ঢাকা: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে বলে আশা করছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
এ সফরে বহুল আলোচিত তিস্তা চুক্তিসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানের জটও খুলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পাশাপাশি ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে যে ধূম্রজাল তৈরির চেষ্টা হয়েছিল, তাও দূর হবে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা ও মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোদীর সফরে তিস্তা চুক্তির জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। এ ব্যাপারে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা ও যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
সরকারের নীতিনির্ধারকদের মতে, অনেক দিনের ঝুলে থাকা সীমান্ত সমস্যার সমাধান করেছে মোদী সরকার। এ সফরে তিস্তা সমস্যারও একটা সমাধান বেরিয়ে আসতে পারে। এর আগে কংগ্রেস সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সময় পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বাধার কারণে এই চুক্তি হয়েও হয়নি।
এ চুক্তির বিষয়ে মোদী সরকারও ইতিবাচক। মমতা ব্যানার্জিও আগের অবস্থান থেকে সরে এসে আশ্বস্ত করেছেন। ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় এসে তিনি তিস্তার ব্যাপারে ‘আস্থা’ রাখতে বলে গেছেন।
আওয়ামী লীগ ও সরকার সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, মোদীর এই সফরে তিস্তা চুক্তি না হলেও আগামীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময় এটি সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নরেন্দ্র মোদী দায়িত্ব নেওয়ার পরই শেখ হাসিনাকে দিল্লি সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছেন। মোদীর এই সফরের পর হাসিনাও দ্রুতই দিল্লি সফর করবেন।
আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, সীমান্ত সমস্যা সমাধানে ৪১ বছর আগের ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক যেভাবে এগিয়েছে, মোদীর সফরের তিস্তা চুক্তিসহ অন্যান্য যে সমস্যাগুলো রয়েছে, সেগুলোও দ্রুতই সমাধানের দিকে এগিয়ে যাবে।
নরেন্দ্র মোদীর সফরে তিস্তা চুক্তি সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, সীমান্ত সমস্যার সমাধান হয়েছে। তিস্তাতেও আমরা আশাবাদী। তাছাড়া মমতা ব্যানার্জি তো বলেছেন, তার প্রতি ‘আস্থা’ রাখতে। আমরা কেন আস্থা রাখবো না!
এদিকে, গত বছরের মে মাসে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর বিএনপির দিক থেকে বলা হয়েছিল, আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ভারতের নতুন সরকারের সম্পর্কের ঘাটতি তৈরি হবে। চলমান সম্পর্কের ধারাবাহিকতাও আটকে যাবে। আর ক্ষমতায় যাওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপি সেই সুযোগকে কাজে লাগাতে চেয়েছিল।
এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের উৎসাহও তৈরি হয়। তবে বিজেপি ক্ষমতায় আসার এক মাসের ব্যবধানে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফরের মধ্য দিয়েই বিএনপির সেই মোহ কেটে যায়। এরপর দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়ন অব্যাহত থাকে। এছাড়া মোদী সরকারের এগিয়ে চলা এবং চলতি মাসে সীমান্ত বিল পাসের মধ্য দিয়ে এ ধরনের গুঞ্জনের অবসান হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের মধ্য দিয়ে সম্পর্ক আরো উঁচু মাত্রায় পৌঁছাবে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন।
মোদীর সফরে দুই দেশের সম্পর্কে কী প্রভাব পড়তে পারে, জানতে চাওয়া হলেও মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশই তাদের প্রয়োজনে নিজস্ব স্বকীয়তা ঠিক রেখে সম্পর্ক উন্নয়নে আরো এগিয়ে যাবে। দুই প্রধানমন্ত্রী (হাসিনা-মোদী) যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন, এটা শুধু এ দুই দেশেরই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার জন্য যুগোপযোগী পদক্ষেপ।
তিনি বলেন, মোদী সরকার আসার পর বিএনপি তো কত কিছুই চিন্তা করেছিল! তবে আশার কথা হলো, অনেক দিনের ঝুলে থাকা সমস্যার সমাধান জট খুলছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী কর্নেল (অব.) ফারুক খান বাংলানিউজকে বলেন, ৪১ বছরের ঝুলে থাকা সীমান্ত সমস্যার সমাধান দুই সরকারের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কেরই নিদর্শন। শেখ হাসিনা সরকারের দক্ষ কূটনৈতিক তৎপরতা, সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে। মোদীর এই সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের বন্ধুত্ব আরো দৃঢ় হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বাংলানিউজকে বলেন, দুই দেশের মধ্যে যে সমস্যাগুলো ছিল তার বরফ গলতে শুরু করেছে। আমরা অত্যন্ত আশাবাদী যে, এই সফরের মধ্য সম্পর্ক নতুন মাত্রায় উন্নীত হবে। অন্যান্য সমস্যার সমাধানও ত্বরান্বিত হবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পেরেছে বলেই সেদেশের পার্লামেন্টে সীমান্ত বিল পাস হয়েছে। আমাদের দেশের সব রাজনৈতিক দল এখন সে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত হয়ে রয়েছে। এটা শেখ হাসিনা সরকারের বড় কৃতিত্ব। মোদীর সফরের মধ্য দিয়ে এই সম্পর্ক আরো এগিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৫
এসকে/এবি