ঢাকা, বুধবার, ৮ মাঘ ১৪৩১, ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি আ.লীগ প্রার্থীদের বিজয়ী করবে

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৫
পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি আ.লীগ প্রার্থীদের বিজয়ী করবে আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন

ঢাকা: ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই মেয়র প্রার্থীর পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের চেয়ে তাদের এগিয়ে রাখছে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। এই পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তিই সাধারণ ভোটারদের বেশি প্রভাবিত করবে।

আর এটাই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের বিজয়ের জন্য বড় সহায়ক শক্তি হবে বলেও জানান ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।

আওয়ামী লীগের নেতাদের মতে, দলীয় প্রার্থী নির্বাচনেই এগিয়ে তাদের দল। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে যে দুই জন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তাদের দুজনেরই স্বচ্ছ, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। রয়েছে অভিজ্ঞতা ও নিজস্ব পরিচিতি।

উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা হিসেবে তার সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা রয়েছে। অবিভক্ত ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে হিসেবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকনের পরিচিতি রয়েছে।  

এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে আন্দোলনের নামে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের কর্মকাণ্ড; বিশেষত গত ৫ জানুয়ারি থেকে টানা তিন মাসের বেশি সময় ধরে যে সহিংসতা, জ্বালাও-পোড়াও এবং পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা; সেই ক্ষোভ রয়েছে মানুষের মনে। মানুষ এই সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকেই ভোট দেবে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন।    

আওয়ামী লীগ নেতারা তাদের দলের সমর্থিত প্রার্থীদের অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী আনিসুল হক একজন ব্যবসায়ী। দীর্ঘ ব্যবসায়িক জীবনে তার সুনাম রয়েছে। ব্যবসায়িকদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এবং বিজিএমইএ’র নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। সার্ক দেশগুলোর ব্যবসায়ী সংগঠনেরও তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন। ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃত্বে থাকাকালে তিনি দক্ষ সংগঠকের পরিচয়ও দিয়েছেন।

সংগঠক হিসেবে আনিসুল হকের কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ব্যবসায়ীরা এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনগুলো তার পক্ষে কাজ করছে। সাংস্কৃতিক অঙ্গণের লোকজন তার সঙ্গে রয়েছেন। টিভি  উপস্থাপক ও টিভি ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে আনিসুল হকের পরিচিতি রয়েছে। নির্বাচনে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে তিনি সর্বস্তরের মানুষের কাছে ছুটে যেতে পারছেন। সুবক্তা এবং সুন্দরভাবে গুছিয়ে কথা বলতে পারেন তিনি।

পক্ষান্তরে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের নিজের পরিচিতি নেই। সংগঠন করা বা সংগঠকের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে হিসেবে তিনি নির্বাচনে দাঁড়ানোর পর বিএনপি তাকে সমর্থন দেয়। তার একমাত্র অবলম্বন বিএনপির সমর্থন। এদিক থেকে আনিসুল হক অপ্রতিদ্বন্দ্বী বলেও আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন।

আঞ্চলিক ভোট বিশেষ করে বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলের মানুষের একটা ভোট ব্যাংক রয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে। তাবিথের বাবা আব্দুল আউয়াল মিন্টু এবং আনিসুল হক দুজনই নোয়াখালীর মানুষ। এই আঞ্চলিক ভোটের একটি বড় অংশ আনিসুল হক পাবেন বলেও ধারণা আওয়ামী লীগ নেতাদের।

এছাড়া বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের প্রতীক বাস মার্কা। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি টানা অবরোধ-হরতাল করে সেই কর্মসূচিতে মূল টার্গেট ছিলো বাস। এ সময় বাসে হামলা, আগুন অথবা পেট্রোল বোমা মেরে বাস জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় আতঙ্কিত ছিল সাধারণ মানুষ। এ সব ঘটনায় দেড় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারান। নির্বাচনি প্রচারে এ বিষয়গুলোও উঠে আসছে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানান।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাসে আগুন দিছে যারা, বাস মার্কা পাইছে তারা। ’

তিনি বলেন, যারা আগুন দিয়েছে, পেট্রোল বোমা মেরে নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে মানুষ তাদের সহিংসতার জবাব দেবে। আমরা যাদের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। পরিচ্ছন্ন পরিচিতি আছে।

এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তার বাবা প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফ অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রথম সরাসরি ভোটে নির্বাচিত মেয়র। ঢাকার রাজনীতিতে মোহাম্মদ হানিফের একটা পরিচিতি ও প্রভাব রয়েছে। হানিফের ছেলে হিসেবে মানুষের একটা সমর্থন পাচ্ছেন তিনি। ব্যক্তি সাঈদ খোকনের নেতিবাচক কোনো দিক নেই। গত ৬ বছরের বেশি সময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে কিন্তু সাইদ খোকন কোথাও কোনো দায়িত্বে নেই। কোনো কাজের সমালোচনা বা তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।

তাছাড়া সাঈদ খোকন পুরান ঢাকার ছেলে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ ভোটারই পুরান ঢাকার। সাঈদ খোকন পুরান ঢাকার ছেলে হিসেবে তার প্রতি ওই এলাকার ভোটারদের দুর্বলতা রয়েছে। পুরান ঢাকায় আওয়ামী লীগের সংগঠনও শক্তিশালী। সাইদ খোকনের নির্বাচনি প্রচারে মাঠে রয়েছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

পক্ষান্তরে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মির্জা আব্বাস ঢাকা সিটি করপোরেশনের মনোনীত মেয়র ছিলেন। মন্ত্রী এমপি ছিলেন। এই সব দায়িত্ব পালনকালে তার বিভিন্ন অনিয়ম ও সমালোচনা রয়েছে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করেন।

মির্জা আব্বাস ১৯৯১ সালে অভিক্ত ঢাকার মেয়র মনোনীত হন। ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। এর পর তিনি এমপি ও মন্ত্রী হন। মেয়র এবং এমপি, মন্ত্রী থাকাকালে তার বিরুদ্ধে যে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে সে বিষয়গুলো মানুষের মধ্যে আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছে। তাছাড়া অভিক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সরাসরি নির্বাচনে মোহাম্মদ হানিফের কাছে বিশাল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন মির্জা আব্বাস। এই বিষয়গুলো সাঈদ খোকনের জন্য বাড়তি সুবিধা হিসেবে কাজ করবে করবে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানান।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বাংলানিউজকে বলেন, সাঈদ খোকন স্বচ্ছ ইমেজ রয়েছে। পুরান ঢাকার ছেলে হিসেবে ওই এলাকার ভোটারদের তার প্রতি বাড়তি একটা দুর্বলতা রয়েছে। আওয়ামী লীগের শক্তিশালী সংগঠন রয়েছে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সাঈদ খোকনের জন্য মানুষের কাছে যাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অসিম কুমার উকিল বলেন, আমরা যে দুইজন মেয়র প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছি তাদের নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। তাদের পরিচ্ছন্ন পরিচিতি রয়েছে। মানুষের কাছে গ্রণযোগ্য প্রার্থীকেই আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছে। পাশাপাশি তাদের পেছনে রয়েছে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৫
এসকে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।