ঢাকা: আন্দোলনে চরম ব্যর্থতা, হামলা-মামলা-গ্রেফতারের ভয়ে ঘর-বাড়ি ছেড়ে উদ্বাস্তুর মতো ঘুরে বেড়ানো, ব্যবসায়িক ক্ষয়ক্ষতি; তারওপর দলের কেন্দ্র থেকে কোনো খোঁজখবর না নেওয়ায় ক্ষোভ, অভিমান ও হতাশায় দিগভ্রান্ত হয়ে পড়েছে তৃণমূল বিএনপি। এই ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢালছে দলের সুবিধাভোগীদের তৎপরতা।
ক্ষোভ, অভিমান আর হতাশার এসব গল্প শোনা যায় ঢাকার সাভারের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মুখেই। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকেন্দ্রিক বিএনপির আন্দোলনে ভাটা আর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে পরাজয় ও তৎপরবর্তী রাজনৈতিক কার্যক্রম নিয়ে বাংলানিউজের কথা হয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু ও সাভার থানা বিএনপির সভাপতি মাহমুদুল হাসান আলালসহ বেশ কিছু নেতাকর্মীর সঙ্গে।
তারা অভিযোগ করেন, সরকারি দলের সঙ্গে কতিপয় নেতার আঁতাতের কারণেই বিএনপির এখনকার এই দুরবস্থা। অনেক কর্মী বিএনপিতে শুদ্ধি অভিযান চালানোরও পরামর্শ দেন। অনেকে আবার সঠিক করণীয় নির্ধারণ না করতে পারলে নেতাকর্মীদের কারাগারে পচে মূল্য দেওয়ার ব্যাপারেও সতর্কতা দেন।
‘নাশকতার’ ছয়টি মামলায় গ্রেফতার হয়ে সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়ে এলাকায় ফিরেছেন মাহমুদুল হাসান আলাল। তবে কারামুক্ত হলেও নিজেকে একরকম ঘরবন্দি করে রেখেছেন তিনি।
আলাল বলেন, ঘরে থাকলেও মামলা, পাড়া মহল্লায় সামান্য মিছিল-মিটিং করলেও মামলা। তাহলে আমরা যাবো কোথায়?
দলের শীর্ষ নেতৃত্বে বিচক্ষণতার অভাব, সাংগঠনিক দুর্বলতা, গুটিকয়েক নেতাকর্মীর আঁতাতের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, বিএনপিতে শুদ্ধি অভিযান জরুরি। নইলে নেতাকর্মীদের জেলে পচে আরও মূল্য দিতে হবে।
রাজনীতি আর এখন রাজনীতি নেই। সারাক্ষণ থাকতে হয় ভীতি আর উৎকণ্ঠার মধ্যে উল্লেখ করে সাভারে ত্যাগী স্বীকৃত এ নেতা বলেন, বলতে পারেন, আতঙ্ক এখন ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে, সব সময় গুমের আতঙ্কে থাকতে হয়। এই আতঙ্কে এখন বাসা থেকে বের হওয়াও ছেড়ে দিয়েছি। ধরা পড়লে আগে জেলখানা ছিলো নিরাপদ, এখন তা-ও নেই। সেখানেও হার্ট অ্যাটাকে মরার ভয়। তাহলে যাবোটা কোথায়?
সাভার বিএনপির এ সভাপতি বলেন, আন্দোলন নিয়ে হিসাব-নিকাশের সময় এসেছে। আন্দোলনে নামার আগে দলীয় সক্ষমতা যাচাই করা জরুরি। নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দলে অনেকে মামলায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়লেও অনেকেই আবার বেশ ভালো আছেন। ত্যাগীরা জেল খাটলেও পদ-পদবী নিয়ে অনেকে সরকারি নেতাদের সঙ্গে ওঠা-বসা, ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। এরা সুযোগ সন্ধানী। দল ক্ষমতায় এলে এরাই কিন্তু থাকেন সবার আগে।
শীর্ষ নেতৃত্বে অনেক পরিবর্তন আসবে আশাবাদ ব্যক্ত করে আলাল বলেন, পরিবর্তন আসতে হবে দলের অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনেই। বিএনপি জনগণের দল, নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে অতীতে দলটি জনগণের সেবা করেছে। এখন যে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে তা কাটিয়ে উঠতে সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচন জরুরি।
মামলার আসামি হয়ে আত্মগোপনে আছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু, সাভার উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও তেতুঁলঝোড়া ইউনিয়নের সভাপতি জামাল উদ্দিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিনসহ শীর্ষ নেতারা।
এদের কেউ ভারতে, কেউ থাইল্যান্ডে, কেউবা মালয়েশিয়ায় আত্মগোপনে আছেন। দেশে যারা আছেন তারাও বাড়িতে থাকছেন না। ব্যবহার করছেন না পুরনো মোবাইল নম্বরগুলোও। অবস্থান পরিবর্তনের পাশাপাশি ঘন ঘন পরিবর্তন করছেন মোবাইলের নম্বরও।
তাই বিভিন্ন নম্বরে ডায়াল করেও সরাসরি পাওয়া যায়নি ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবুকে। পরে নিকট আত্মীয়ের মাধ্যমে কথা হয় দুই বারের এ সাবেক সংসদ সদস্যের সঙ্গে। তিনি জানান, তার সামনে অর্ধশতাধিক মামলার হাজিরা ঝুলে আছে। নতুন করে প্রায় অর্ধশতাধিক মামলায় অন্তর্ভূক্তির ভয়েও আছেন তিনি।
বর্তমান সময়কে দুঃসময় অভিহিত করে বাবু বলেন, জনগণ জেগে ওঠার অপেক্ষায় রয়েছে। এভাবে বেশিদিন চলতে পারে না।
তবে গা ঢাকা দিলেও বেশকিছু নেতাকর্মী ফেসবুকে সক্রিয় রয়েছেন। অবশ্য, ফেসবুকে সক্রিয়দের বেশির ভাগই বিদেশে অবস্থান করছেন। যোগাযোগ রাখছেন এলাকার নেতাকর্মীদের সঙ্গে।
সূত্র বলছে, গাড়ি পোড়ানো, ভাঙচুরসহ পুড়িয়ে মানুষ হত্যার মামলা ঝুলছে সাভার বিএনপির পাঁচ সহস্রাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৫
এইচএ/