।
 
কিন্তু টানা পাঁচ দিন খালেদা জিয়া বিভিন্ন লোকেশনে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালালেও তার প্রেসউইং থেকে মিডিয়াকে কিছুই জানানো হয়নি। এমনকি বাসা থেকে বের হবার পরও তার রুট সম্পর্কে সাংবাদিকদের কিছু জানানো হয়নি।
 
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রেসউইং কর্মকর্তা শায়রুল কবীর খান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা মূলত ম্যাডামের প্রেস সেক্রেটারি মারুফ কামাল খান সোহেলের অধীনে কাজ করি। তার কাছ থেকে পাওয়া আগাম খবর মিডিয়াকে জানিয়ে দেই। ম্যাডামের গণসংযোগ কর্মসূচি সম্পর্কে তার (মারুফ কামাল খান সোহেল) কাছ থেকে আগাম কোনো তথ্য পাইনি, মিডিয়াকেও জানাইনি।
 
মারুফ কামাল খানের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় এ বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
 
পরে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমরা না জানালেও প্রতিদিনই তো আপনারা (সাংবাদিক) কোনো না কোনোভাবে বিষয়টি জানতে পারছেন এবং ম্যাডামের সঙ্গে যাচ্ছেন। এতে কোনো অসুবিধা তো দেখছি না।
 
তা ছাড়া ম্যাডাম তো জনসভা করতে বের হচ্ছেন না। দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগ করছেন, আগাম খবর দেওয়ার কী আছে?-পাল্টা প্রশ্ন শিমুল বিশ্বাসের।
 
বাংলাদেশ সময়: ১১০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৫
এজেড/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।