ঢাকা, সোমবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

ডেমরা-যাত্রাবাড়ীতে আটকে ঢাকা মহানগর আ’লীগ

সালাহ উদ্দিন জসিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩২ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৫
ডেমরা-যাত্রাবাড়ীতে আটকে ঢাকা মহানগর আ’লীগ

ঢাকা: একযুগ হতে চলেছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির। দলের গঠনতন্ত্র মতে, তিন বছরের মাথায় নতুন কমিটি দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।



২০০৩ সালের জুনের পর ‍২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর সম্মেলন হয় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের। ওই সম্মেলনের তিন বছর পার হতে চললেও দেওয়া হয়নি কমিটি। খুব শিগগিরই কমিটি দেওয়ার আভাসও নেই। গত দুই বছরে (২০১৩ ও ২০১৪) নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও থানা সম্মেলন করা হয়েছে। সেসব সম্মেলন চলাকালে নগর সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছিলেন, সব থানা ও ওয়ার্ডের সম্মেলন শেষ হলেই কমিটি দেওয়া হবে। সম্মেলনও শেষ হয়নি, কমিটিও দেওয়া হচ্ছে না। থেমে আছে ডেমরা-যাত্রবাড়ী থানায় এসে।

সংশ্লিষ্ট থানা সাধারণ সম্পাদকের অভিযোগ, সব থানা ওয়ার্ডের সম্মেলন হয়েছে। কেবল ডেমরা-যাত্রবাড়ী থানা সম্মেলনের তারিখও ঘোষণা হয়নি। সম্মেলন দেওয়ার কোনো তাগাদাও যেন নেই মহানগর শাখার। আর এজন্য অবশ্য নগর আওয়ামী লীগ নেতারা দুষছেন সংশ্লিষ্ট থানার নেতাদের।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্যানগার্ড বলে বিবেচিত ঢাকা মাহনগর শাখা। বিএনপি-জামায়াতের দুই দফা (২০১৩ ও ২০১৪) আন্দোলনের সময় এই নগরেই টিকে আছে সরকার, এমন মন্তব্যও মাঠে শোনা গেছে। এজন্য বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগেরও কৃতিত্ব রয়েছে। অথচ কীর্তিমান এই শাখার সাংগঠনিক অবস্থা হ-য-ব-র-ল। নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। গত ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এর প্রভাবও ছিল চোখে পড়ার মতো। ওই সময় একই ইস্যুতে ঢাকা মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিজ নিজ অনুসারীদের নিয়ে পৃথক বর্ধিত সভা করতে দেখা গেছে। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপে নির্বাচনের সময় ওই সমস্যার সাময়িক নিরসন হলেও এখন আরও প্রকট হচ্ছে।

এ সমস্যার জন্য দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়াকে দুষছেন নেতারা। তারা বলছেন, নতুন কমিটি হলে এ দ্বন্দ্ব থাকবে না। নতুনরা দায়িত্ব নেবে, নব উদ্যমে এগিয়ে যাবে।

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে বাংলানিউজের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে সব রিপোর্ট (সাংগঠনিক ও গোয়েন্দা) উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি চাইলে যেকোনো মুহূর্তে কমিটি ঘোষণা করতে পারেন। নানা কারণে কমিটি ঘোষণায় বিলম্ব করেছেন তিনি। এখন আসন্ন শোকের মাস-আগস্ট এই কমিটি দিয়ে চালাতেন চান তিনি। সেপ্টেম্বরের দিকে কমিটির ঘোষণা আসতে পারে।  

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন প্রক্রিয়াধীন। যে কোনো মুহূর্তে কমিটি ঘোষণা হতে পারে।

কারা থাকছে ওই কমিটিতে?- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকেই আলোচনায় আছে। এটা সুনির্দিষ্টভাবে এখনই বলা যাবে না।

আশার বাণী শোনালেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। তিনি বাংলানিউজকে জানান, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দুই (উত্তর ও দক্ষিণ) কমিটি প্রস্তুত। শুধু সময়ের অপেক্ষা। আওয়ামী লীগ সভাপতি যে কোনো মুহূর্তে কমিটি ঘোষণা করতে পারেন।

কেমন হবে বা কারা থাকছে এই কমিটিতে?-এমন প্রশ্নের জবাবে আহমদ হোসেন বলেন, নবীণ-প্রবীণের সমন্বয়ে কমিটি হবে। অভিজ্ঞদের মূল্যায়ন করা হবে। একইসঙ্গে নবীনদেরও সুযোগ করে দেওয়া হবে।

‘মায়া-কামরুল’ (মোফাজ্জাল হোসেন চৌধুরী মায়া ও অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম) ওই কমিটিতে থাকছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরে ‘মায়া-কামরুল’ একেকজন একেকটি প্রতিষ্ঠান। তারা যথাযথ মর্যাদা পাবেন। তারা বিভক্ত সিটির কমিটিতে থাকতে চাইবেন কিনা এটাও বড় বিষয়। থাকতে চাইলে রাখা হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, আগস্ট বা তার আগে কমিটি দেওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। সিটি নির্বাচনের পর আমরা (আওয়ামী লীগ) ফুরফুরে মেজাজে। এখনই কমিটি দেওয়ার কোনো প্রয়োজন দেখা যাচ্ছে না।   সেপ্টেম্বরে কোরবানির ঈদের আগে-পরে কমিটি দেওয়া হলেও হতে পারে।

২০০৩ সালের জুন মাসে ঢাকা মহানগর কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মোহাম্মদ হানিফকে (প্রয়াত) সভাপতি এবং মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুসারে কমিটির মেয়াদ ৩ বছর। ২০০৬ সালে মোহাম্মদ হানিফ মারা গেলে কয়েক হাত ঘুরে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান এম এ আজিজ। এখন পর্যন্ত তিনিই ওই পদে অধিষ্ঠিত।

২০১২ সালে সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ১০৩টি ওয়ার্ড, ১৭টি ইউনিয়ন, ৪৯টি থানার মধ্যে ডেমরা ও যাত্রাবাড়ী থানা বাদে সব ক’টি ইউনিটের সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে, তাতেও কমিটি দেওয়া যায়নি। নেতারা জানিয়েছেন, নগরের কমিটি হলেই যথাক্রমে সব ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও থানাগুলোর কমিটি দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৩ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৫
এসইউজে/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।