ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

রাজনীতি

‘বয়স’ ধাঁধাঁয় ছাত্রলীগ, সমাধান নেই গঠনতন্ত্রেও

সালাহ উদ্দিন জসিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৮ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৫
‘বয়স’ ধাঁধাঁয় ছাত্রলীগ, সমাধান নেই গঠনতন্ত্রেও

ঢাকা: আগামী ২৫-২৬ জুলাই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের ২৮তম জাতীয় সম্মেলন।

এ সম্মেলনকে ঘিরে বয়সসহ নানান বিষয়ে দেখা দিয়েছে বিতর্ক।

বিশেষ করে, বয়স জটিলতায় পড়েছে ছাত্রলীগ।

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বয়স অনূর্ধ্ব ২৭। মৌখিকভাবে করা হয়েছে অনূর্ধ্ব ২৯। তবে এ বয়সসীমা কোন দিন পর্যন্ত? সম্মেলনের দিন, না তারিখ ঘোণার দিন তার সুনির্দষ্ট বিবরণ নেই গঠনতন্ত্রে।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে বয়স নির্ধারণে সাধারণত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন পর্যন্ত বয়স হিসাব করা হয়। কিন্তু ছাত্রলীগের ক্ষেত্রে এর উল্টো। এবারও কি তাই হবে? এমন প্রশ্ন ডজনখানেক কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতার।

এ বিষয়ে বাংলানিউজের অনুসন্ধানে ‘কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে এসেছে সাপ’। জানা গেছে বয়স ছাড়া গঠনতন্ত্রের কিছুই মানে না ছাত্রলীগ। আবার এ বয়স নিয়েও রয়েছে জটিলতা।

জানা গেছে, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৫-এর ‘ক’ উপধারায় অনুযায়ী,  ‘অনূর্ধ্ব ২৭ বছর বয়সী যেকোনো ছাত্র ছাত্রলীগের প্রাথমিক সদস্য হবেন’। কিন্তু এ নিয়ম মানছে না ছাত্রলীগ।

এরআগে ২০০৬ সালে সাবেক এক সভাপতি সিনিয়র পদপ্রার্থীদের বাদ দিয়ে ছাত্রলীগকে নিজের করায়ত্ব করতে বয়সের ‘নতুন’ ধারণা মাঠে নিয়ে এসেছেন। তিনি ছাত্রলীগের বয়স ২৭ বছরের পরিবর্তে মৌখিকভাবে করেছেন ‘অনূর্ধ্ব ২৯’। ছাত্রলীগের নেতৃত্ব ছাত্রদের হাতে থাকবে, এমন প্রত্যাশা থেকে সবাই এটা মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর থেকে ওই বয়সের ধাঁধাঁয় ফেলে একটি চক্র গৌরবান্বিত এ সংগঠনকে বিত্তবৈভব গড়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। তারা ছাত্রলীগকে লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

গত ৮ মে শুক্রবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করে ছাত্রলীগ। তখনই সংগঠনটির কয়েকে কেন্দ্রীয় নেতা অভিযোগ করেন, কিছু নেতাদের নেতৃত্ব থেকে বাদ দিতেই এটা করা হয়েছে।

তারা বাংলানিউজকে বলেন, ছাত্রলীগের ইতিহাসে এই প্রথম এত সময় হাতে রেখে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ১৫, ২১ দিন বা একমাস হাতে রেখে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার নজির আছে। কিন্তু তিনমাস হাতে রেখে সম্মেলনের তারিখ এবারই প্রথম।

ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র ১১ এর ‘খ’ উপধারা অনুয়ায়ী, ‘কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কার্যযকাল ২ বছর। এ সময়ের মধ্যে সম্মেলনের আয়োজন করতে হবে। অন্যথায় নির্বাহী সংসদের কার্যকারিতা লোপ পাবে। কিন্তু এ কথা কেতাবে আছে, গোয়ালে নাই’র মত অবস্থা। ২ বছরের পরিবর্তে ৪ থেকে ৫ বছর পরে কমিটি দিয়ে আসছে গত কয়েক কমিটি।

‘গ’ উপধারা অনুয়ায়ী, ‘বিশেষ বা জরুরি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কমিটির মেয়াদ বাড়লে জরুরি সভা করে কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভায় অনুমোদন সাপেক্ষে কমিটির কার্যকাল ৩ মাস বৃদ্ধি করা যাবে। উক্ত সভায় প্রতিটি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সদস্যবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। ’ এখন পর্যন্ত এ নিয়ম মানা হয়নি।

