ঢাকা: টানা তিন মাস ‘নাশকতা’ নির্ভর ‘ব্যর্থ’ আন্দোলন শেষে রাজনীতির মাঠে এখন নীরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে বিএনপি। আপাতত দৃশ্যমান কোনো কর্মকাণ্ডে দেখা যাচ্ছে না দলটিকে।
নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রুটিন প্রেসব্রিফিং আর গুলশান কার্যালয়ে সপ্তায় দু’একটি মত ও শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে আটকে আছে বিএনপি। সংগঠন গোছানোর ‘মৃদু’ আওয়াজ শোনা গেলেও সরকারবিরোধী আন্দোলন বা ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচির কথা ভুলেও মুখে আনছেন না দলটির নীতিনির্ধারকরা।
অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ও দফায়-দফায় হরতাল কর্মসূচি থেকে হঠাৎ ‘ব্যাকগিয়ার’ দিয়ে ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি।
ওই সময় দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাধারণ জনগণ ও নেতা-কর্মীর কাছে এই মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করেন, ‘আন্দোলনের অংশ হিসেবেই সিটি নির্বাচনের যাচ্ছেন তিনি। ভোট ‘কারচুপি’ বা ‘জালিয়াতি’ হলে ফের মাঠে নামবে বিএনপি।
কিন্তু ব্যাপক ‘কারচুপি’ ও ভোট ‘জালিয়াতির’ অভিযোগ তুলে মাঝ পথে এসে দল সমর্থিত তিন প্রার্থীকে ‘জোর’ করে নির্বাচনী লড়াই থেকে সরিয়ে নিলেও কর্মসূচি দেননি বিএনপি প্রধান।
সূত্রমতে, ভোটের দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকে ফোন দিয়ে জানতে চান, ‘ভোট বর্জন’ ঘোষণার পাশাপাশি কোনো কর্মসূচি দেওয়ার ইচ্ছা ম্যাডামের (খালেদা) আছে কি না? জবাবে শিমুল বিশ্বাস জানান, আপাতত কোনো কর্মসূচি দিতে চান না বিএনপি চেয়ারপারসন।
এদিকে সিটি নির্বাচনে ২৭ শ’ কেন্দ্রের মধ্যে অর্ধ শতাধিক কেন্দ্রে সংগঠিত গোলযোগ ও ‘কারচুপির’ ভিডিও ক্লিপ এবং পেপারকাটিং নিয়ে বিদেশি মিশনগুলোতে বিএনপির দৌড়-ঝাঁপের মধ্যেই ৩০ এপ্রিল রাতের অন্ধকারে কে বা কারা জিয়ার কবর ভাঙচুর করে।
জন্ম-মৃত্যু-প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী থেকে শুরু করে কারাবন্দি ও কারামুক্তি দিবস, নতুন কমিটি গঠন এমনকি ‘জাতীয়তাবাদ’র ব্যানারে ভূঁইফোঁড় সংগঠনের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষেও জিয়ার মাজার দর্শন বা ফুলেল শ্রদ্ধার্পণের নামে মিডিয়া কাভারেজে ব্যস্ত বিএনপি নেতারা টু-শব্দ পর্যন্ত করেননি।
জিয়ার মাজার ভাঙচুরের পর বেশ কয়েকবার মিডিয়ার সামনে কথা বললেও বিষয়টি এড়িয়ে যান খালেদা জিয়া। কোনো কর্মসূচি তো দূরের কথা, বিবৃতিও আসেনি তার পক্ষ থেকে।
সূত্র জানায়, জিয়ার মাজার নিয়ে হৈ চৈ না করলেও কারাবন্দি অবস্থায় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাছির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর মৃত্যুতে বিএনপি প্রতিক্রিয়া দেখাবে-এমনটিই ভেবে নিয়েছিলো দলটির মাঠ-পর্যায়ে নেতা-কর্মীরা।
কিন্তু ৩ মে রাজশাহী কারাগারে পিন্টুর মৃত্যুকে কারাকর্তৃপক্ষের ‘অবহেলা’ ও ‘পুলিশি নির্যাতনে’ মৃত্যু হিসেবে অভিযোগ তুললেও এ ব্যাপারে কোনো কর্মসূচি দেননি বিএনপি প্রধান। সে রকম কোনো প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেননি তিনি।
এদিকে সালাহ উদ্দিনের সন্ধান পাওয়ার দুই দিন আগে ‘সালাহ উদ্দিন আহমেদ র্যাবের কাছেই আছেন। তাকে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দিন, নইলে পরিণতি ভালো হবে না’ বলে সরকারকে শাসিয়ে দিলেও সন্ধান পাওয়ার পর এ ব্যাপারে একটি কথাও বলেননি বিএনপি চেয়ারপারসন।
সূত্র জানায়, ১২ মে সালাহ উদ্দিনের খোঁজ মেলার পর ওই দিন রাতে গুলশান কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকরা পিড়াপিড়ি করলেও সালাহ উদ্দিন সম্পর্কে কোনো কথা বলেননি খালেদা জিয়া।
শুধু খালেদা জিয়া নন, বিএনপির শীর্ষ নেতারাও সালাহ উদ্দিন আহমেদের খোঁজ পাওয়ার পর নীরব রয়েছেন। তবে নয়াপল্টন কার্যালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দলের মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন মাঝে- মধ্যে দুয়েকটি কথা বলছেন, তাও মেপে মেপে।
এ ছাড়া টানা আন্দোলনের সময় পেট্রোলবোমা মেরে বাস যাত্রীদের হত্যা মামলায় খালেদা জিয়াসহ দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রদান এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আটক নেতাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করলেও বিএনপির কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, দলীয় প্রধানের কিছু হঠকারী সিদ্ধান্ত, জামায়াতের ইন্ধনে ‘নাশকতা’ নির্ভর ব্যর্থ আন্দোলন, দলীয় নেতা-কর্মীদের নিষ্ক্রিয়তা, সর্বপরি সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে রাজনীতির মাঠে এখন নীরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে বিএনপি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন বাংলানিউজকে বলেন, মুখপাত্র হিসেবে দলের বক্তব্য প্রতিদিনই ব্রিফিং করে মিডিয়াকে জানিয়ে দিচ্ছি। এর বাইরে আলাদাভাবে মিডিয়াকে কিছু বলতে পারবো না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, দেশের বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় বা ইস্যুতেই প্রতিক্রিয়া দেখানো বা প্রয়োজনীয় কর্মসূচি ঘোষণা ও বাস্তবায়ন বিএনপির দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু আরেকটি বিষয়ও মাথায় রাখতে হবে, রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিরও নিজস্ব কিছু কৌশল ও হিসাব-নিকাশ আছে। সুতরাং আপাতত কোনো কর্মসূচি না থাকলেও নিজস্ব কৌশলে সামনের দিকে এগুচ্ছি আমরা।
বাংলাদেশ সময়: ০১৫৮ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৫
এজেড/জেডএম