ঢাকা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হলে, স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হলে দেশে ফ্যাসিবাদ ও জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটতে পারে।
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২৮ মে) বিকেলে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিউটশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
মওদুদ আহমদ বলেন, জিয়াউর রহমানকে নিয়ে যে যতো কথাই বলুক, জিয়া কাউকে জোর করে ক্ষমতা থেকে নামাননি। তিনি সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থানে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তার প্রমাণ তিনি মার্শাল ল’ জারি করেননি।
জিয়াকে রাজনীতির ‘কিং’ আখ্যা দিয়ে মওদুদ আহমদ বলেন, দেশে এখন গণতন্ত্রও নেই, রাজনীতিও নেই। রাজনীতির এমন অবস্থায় বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক জিয়ার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হলে, স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হলে দেশে ফ্যাসিবাদ ও জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটতে পারে।
সেই বিপদ এড়াতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে জিয়ার আদর্শ ধারণ করে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে কাজ করার আহ্বান জানান মওদুদ আহমদ।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের সভাপতিত্বে সভায় দর্শক সারিতে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
এতে বক্তৃতা করেন বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. মোস্তাহিদুর রহমান প্রমুখ।
সভার প্রধান অতিথি সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, জাতীয়তাবাদী শক্তিকে পুনরায় সংগঠিত হতে হবে। এ জন্য জিয়াউর রহমানের আদর্শ ধারণ করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি বলেন, আমি যেখানেই থাকি, জিয়াউর রহমানের আদর্শ বিশ্বাস করি, তার আদর্শ লালন করি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জিয়ার আদর্শের শক্তিকে এক হতে হবে।
জিয়াউর রহমানকে কেবল জন্মবার্ষিকী ও মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মরণের সমালোচনা করে বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, জিয়াকে বছরে দু’দিন স্মরণ করা জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসীদের আত্মহত্যার শামিল। জিয়া যে আদর্শের ওপর দল প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন, নেতাকর্মীরা আজ সেসব ভুলে গেছেন। জিয়াকে দু’দিন স্মরণ করলে তার আদর্শগুলোও ভুলে যাবে জাতীয়তাবাদীরা। তাই জিয়ার আদর্শ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। কৃষক, শ্রমিক, নারী, শিশু সর্বস্তরে জিয়ার যে পদচারণা ছিল সেসব বিষয়াদি প্রচার করে তার আদর্শ ও স্বপ্ন জনতার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। তবেই কেবল জিয়ার উন্নয়নমুখী বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণ হবে।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন এ মহাসচিব বলেন, আমরা জিয়ার আদর্শ ভুলে যেতে শুরু করেছি বিধায় জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসীরাও শক্তি ক্ষয় করে ফেলছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের সংশোধন হওয়া উচিত। স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে খালকাটা কর্মসূচি, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিসহ জিয়াউর রহমান উন্নয়নমুখী যেসব পদক্ষেপ নিয়ে মানুষের হৃদয়ে ঢুকে গেছেন সেসব স্মরণ করিয়ে দিতে হবে সবাইকে।
বিএনপির বর্তমান অবস্থার জন্য নেতাকর্মীদের পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাসকে দায়ী করে বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, আমাদের পরস্পরকে ট্রাস্ট করতে হবে। সন্দেহের চোখে দেখলে হবে না। আমাদের কারও মধ্যে বিশ্বাস নেই, বিশ্বাস করতে হবে। বিশ্বাস অর্জন করতে পারলেই জাতীয়তাবাদীদের শক্তি বাড়বে। জিয়ার ওপর মানুষের বিশ্বাস ছিল, জিয়ারও ক্ষমতা ছিল মানুষের বিশ্বাস অর্জনের।
তিনি বলেন, জিয়া সবসময়ই মেধাবী লোকদের খুঁজতেন। কারণ, তিনি মনে করতেন, মেধাবীরাই দেশকে এগিয়ে নেবে। এ কারণে তিনি কখনোই গুণ্ডা-চাঁদাবাজকে তার কাছে ভিড়তে দেননি।
দেশ গড়ার লক্ষ্য ও আদর্শ সামনে নিয়ে জিয়া যে মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন তা উপমহাদেশে আর কখনো হয়নি বলেও উল্লেখ করেন বি. চৌধুরী।
তিনি এ সময় দুঃখ করে বলেন, আমি যদি ভুল করে থাকি, আল্লাহ আমার বিচার করবেন। আর যদি কেউ আমার প্রতি বা জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতি অবিচার করে থাকে, তবে আল্লাহ তাদেরও ক্ষমা করবেন না। আমাকে যতই ভুল বুঝুক, আমি জাতীয়তাবাদী শক্তিতেই বিশ্বাসী।
বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, জিয়াউর রহমান সৎ ছিলেন। দেশের উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণের কথা ভাবতেন। তিনি দুর্নীতি করতেন না, দুর্নীতিবাজদেরও পছন্দ করতে না। তিনি বাকশালের সমালোচনা করলেও কখনো শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ধরে কোনো কটাক্ষ করতেন না।
আজকের নতুন প্রজন্ম সেই আদর্শবাদী জিয়াউর রহমানকে ভুলতে শুরু করেছে উল্লেখ করে বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব বলেন, এর দায় বিএনপিরই। তারা মানুষের সামনে জিয়াউর রহমানকে তুলে ধরতে পারছে না। জিয়ার আদর্শ যতই ভুলবে, জাতীয়তাবাদী শক্তির ততই পতন ঘটবে। সেজন্যই আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি স্মরণ করে বলেন, জিয়াউর রহমান যেমন দেশের বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা, তেমনি দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্কের রূপকারও। তিনি মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করেছিলেন, শ্রদ্ধাশীল ছিলেন যার যার ধর্ম পালনেও।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৫
এমএম/এইচএ/