ঢাকা: মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতের ছক কষেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য রোববার (২৬ এপ্রিল) থেকেই মাঠে নামছে বিভিন্ন বাহিনীর ভ্রাম্যমাণ টিম।
ইসি সূত্রে জানা যায়, রোববার থেকে বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড, পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে মোবাইল টিম নির্বাচনী এলাকায় টহল দেবে। তিন সিটির জন্য ১০০ প্লাটুন বিজিবি, ৭ প্লাটুন কোস্ট গার্ড, র্যাবের ২৬৮টি টিম, পুলিশ, আমড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে ২৬৮টি টিম কাজ করবে। এছাড়া পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে ৬৬ টিম স্টাইকিং ফোর্স হিসেবে ভোট এলাকায় নিয়োজিত থাকবে।
অন্যদিকে সেনাবাহিনীর তিন ব্যাটালিয়ন জোওয়ান সংশ্লিষ্ট ক্যান্টনমেন্টে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে অবস্থান নেবে। আগামী ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে এসব ফোর্স প্রস্তুত আছে।
ইসি সূত্রে আরও জানা যায়, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা জোরদারের জন্য পুলিশ ও ব্যাটালিয়ন আনসারের ৬৭ হাজার ৫২৫ জন সদস্য মোতায়েন থাকবে। এক্ষেত্রে সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ২২ এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ২৪ জন করে সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
ইতোমধ্যে ভোটকেন্দ্রে যেন নির্বাচনী উপকরণ ছিনতাই না হয় বা কোনো অনিয়নম না হয়, সেজন্য পুলিশকে কঠোর হতে নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ১৯ এপ্রিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে পুলিশকে দ্বিগুণ বল প্রয়োগ করতে বলেছেন। এছাড়া প্রয়োজনে যেন অস্ত্র ব্যবহার করা হয়, সে নির্দেশনাও দেওয়া আছে।
এদিকে ডিএমপি পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, সিটি নির্বাচনে তিনস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। এক্ষেত্রে ভোটকেন্দ্র, কেন্দ্রের বাইরে ও ভোটার এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে।
ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিন সিটিতে সর্বমোট ৭৮ হাজার ৭৩০ জন সদস্য আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত থাকবে।
তিন সিটিতে মোট ভোটার হচ্ছে ৬০ লাখ ২৯ হাজার ৫৭৬ জন। অর্থাৎ প্রতি ৭৬ জন ভোটারের জন্য একজন করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবে। যা হচ্ছে স্মরণকালের যে কোনো নির্বাচনের চেয়ে সবচেয়ে বেশি ফোর্স মোতায়েন।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেছেন, কাল (রোববার) থেকেই বিপুল সংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্য মাঠে মোতায়েন থাকবে। তারা আগামী ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া কমিশনের নিজস্ব পর্যবেক্ষকও নির্বাচনের অনিয়ম গোপনে পর্যবেক্ষণ করবে।
গোপন পর্যবেক্ষণ
ভোটকেন্দ্র ও ভোটার এলাকায় নিরাপত্তায় নিয়োজিতরা যদি কোনো দায়িত্ব অবহেলা করেন, তা খতিয়ে দেখতে মাঠে থাকবে ইসির গোপন পর্যবেক্ষক।
এক্ষেত্রে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরশেন (ডিএনসিসি) নির্বাচনের জন্য ১২ জন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে ১৯ জন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের জন্য ১৪ জন কর্মকর্তা গোপনে পরিস্থিতি ও কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করবেন।
বহিরাগত নিষিদ্ধ
এদিকে ২৬ এপ্রিলের আগেই সব বহিরাগতকে নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করতে বলেছে নির্বাচন কমিশন। অন্যদিকে মোটরযান চলাচলেও আসছে কঠোরতা। নির্বাচনে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যেতে না পারেন, সেজন্যই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
অনলাইনে ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ
এদিকে অনলাইনে স্কাইপির মাধ্যমেও ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ পর্যবেক্ষণে চিন্তা-ভাবনা করছে নির্বাচন কমিশন। ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, সিইসি ইতোমধ্যে স্কাইপির মাধ্যমে ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণের বিষয়ে মতামত দিয়েছেন। বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
২০১৩ সালে চার সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সীমিত আকারে স্কাইপির মাধ্যমে ভোটকেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছিল নির্বাচন কমিশন।
এ বিষয়ে ইসির সিস্টেম ম্যানেজার রফিকুল হক বাংলানিউজকে বলেছেন, আমরা প্রস্তুত রয়েছি। তবে সময় খুব কম। কোনো সিদ্ধান্ত নিলে এখনই নেওয়া দরকার।
আগামী মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) ঢাকার দুই সিটি ও চসিক নির্বাচনের ভোটগ্রহণ করবে ইসি।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৫
ইইউডি/আইএ