ঢাকা, সোমবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

মোদির সাক্ষাৎ পাওয়া সহজ হবে না খালেদার

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৫ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৫
মোদির সাক্ষাৎ পাওয়া সহজ হবে না খালেদার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

ঢাকা: ঢাকা সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ করা সহজ হবে না। একে তো বিদেশি কোনো সরকার বা রাষ্ট্র প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের রাষ্ট্রীয় প্রটোকল এখন খালেদা জিয়ার নেই, তারওপর এ সাক্ষাতের ব্যাপারে সরকারও ইতিবাচক নয়।



তাই বিষয়টি নির্ভর করছে ভারতের সিদ্ধান্তের উপর। তবে এ ব্যাপারে ভারত আগ্রহ নাও দেখাতে পারে। কারণ এর আগে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষ‍াতের কথা বলেও সাক্ষাৎ করেননি খালেদা জিয়া। এ বিষয়টিকে ভারত সহজভাবে নেয়নি। তাছাড়া গত জানুয়ারিতে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর মিথ্যা ফোনের বিষয়টিও রয়েছে।

আগামী ৬ জুন দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। এই সময় নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগে থেকেই তৎপরতা শুরু করেছেন বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র।
 
বিষয়টি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা ও মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে সরকারের মনোভাবের কথা জানতে চাইলে বাংলানিউজকে তারা বলেন, বিষয়টি ভারতের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে। মোদি সাক্ষাৎ দিতে চাইলে দিতে পারেন, সেটা তাদের বিষয়। তবে খালেদা জিয়ার অবস্থান ও পূর্বের ঘটনাগুলোর প্রেক্ষাপটে ইতিবাচক সিদ্ধান্তের সম্ভাবনা কম।

গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর কোনো কোনো দেশের রাষ্ট্রদূত এবং মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি ঢাকায় সফরে এলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার বিষয় নিয়েও সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বিরক্তি প্রকাশ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রীদের কেউ কেউ বলেছিলেন, বিদেশি কূটনীতিক যারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন এবং এক একটি মন্তব্য করেন তাদের মনে রাখা উচিত- তিনি এখন আর বিরোধী দলের নেতা নন, সংসদেও নেই।

এদিকে মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা ও মন্ত্রীর মতে, বিএনপি এখন আর বিরোধী দলে নেই। খালেদা জিয়া বিরোধী দলের নেতাও নন। এমনকি সংসদে দলের কোনো প্রতিনিধিত্বও নেই। বিদেশি কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা সরকার ও রাষ্ট্র প্রধান সরকারি সফরে এলে তার সঙ্গে খালেদা জিয়ার দেখা করা কোনো প্রটোকলের মধ্যে পড়ে না। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে খালেদা জিয়া সাক্ষাৎ করতে পারবেন কি না সেটা ভারতের উপর নির্ভর করবে।

এর আগে ২০১৩ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি যখন আসেন তখন তার সঙ্গে তৎকালীন বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়ার দেখা করার কর্মসূচি ছিলো। কিন্তু শেষ মুহূর্তে প্রণব মুখার্জির সঙ্গে খালেদা জিয়া দেখা করেননি। এটা করে খালেদা জিয়া তাকে চরম অসম্মান করেছেন। শুধু তাই নয়, প্রণব মুখার্জির সফরের সময় বিএনপি হরতাল দিয়েছিলো। প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রের প্রধান সফরে এলে তার প্রতি ন্যূনতম কোনো সৌজন্য দেখিয়ে হরতাল প্রত্যাহার করেনি।
 
সরকার সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, প্রবণ মুখার্জির সঙ্গে দেখা না করার ওই বিষয়টিকে ভালভাবে নেয়নি ভারত। প্রবণ মুখার্জি কংগ্রেস নেতা ও ওই দলটি মনোনীত রাষ্ট্রপতি হলেও সেখানকার সব রাজনৈতিক দল তাকে ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবেই দেখে। বিজেপিও এর ব্যতিক্রম নয়। তাছাড়া গত জানুয়ারিতে বিজেপি প্রধান অমিত শাহ খালেদা জিয়াকে ফোন করেছিলেন বলে বিএনপি প্রচার করে। পরে অমিত শাহ নিজেই মিডিয়াকে জানান, খালেদা জিয়াকে ফোন করেননি তিনি। এ বিষয়টি তার জন্য বিব্রতকর ছিলো।

এদিকে এ সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের সাক্ষাতের উদ্দেশ্য তো আসলে সৌজন্য দেখানো নয়। গত বছর বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি মনে করেছিলো এইবার আওয়ামী লীগকে সরকার থেকে নেমে যেতে হবে। এর পর জুনে নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ঢাকায় আসেন। সুষমার সফরের সময় তার সঙ্গে দেখা করেন খালেদা জিয়া। ওই সময় খালেদা জিয়া ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বিষয় সুষমা স্বরাজের কাছে তুলে ধরেন। সুষমা স্বরাজ অবশ্য সরাসরি জানিয়ে দেন, বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশের জনগণ।  

নরেন্দ্র মোদির সফরের সময় তার সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাতের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এটা ভারতের বিষয়, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ হবে কিনা সেটা ভারত ঠিক করবে। এ ব্যাপারে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। তবে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষাতের কথা বলে সাক্ষাৎ না করে তাকে চরম অসম্মান করেছেন খালেদা জিয়া। তখনও সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। সাক্ষাতের কথা বলে সাক্ষাত না করার চেয়ে অসম্মান তো আর কিছু হতে পারে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, এটা ভারতের বিষয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী চাইলে দেখা করতে পারেন। তবে এর আগে ভারতের রাষ্ট্রপতি যখন এসেছিলেন তার সঙ্গে খালেদা জিয়া দেখা করতে চেয়েও দেখা না করে তাকে অসম্মান করেছেন। অমিত শাহর মিথ্যা ফোনকলের খবর প্রচার করেছেন। এখন আবার সেই দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কিভাবে দেখা করতে চান!

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৭ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৫
এসকে/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।