জয়পুরহাট: জয়পুরহাটে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন থেকে দল ছুট হয়ে আওয়ামী লীগে যোগদানের হিড়িক পড়েছে। বিগত পাঁচ মাসে জেলার পাঁচ উপজেলায় বিভিন্ন নেতার হাতে ফুল দিয়ে অন্তত চার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থক আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন।
সর্বশেষ শনিবার (৬ জুন) জয়পুরহাটের পাঁচবিবি পৌর পার্কে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের সহযোগী সংগঠনের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী-সমর্থক আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন।
এসব যোগদানের ঘটনায় জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নানা সমালোচনা করে পোস্ট দিচ্ছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাদের ধারণা বিভিন্ন বিপদ থেকে রক্ষার কৌশল হিসেবে তারা আওয়ামী লীগে যোগদান করছেন।
২৯ মে আক্কেলপুর পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নিরেন দাস (Niren Dash) তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন- মুজিব সৈনিকদের সমস্যা...
কিছু বিএনপি থেকে আশা নবআওয়ামী যাদের বিএনপির দলে কোন প্রকার ধর্তব্যই ছিল না তারা দুই দিন হচ্ছে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে তারাই আবার আমাদের দলের নেতা তাদের এমন ভাব যে আমরাই বিএনপি থেকে এসেছি আর তারাই আওয়ামীলীগের নিবদিত প্রাণ এমনকি তারা এমন অত্যাচার শুরু করছে তা বললে সকল মুজিব সৈনিকের মাথা খারাপ হয়ে যাবে ঐসব নবআওয়ামীরা এখন সব জায়গায় আছে যেমন বড় নেতাদের সাথে থানায় বিচার করে সরকারি দলের সকল অর্থনৈতিক সুবিধা তারাই পাচ্ছে যারা সারা জীবন আমাদের নেতা বঙ্গবন্ধুকে গালি দিলো যাদের মন থেকে এখনো জিয়ার আদর্শ মুছে যায়নি তারাই আবার আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনার ছবির সাথে তাদের নিজের ছবি দিয়ে বিলবোর্ড ফেস্টুন ব্যানার দিচ্ছে তারা এমন কিছু করছে তাতে আমাদের মুজিব সৈনিকদের দূরে যেতে হচ্ছে এই সব খালেদার গুপ্ত চরদের দেখে মুজিব সৈনিকদের এমন মনে হচ্ছে..যেন আধাড় ঘরে সাপ ঢুকেছে ..আর আমি তো মনে করি তারা বিষক্ত সাপের চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর আপনারা কি মনে করছেন
২৮ মে তিনি লেখেন-শুনলাম আমাদের আক্কেলপুরে আগের যোগদানে কিছু বাদ পড়া সুবিধাবাদী বিএনপিরা নিজেকে বাঁচানোর জন্য আবারো আওয়ামী লীগের মতো দলে পাঁচ জুন যোগদান করবে.......। এতে আমাদের আওয়ামী লীগের ভালো হবে না খারাপ হবে.. আপনাদের মতামত আশা করছি ॥
এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলা যুবলীগের সভাপতি নাফিজ চৌধুরী উজ্জ্বল (Nafiz Uzzal) মন্তব্য করেছেন, আজ যারা আসছে কাল তারা আমাদের নিজেদের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করে আমাদের ক্ষতি ছাড়া উপকার করবে না। তারা আসছে সুবিধা নিতে। কাল এরা আমাদের থাকবে না। এরা যাদের ছিল তাদেরই হয়ে যাবে। কিন্তু এই বুঝটা কে দিবে? তাই আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর পুরাতন আদর্শধারী কর্মীরা একত্রিত থাকলেই ওরা আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।
রাজ পাহাড় নামে অন্য একজন লিখেছেন: দুষ্টু গুরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো। যারা বিপদে পড়লে নীতি আর্দশ চেঞ্জ করে তাদের দিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো ক্ষতি ছাড়া উপকার হতে পারে না। আর একটা কথা, এরা অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে প্রকৃত আওয়ামী লীগ থেকে বেশি সুযোগ সুবিধা ভোগ করে বা এরাই দলের নেতাদের কাছে প্রাধান্য বেশি পায়।
আল আমিন (Al Amin) নামে এক ছাত্রলীগ নেতা লিখেছেন: যোগদান করবে ভালো কথা, মন থেকে লীগ না করে সুবিধা পাওয়ার আশায় করলে সাইজ করার জন্য ‘ছাত্রলীগ’ আছে।
এদিকে বিএনপি ছেড়ে হঠাৎ করে আওয়ামী লীগে যোগদানের বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নেতাকর্মী জানান, জেলায় ঘটে যাওয়া বিভিন্ন নাশকতার মামলা থেকে রক্ষা পেতেই মূলত তারা আওয়ামী লীগে যোগদান করছেন।
বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগে যোগদান বিষয়ে জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সামছুল আলম দুদু এমপি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতেই তারা আওয়ামী লীগে যোগদান করছেন। এ ক্ষেত্রে দলীয় সিদ্ধান্তে তাদের দলে নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী এই জেলাটি বিএনপি-জামায়াতের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত। জেলার বিভিন্ন আসনে বারবার বিএনপি থেকেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। এছাড়া দুই/একটি ছাড়া বেশিরভাগ উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়েছে বিএনপি-জামায়াত থেকে।
তাই দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ করেই বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের আওয়ামী লীগে যোগদানের বিষয়টি খুব ভালোভাবে নিতে পারছেন না আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৩ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১৫
এসআই