১১ এর ‘ক’ উপধারা অনুযায়ী, ‘কেন্দ্রীয় কমিটি ২৫১ সদস্যের হওয়ার কথা। কিন্তু এখন কত সদস্যের কমিটি দিয়ে চলছে ছাত্রলীগ তার হিসেব নেই নেতাদের কাছেও। কয়েক ধাপে কমিটি দিয়ে এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে পদসংখ্যা নেতাকর্মীরাও জানে না।

পরিচয় কেন্দ্রীয় নেতা, কিন্তু কেউ কাউকে চেনেন না! এমন ঘটনাও ঘটেছে সম্প্রতি ভোলা জেলা সম্মেলনের সফরে। ওই সফরে ৮৮ জনের একটি টিম নিয়ে যায় ছাত্রলীগ। লঞ্চে সাধারণ সম্পাদক একজনকে জিজ্ঞস করেছেন, তুমি কে? উত্তর তিনি জানান, আমি কেন্দ্রীয় নেতা।
 
১২ ধারা অনুযায়ী সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব, ‘সভাপতির সঙ্গে পরামর্শ করে মাসে অন্তত; একবার সম্পাদকমণ্ডলীর সভা আহ্বান করা। বিষয়সূচি নির্ধরণ করবেন  এবং আলোচ্য বিষয়ের উপর আলোকপাত করবেন। ’ এমন কোনো সাংগঠনিক বৈঠকের কোনো নথিও পাওয়া যায়নি। গঠনতন্ত্রে প্রতিমাসে একবার সাধারণ সভা করার কথা। এ পর্যন্ত (৪ বছরে) একটি মাত্র সাধারণ সভা হয়েছে।

এছাড়াও মাসে মাসে চাঁদা পরিষদ করার কথা, কেউ চাঁদা দেয় বলে অর্থ সম্পাদকের কাছে নথি নেই। ২৩ ধারা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সদস্য, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসহ নিম্স্তরের সকল কমিটি সদস্যদেরও চাঁদা দেওয়ার কথা। ৩ মাস চাঁদা বাকি থাকলে কমিটি ব্যবস্থা নিতে পারবে, কিন্তু কোনোটার প্রতিফলন নেই। ৫ এর খ উপধারা অনুযায়ী, ছাত্রলীগের সুনির্দিষ্ট ফরম পুরণ করে প্রাথমিক সদস্য হওয়ার কথা থাকলেও প্রতিফলন নেই। ‘আসলো আর গেলো’ নিয়মেই চলছে। যার কারণেই অনুপ্রবেশ ঘটে।

এসব বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ মন্তব্য করতে নারাজ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ছাত্রলীগ আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন। আমি তাদের বিষয়ে কি বলবো? তারা নিজেদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলার কথা। এর কোনো ব্যতয় ঘটলে আওয়ামী লীগ সভাপতি ব্যবস্থা নেবেন।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমানে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেছেন, বয়সে নিয়ে গবেষণা কমিটি লাগবে। তবে এ বিষয়ে কিছু ছাড় দেওয়া উচিত। ছাত্রলীগের নেতৃত্ব অভিজ্ঞ বা কিছুটা ম্যাচিউরড হওয়া উচিত। চূড়ান্ত বিবেচনার ক্ষমতা রাখে শেখ হাসিনা। তিনি বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলে ফলপ্রসূ হবে।

ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু এমপি বাংলানিউজকে বলেন, ছাত্রলীগের নেতৃত্ব যেমন ছাত্রদের হাতে থাকা উচিত, তেমনি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২ বছর পরপর সম্মেলনও হওয়া চাই। যেহেতু যথাসময়ে সম্মেলন হয় না, সেজন্য রাজপথে পরিশ্রমী, যোগ্য, দক্ষ ও অভিজ্ঞদের ক্ষেত্রে বয়সের বিষয়ে ছাড় দেওয়া উচিত।

এদিকে, ছাত্রলীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই বিভিন্ন মহল সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আগে থেকেই একটা বড় ‘সিন্ডিকেট’ তাদের প্রার্থী ঠিক করা ও পাশ করাতে কাজ শুরু করেছেন।

ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নেতা, মহানগরের একজন সাধারণ সম্পাদকসহ কোরাম নিয়ে তারা বসেছেনও। এছাড়াও ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের কাছেও  দৌড়ঝাঁপ শুর করেছেন পদ প্রত্যাশীরা। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত শীর্ষ দুই নেতার বাড়ির সামনে শুধুমাত্র নিজের চেহারা দেখানোর জন্য শতাধিক ছাত্রনেতা ভিড় করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৬ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৫
এসইউজে/এস‌আর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।