ঢাকা: ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং সিভিল হাসপাতালে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদের কাছে পৌঁছুতে ভিসার অপেক্ষায় আছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
তবে এরই মধ্যে শিলংয়ে পৌঁছে গেছেন সালাহ উদ্দিন আহমেদের সহকর্মী বিএনপির সহ দপ্তর সম্পাদক আব্দুল লতিফ জনি।
সালাহ উদ্দিনের পরিবার ও বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (১২ মে) সালাহ উদ্দিন আহমেদের খোঁজ পাওয়ার পর বুধবার (১৩ মে) ভারতীয় হাইকমিশনে ভিসার জন্য আবেদন করেন সালাহ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ভিসা পাননি তিনি।
সূত্রমতে, সালাহ উদ্দিন আহমেদের কাছে তার পরিবারের সদস্যরা যাতে দ্রুত পৌঁছাতে পারে, সে জন্য ভারতীয় হাই কমিশনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। ভিসা প্রসেসিংসহ অন্যান্য কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ভারতীয় হাইকমিশন যাতে সালাহ উদ্দিন আহমেদের পরিবারকে সহযোগিতা করে, সে বিষয় নিয়ে কাজ করছেন তিনি।
বুধবার ভিসার জন্য আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফা কথাও বলেছেন দলের কূটনৈতিক বিষয় নিয়ে কাজ করা বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।
কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত সালাহ উদ্দিন আহমেদের পরিবার ভারতীয় ভিসা পায়নি। পরিবারটি এখন ভিসার জন্য অপেক্ষা করছে। ভিসা পেলেই ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে তারা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার বিকেলে হাসিনা আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, এখনো ভিসা পাইনি। পেলেই আমরা রওনা দেবো। বুঝতেই পারছেন, পরিবার-পরিজনহীন অবস্থায় শিলংয়ের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন সালাহ উদ্দিন। ওনার কাছে দ্রুত পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ফরেনার্স অ্যাক্টে দায়ের করা মামলায় শিলং পুলিশ সালাহ উদ্দিন আহমেদকে গ্রেপ্তার দেখানোয় এখন চাইলেও পরিবারের সদস্যরা তার (সালাহ উদ্দিন) সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না।
সূত্র জানায়, বুধবার এয়ার ইন্ডিয়ার একটি ফ্লাইটে কলকাতা হয়ে শিলংয়ে পৌঁছানোর পর এখন পর্যন্ত সালাহ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি আব্দুল লতিফ জনি। শিলং সিভিল হাসপাতালের আশপাশে অবস্থান করলেও কড়া পুলিশি পাহারার কারণে সালাহ উদ্দিনের কাছে যেতে পারেননি তিনি।
অবশ্য মেঘালয় পুলিশের আইজিপি (অপারেশন) জিএইচপি রাজুর বক্তব্যে আশান্বিত হতে পারে সালাহ উদ্দিনের পরিবার।
বুধবার ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে রাজু বলেন, সালাহ উদ্দিন আহমেদ সাধারণ কোনো লোক নন। তিনি বাংলাদেশের সাবেক একজন প্রতিমন্ত্রী। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার মতো ব্যক্তি তিনি নন।
বিএনপির বিদেশনীতি নিয়ে কাজ করেন এমন এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৃহস্পতিবার বাংলানিউজকে বলেন, ভারতের ব্যবস্থাপনা তো আমাদের দেশের মতো নয়। পরিবারের একেবারে ঘনিষ্ঠ লোক ছাড়া অন্য কেউ সালাহ উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে পারবে বলে মনে হয় না। তবে সেখানকার পুলিশ প্রধানের বক্তব্যে আশান্বিত হতে পারে বিএনপি। কারণ, মেঘালয় পুলিশও বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারছে।
এদিকে বিএনপির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সারা দিনই ভিসার অপেক্ষায় কেটেছে সালাহ উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদের। এদিন বেশিরভাগ সময় বাসার বাইরে কেটেছে তার। তিনি চান দ্রুত স্বামীর কাছে পৌঁছুতে। কিন্তু ভিসা না পাওয়ায় তার পক্ষে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। চরম উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে কাটছে হাসিনা আহমেদের সময়।
ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ের গলফগ্রিন এলাকা থেকে সোমবার সকালে শিলং পুলিশ আটক করে সালাহ উদ্দিন আহমেদকে। ভ্রমণের কাগজপত্র না দেখাতে পারায় এ সময় পুলিশ তাকে স্থানীয় থানায় নিয়ে যায়। বিধ্বস্ত চেহারা ও অসংলগ্ন কথাবার্তায় সন্দেহ হলে পুলিশ প্রথমে তাকে মেঘালয় ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ (মিমহ্যানস) হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় শিলং সিভিল হাসপাতালে।
অনির্দিষ্টকালের অবরোধের মধ্যে ১০ মার্চ উত্তরার একটি বাসায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় নিখোঁজ হন সালাহ উদ্দিন আহমেদ। এর পর দুই মাস দুই দিন পর মঙ্গলবার (১২ মে) তার সন্ধান মেলে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৭ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৫
এজেড/জেডএম