ঢাকা: আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপসন খালেদা জিয়াকে ‘কৌশলে’ প্রচারণা থেকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে সরাসরি তাকে কিছু না বলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেই কাজে লাগাবে নির্বাচন পরিচালনাকারী সংস্থাটি।
এমন তথ্য জানিয়ে ইসি সূত্রগুলো বলছে, খালেদা জিয়া প্রচারণা চালানোয় ২০ দলীয় জোটের পুরো সমর্থন পাচ্ছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা। এ বিবেচনায় অন্য দলের প্রার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া, খালেদা প্রচারণা নামায় বেশ কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটেছে। তাই প্রচারণায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণ এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধ করতেই খালেদা জিয়ার প্রচারণা বন্ধের উদ্যোগ নিচ্ছে কমিশন।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশনাররা এ সংক্রান্ত একটি ফাইলে অনুমোদন দিয়েছেন। এখন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের স্বাক্ষরের পরই প্রয়োজনীয় পদেক্ষেপ নিতে ভ্রাম্যমান আদালত ও ডিএমপি কমিশনারকে নির্দেশনা দেবে ইসি। এক্ষেত্রে ভ্রাম্যমান আদালতকে নির্দেশনা দেওয়া হবে রিটার্নিং কর্মকর্তার মাধ্যমে।
সূত্র জানিয়েছে, দু’টো ভাবনাকে সামনে রেখে এগোচ্ছে নির্বাচন কমিশন। প্রাথমিকভাবে খালেদা জিয়া আবার প্রচারণায় নামলেই বাধা দেবে পুলিশ। এরপরও কাজ না হলে ভ্রাম্যমান আদালত আচরণবিধি ভঙ্গের কারণে ব্যবস্থা নেবে।
দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া যেন আর প্রচারণায় নামতে না পারেন, সেজন্য ডিএমপি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে শনিবারের (২৫ এপ্রিল) মধ্যে নির্দেশনা পাঠানো হবে।
উপ-সচিব পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেছেন, প্রার্থী বা প্রার্থীর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি নির্বাচনী প্রচারণার জন্য রাস্তা বন্ধ করে জনগণের অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারেন না। এছাড়া, গাড়ি বহর নিয়েও প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন না। তাই খালেদা জিয়া যেভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন বা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ যেভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন, তা আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো ব্যবস্থা না নিলেও ভবিষতে যেন প্রচারণা না চালাতে পারেন সে ব্যবস্থা নিচ্ছে ইসি। এজন্য রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ডিএমপি কমিশনারকে নির্দেশনা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক বাংলানিউজকে বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাকে কমিশন নির্দেশনা দেবে। কারণ তিনি (খালেদা জিয়া) যে কাজ করেছেন, তা আচরণবিধির লঙ্ঘন। এছাড়া হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে যদি সতর্ক করে চিঠি দেওয়া যায়, তবে তাকে কেন নয়?
ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেন, গাড়ী বহর নিয়ে ব্যাপক জনসংযোগ করে কেউ যেন প্রচারণা চালাতে না পারে, সেজন্য পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। নির্দেশনাটি পুলিশ কমিশনার, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমান আদালতকে দেওয়ার কথা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) সিইসির কাছে খালেদা আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন বলে অভিযোগ করে আওয়ামী লীগ সমর্থক গ্রুপ সহস্র নাগরিক কমিটি। খালেদার প্রচারণার কারণে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্ট হচ্ছে এবং উত্তেজনার সৃষ্টি হচ্ছে বলেও যুক্তি দেখিয়েছে তারা। একইসঙ্গে তারা সিইসির কাছে এজন্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানিয়েছে।
যদিও নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, খালেদা জিয়া সরকারের সুবিধাভোগী ব্যক্তির আওতায় পড়েন না। এজন্য তার প্রচারণা চালাতেও কোনো অসুবিধা নেই। তবে তা হতে হবে আইনের মধ্যে।
সম্প্রতি বিএনপি সমর্থিত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের দুই মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও মির্জা আব্বাসকে সতর্ক করে ইসি। ওই সতর্ক বার্তায় খালেদা জিয়া গাড়ি বহর নিয়ে প্রচারণা চালানোর বিষয়ে আপত্তি জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা।
আগামী ২৮ এপ্রিল ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করবে ইসি। আর প্রচারণা বন্ধ হবে ২৬ এপ্রিল মধ্যরাতে।
আসন্ন ডিসিসি নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চাইতে গত শনিবার (১৮ এপ্রিল) প্রথমবারের মতো নির্বাচনী প্রচারণায় নামেন খালেদা জিয়া। পরদিন রোববারও (১৯ এপ্রিল) নির্বাচনী প্রচারণা চালান তিনি। সোমবার (২০ এপ্রিল) টানা তৃতীয় দিনের মতো প্রচারণায় বেরিয়ে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে তার গাড়ি বহর হামলার শিকার হয়। এরপর মঙ্গল ও বুধবারও (২১ ও ২২ এপ্রিল) যথাক্রমে ফকিরাপুল ও বাংলামোটরে হামলার শিকার হয় খালেদার গাড়িবহর। বাংলামোটরে হামলায় খালেদাকে বহনকারী গাড়ী ও তার সিকিউরিটি ফোর্সের সদস্যরাও ক্ষতিগ্রস্ত হন। সেসব কারণ দেখিয়ে বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) মাঠে নামেননি বিএনপি চেয়ারপারসন। শুক্রবারেও প্রচারণায় নেমেছেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৫
ইইউডি/এইচএ