ঢাকা: আগামী ৬ জুন বাংলাদেশে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মোদির এ সফরকে ঘিরে বাংলাদেশ-ভারত রাজনীতিতে বিএনপির অবস্থান, মোদির সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বৈঠক হবে, নাকি হবে না এ নিয়ে আলোচনা চলছে সবখানে।
কিন্তু হঠাৎ করেই বিএনপির নেতাদের মুখে ভারত-প্রীতির রব শোনা যাচ্ছে। বলা যায় অনেকটা ভোল পাল্টিয়ে ফেলেছে দলটি। মোদী আসলে তাকে স্বাগত জানাবে সে ঘোষণা আরও আগেই এসেছে। কিন্তু এবার প্রকাশ্যে দাবি করতে শুরু করেছে, বিএনপি কখনো ভারত বিরোধী রাজনীতি করে না।
সমালোচনার ঝড় উঠেছে সেই বক্তব্যেই। উঠে আসতে শুরু করেছে, জামায়াতের সঙ্গে জোট পাকানো দলটি কবে কখন কোথায় ভারত বিরোধী বক্তব্য দিয়েছে।
সপ্রমাণ হাজির করা হচ্ছে বিভিন্ন সময় ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে কটাক্ষ করে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা সেসব বক্তৃতা করেছেন তা।
২০১৪ সালের মার্চ মাসে ভারতের দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে সমর্থন করায় ভারতের সমালোচনা করে বলেছিলেন, একতরফা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারকে সমর্থন করে ভারত বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে গেছে।
২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে টিপাইমুখ বাঁধ এবং তিস্তা নদীর পানি বন্টন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, “এই সরকার ভারত বান্ধব হিসেবে পরিচিত৻ একতরফা বিভিন্ন সুবিধে তারা ভারতকে দিয়ে যাচ্ছে৻ আমরা ভেবেছিলাম এতে করেও যদি আমরা তিস্তার ন্যায্য হিস্যা পাই৻
প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয়েছিল৻ কিন্তু কিছুই হলনা৻ দেশের যেটুকু আছে, তলে তলে ভারতের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে।
২০১১ সালের নভেম্বরে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া কুষ্টিয়ায় এক জনসভায় বলেছিলেন, “এ সরকার ভারতীয়দের সরকার। তাদের কথামতো দেশ পরিচালনা করছে। সীমান্তে প্রতিনিয়ত মানুষ হত্যা করে। বিএসএফ এ দেশের জায়গা-জমি দখল করে কিন্তু এ সরকার প্রতিবাদ করে না। ”
২০১০ সালে খালেদা জিয়া পল্টনের এক সমাবেশে বলেছিলেন, “বাংলাদেশের বুকের ভেতর দিয়ে ট্রানজিটের কোন গাড়ি চলতে দেয়া হবে না, হবে না। বাংলাদেশকে পুরোপুরি ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিণত করেছে এই সরকার। প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়ে দেশ বন্ধক দিয়ে এসেছেন। ”
২০১৩ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশে সফররত ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে বৈঠক বাতিল করেন খালেদা জিয়া। বৈঠকটিকে ‘আনলাকি’ উল্লেখ করে তাদের নিজেদের ডাকা হরতাল অবরোধে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বৈঠকটি বাতিল করেন। এ ঘটনা ভারত সরকারকে হতাশ করে। বিভিন্ন মহল থেকে অশোভন বলেও আখ্যা দেয়া হয়।
২০১৩ সালের ২৩ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপির অন্যতম শীর্ষ নেতা মির্জা আব্বাস অভিযোগ করেন, ভারতের ‘মদদে’ আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে।
এ সময় তিনি আওয়ামী লীগ সরকারকে উল্লেখ করে বলেন, “এই সরকারের ওপর আজ ভারতীয় সিন্দাবাদের ঘোড়া চেপে বসেছে। ”
২০১৪ সালের ২০ জুলাই জাতীয় প্রেসক্লাবে লিবার্টি বাংলাদেশ আয়োজিত 'বাংলাদেশ সমুদ্রসীমা : মিয়ানমার থেকে ভারত প্রচারণা এবং বাস্তবতা' শীর্ষক আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘দেশে ভারতের দালালের সংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে, দেশে এখন ভারতের হাইকমিশন না থাকলেও চলবে। ’
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ঢাকায় আসার আগে ১১ আগস্ট জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় পা রাখার আগেই ভারত সফরে যে চুক্তিগুলো করে এসেছিলেন সেগুলো প্রকাশ করুন। ড. মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় যেগুলো করবেন সেগুলোও জনগণকে আগাম জানান। অন্যথায় মনমোহন সিং যেদিন ঢাকায় আসবেন ওইদিন থেকে যে ক’দিন থাকবেন সেই ক’দিন হরতাল দেওয়া হবে। ’
বাংলাদেশ সময় ১৭৩২ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৫
এমইউএম/এমএমকে